শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবের ৭ লক্ষণ জানেন তো? হাড়ের ক্ষতির ইঙ্গিত

Published : Jun 16, 2025, 05:37 PM ISTUpdated : Jun 16, 2025, 05:38 PM IST
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবের ৭ লক্ষণ জানেন তো? হাড়ের ক্ষতির ইঙ্গিত

সংক্ষিপ্ত

শক্ত হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বুঝতে ৭টি লক্ষণ জানুন। এগুলোকে অবহেলা করবেন না।

আমাদের শরীরের সুষ্ঠু কার্যকারিতার জন্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। শুধু হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, পেশীর কার্যকারিতা, স্নায়ুতন্ত্রের সংকেত এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যালসিয়ামের অভাব (হাইপোক্যালসেমিয়া) বুঝতে পারেন না। এই অভাবকে অবহেলা করলে তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণ:

প্রধান কারণ হলো খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খাওয়া। ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি অপরিহার্য। ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে, যতই ক্যালসিয়াম খাওয়া হোক না কেন, তা সঠিকভাবে শোষিত হবে না।

কিডনির রোগ, Crohn's disease-এর মতো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, প্যারাথাইরয়েড হরমোনের অভাব (হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিজম) ইত্যাদি ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমাতে পারে।

কিছু মানুষের জিনগতভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ বা ব্যবহারের ক্ষমতা কম থাকতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়।

ক্যালসিয়ামের অভাবের প্রধান লক্ষণ:

হাড় দুর্বল হয়ে পড়া:

ক্যালসিয়াম হাড় গঠনের মূল উপাদান। শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙে যেতে পারে। এটি অস্টিওপোরোসিস নামক হাড়ের ক্ষয় রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়া এর একটি প্রধান লক্ষণ। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে তাদের হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।

মাংসপেশীর টান এবং ব্যথা:

ক্যালসিয়াম পেশীর সংকোচন এবং প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয়। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে পেশী अनियন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হয়, যার ফলে মাংসপেশীর টান (cramps) এবং ব্যথা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় পা, হাত এবং পিঠে এই ব্যথা বেশি হয়। কখনও কখনও মুখের পেশীতে ব্যথা বা অসাড়তাও হতে পারে।

ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব:

ক্যালসিয়াম শরীরের সামগ্রিক শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে ক্রমাগত ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব অনুভূত হতে পারে। সামান্য কাজ করলেও অতিরিক্ত ক্লান্তি, অলসতা এবং অনিদ্রা এর লক্ষণ। এটি মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।

দাঁত দুর্বল হয়ে পড়া:

দাঁতের এনামেল ক্যালসিয়াম দিয়ে তৈরি। ক্যালসিয়ামের অভাব দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে, যার ফলে দাঁত সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং গর্ত (cavities) তৈরি হয়। মাড়িতে ফোলা, রক্তপাত, দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

নখ ভেঙে যাওয়া এবং চুল পড়া:

নখ এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে নখ সহজেই ভেঙে যায়, পাতলা হয়ে যায়। চুল শুষ্ক, পাতলা হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে ঝরে পড়তে শুরু করে। এটি পুষ্টির অভাবের একটি সাধারণ লক্ষণ।

মানসিক সমস্যা:

ক্যালসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে মেজাজ পরিবর্তন, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, বিরক্তি এবং হতাশার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও স্মৃতিভ্রংশ এবং বিভ্রান্তিও হতে পারে।

ত্বকের সমস্যা:

ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুলকানি, একজিমা ইত্যাদি ত্বকের সমস্যাও ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে হতে পারে। কিছু মানুষের ত্বক ফ্যাকাশে এবং নিষ্প্রভ দেখায়।

ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করার উপায়:

আপনার প্রতিদিনের খাবারে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দুধ, দই, পনির, ছানা, শাকসবজি, ব্রোকলি, ফুলকপি, স্যামন, ইলিশ মাছ, ছোলা, রাজমা, মুসুর ডাল, মটর ডাল ইত্যাদি খাবার বেছে নেওয়া ভালো।

ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণগুলি দেখা দিলে, স্ব-চিকিৎসা না করে, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ডাক্তার আপনার রক্ত পরীক্ষা করে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নির্ণয় করবেন এবং সে অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। সময়মতো সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত গুরুতর সমস্যাগুলি এড়ানো সম্ভব।

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Look Back 2025: স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভারতীয়রা ২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নগুলি সার্চ করেছে
ডিনারে অবশ্যই কম ক্যালোরিযুক্ত খাবারই খাওয়া উচিত?