
খাবারের অপচয় কমানোর টিপস: আমাদের রান্নাঘরে প্রতিদিন কতবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন খাবার অবশিষ্ট থাকে, ফ্রিজে রাখা সবজি নষ্ট হয়ে যায়, অথবা থালায় অবশিষ্ট খাবার সরাসরি আবর্জনায় চলে যায়। এই ছোট ছোট ঘটনাগুলি দেখতে স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু যখন কোটি কোটি বাড়িতে এটি ঘটে, তখন ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক হতে পারে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে একটি বড় অংশ এখনও ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে, সেখানে অন্যদিকে টন টন খাবার প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে – এটি কেবল নৈতিকভাবে ভুল নয়, পরিবেশ, অর্থনৈতিক সম্পদ এবং কৃষি পরিশ্রমেরও অপমান। খাবার নষ্ট হলে কেবল খাবারই নষ্ট হয় না, তার সাথে নষ্ট হয় জল, শক্তি, জমি এবং সেই পরিশ্রম যা এটি উৎপাদনে লেগেছিল।
এমতাবস্থায় আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হল আমরা আমাদের বাড়ি থেকেই এর সূচনা করি। যদি আমরা সবাই একটু পরিকল্পনা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করি, তাহলে খাবারের অপচয় বন্ধ হবে। আসুন জেনে নেই ৭ টি সহজ এবং কার্যকরী ঘরোয়া উপায়, যার মাধ্যমে আমরা খাবারের মূল্যবোধ শিখতে পারি, এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে পারি।
১. সপ্তাহের খাবারের পরিকল্পনা করুন (Weekly Meal Plan)
পুরো সপ্তাহে কী রান্না করবেন, কতজনের জন্য রান্না করবেন, তার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা করুন। – এতে অতিরিক্ত সবজি বা উপকরণ আসবে না এবং যা বাড়িতে আছে, তা-ই আগে ব্যবহার হবে।
২. অবশিষ্ট খাবার নতুন রূপ দিয়ে আবার পরিবেশন করুন (Waste Food Saving Tips)
যেমন অবশিষ্ট ভাত দিয়ে ইডলি, উপমা বা ফ্রাইড রাইস তৈরি করা যেতে পারে। ডাল দিয়ে পরোটা বা ডাল চিলা, সবজি দিয়ে কাটলেট বা মিক্সড ভেজিটেবল তৈরি করুন। দোকানে যাওয়ার আগে ফ্রিজ এবং প্যান্ট্রি পরীক্ষা করে নিন। যে জিনিসগুলি বাড়িতে নেই, কেবল সেগুলিই কিনুন।
৩. প্রথমে আগত, প্রথমে ব্যবহার নীতি অনুসরণ করুন (FIFO)
যে জিনিসটি আগে এসেছে (পুরানো), তা আগে ব্যবহার করুন। নতুন জিনিসগুলি পিছনে রাখুন যাতে সেগুলি পরে ব্যবহার করা যায়। থালায় যতটা খাবার পরিবেশন করুন যতটা আপনি খেতে পারবেন। যদি ক্ষুধা বেশি হয় তাহলে আবার নিতে পারেন কিন্তু অবশিষ্ট খাবার ফেলবেন না।
৪. মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের দিকে নজর রাখুন
‘Use By’ এবং ‘Best Before’ তারিখগুলি অবশ্যই দেখুন। পুরানো প্যাকেট বা আচার/জ্যাম আগে শেষ করুন। ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, পাত্রগুলি বায়ুরোধী হোক। পাতাযুক্ত সবজি কাগজে মুড়িয়ে রাখুন, টমেটো-আলু আলাদা রাখুন।
৫. সাজসজ্জা এবং খোসাও কাজে লাগান
সপ্তাহে ১ দিন ফ্রিজের অবশিষ্ট খাবার শেষ করার নিয়ম করুন। এতে ফ্রিজ পরিষ্কারও হবে এবং খাবার নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সবজির খোসা, ধনেপাতার ডাঁটা, টমেটোর উপরের অংশ এগুলো ফেলার পরিবর্তে স্টক, চাটনি বা সবজির বেস তৈরিতে ব্যবহার করুন।
৬. কম তেল এবং মশলায় রান্না করুন
বেশি ঝাল বা তৈলাক্ত খাবার তাড়াতাড়ি খাওয়া হয় না এবং বাসি হলে ফেলতে হয়। – হালকা খাবার দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী থাকে। বেশি খাবার তৈরি হয়ে গেলে কাছাকাছি বস্তি, মন্দির, গুরুদুয়ারা, NGO বা অভাবীদের বিতরণ করুন। এমন অ্যাপও আছে যা খাবার সংগ্রহ করে দান করে।
৭. কম্পোস্টিং শুরু করুন
ফলের খোসা, কফি/চায়ের পাতা, সবজির অবশিষ্ট টুকরো… এগুলি দিয়ে জৈব সার তৈরি করা যেতে পারে। আপনি বারান্দায়ও ছোট কম্পোস্ট বিন রাখতে পারেন। আপনার বাচ্চাদের খাবারের পিছনের পরিশ্রম, চাষ, জল এবং সময় সম্পর্কে জানান। তাদের থালা পরিষ্কার করার অভ্যাস করান। যদি আপনি সত্যিই পরিবর্তন চান, তাহলে প্রতি সপ্তাহে কতটা খাবার নষ্ট হয়েছে তার নোট করুন। এতে আপনার ভুলগুলি বুঝতে পারবেন এবং সংশোধন করতে সুবিধা হবে।