
শীত হোক বা গ্রীষ্ম, পরিপাটি থাকতে অনেকেই নিয়মিত যান পার্লারে। ম্যানকিওর পেডিকিওর ও করান। হাত বিশেষ করে পায়ের পাতার যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখা, ইন-গ্রোন নখ, কিউটিকল কাটা, মৃত ত্বক অপসারণ -এ সবই আসলে দরকারি। কিন্তু জানেন কি, এই পরিচর্যার মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে সংক্রমণের ঝুঁকি?
২০২০ সালে ফ্লোরিডার এক পার্লারে পেডিকিয়োর করাতে গিয়ে ছত্রাক সংক্রমণ হয় এক মহিলার। এতটাই বাড়াবাড়ি হয়ে যায় যে পা'ই বাদ দিতে হয় ওই মহিলার। পার্লারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিলে, ২০২১-এ কেস হেরে যাওয়ার পর সেই পার্লারকে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল ওই মহিলাকে। কিন্তু পা কি ফিরে এসেছে তার? সুতরাং আপনাকেও সতর্ক হতে হবে। সৌন্দর্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো সুস্থতা।
কীসের আশঙ্কা?
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পার্লারে যান। তাঁদের অনেকেরই ত্বকে থাকতে পারে র্যাশ, ছত্রাক সংক্রমণ বা ভাইরাল স্কিন ডিজিজ। যদি পেডিকিয়োরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জলের টাব বা তোয়ালে ভালভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত না করা হয়, তবে তা সহজেই একজনের ত্বকের সমস্যা অন্য জনের শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। কেবল পায়ে বা নখে ছত্রাকের সংক্রমণের ভয় নয়, রক্তবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও কম নয়। কিউটিকল কাটার যন্ত্রগুলি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা না হলে হেপাটাইটিস সি-এর মতো রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। আসুন দেখে নি কী কী দেখে সতর্ক হবেন?
* জলের পাত্রের পরিচ্ছন্নতা: বেশিরভাগ পার্লারে, এমনকি বাড়ি এসে যাঁরা রূপচর্চা করালে একই জলের পাত্র সবার জন্য ব্যবহার করা হয়। ভালো করে ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত না করার ফলে ওই জলে জীবাণুর উপস্থিতি থেকে যায়।
* পেডিকিয়োরের সরঞ্জাম: নখ কাটা, ফাইল করা, কিউটিকল কাটা এবং মৃত ত্বক অপসারণের সমস্ত যন্ত্রপাতি বার বার ব্যবহার করা করে পার্লারের দাদা-দিদিরা। সেগুলি পরিষ্কার বা ডিসইনফেক্ট আপনার সামনে না করলে বা যদি দেখেন পাশের জন্য ব্যবহার করার পরে আপনার উপরেও সেগুলি ব্যবহার করছে - এটা বিপজ্জনক।
* পার্লারের দিদি কতটা পরিষ্কার: হাত না ধুয়ে বা স্যানিটাইজ না করে এবং গ্লাভস না পরে থাকলে বুঝতে হবে তিনি অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও অবহেলা দেখাতে পারেন তাই সেখানে পেডিকিওর না করাই ভালো।
পেডিকিউর করার সরঞ্জাম, জলের টাব, তোয়ালে -এসব ছাড়াও পেডিকিওর করার পর আপনার পায়ে যে মশ্চারাইজার মাখা হচ্ছে, তাতে যদি দেখেন এলার্জি বা ৱ্যাশের মত কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে, তবে সত্তর সেই পার্লার বদলান।
কিভাবে সতর্ক থাকবেন?
১. নিজস্ব সরঞ্জাম ব্যবহার : পার্লারে গিয়ে না হলেও বাড়িতে লোক ডেকে পেডিকিওর করালে চেষ্টা করুন নিজের নেল কাটার, ফাইলার, ব্রাশ, জলের টাব, তোয়ালে, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে। ঝুঁকি কম হবে একেবারেই। পার্লারে গেলে use and throw প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন।
২. জীবাণুমুক্তকরণ : পার্লারের কর্মীরা হাত, সরঞ্জাম স্যানিটাইজ করছেন কি না, পরিষ্কার ধোয়া বা নতুন তোয়ালে দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।
৩. ধাতব সরঞ্জামে সাবধানতা : স্ক্র্যাপার, ব্লেড বা ধারালো সরঞ্জাম দিয়ে অতিরিক্ত ঘষাঘষি বা অসাবধানতায় হতে পারে কাটাছেঁড়া, যা সংক্রমণের সহজ পথ।
৪. জলের গুণমান যাচাই করুন : জলের তাদের পরিছন্নতা যাচাই করা ছাড়াও জলের গুণমান একবার দেখে নেবেন। যদি দেখেন জল না বলে কিন্তু পরিষ্কার না করে একের পর এক কাস্টমারের ওপর ব্যবহার করছে, সেখানে পেডিকিওর করাবেন না।
৫. ত্বকে সমস্যা থাকলে এড়িয়ে চলুন : যদি পায়ে ফুসকুড়ি, র্যাশ বা খোলা ঘা থাকে, পেডিকিয়োর না করাই ভালো। এতে আপনার থেকে সংক্রমণ অন্য কারোর ছড়াতে পারে অথবা অন্য কারোর সংক্রমণ আপনার শরীরেও সহজে ছড়াতে পারে।
৬. পার্লার সম্পর্কে জেনে নিন আগে : হঠাৎ নতুন কোন পার্লারে গিয়ে ট্রায়াল দেওয়ার আগে লোকমুখে শুনে বা অনলাইনে ‘রিভিউ’ পড়ে দেখুন। দেখে, বুঝে যদি মনে হয় পার্লারটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং ব্যবহৃত প্রোডাক্ট ভালো, তবেই সেখানে রূপচর্চা করতে যান।
৭. কথা বলুন : কোন নির্দিষ্ট পার্লারের কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কোন নির্দিষ্ট প্রোডাক্টে আপনার ৱ্যাশ, এলার্জির মতো সমস্যা থাকলে তা পার্লারের কর্মীদের খুলে বলুন। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা থাকলে তাও বলতে হবে।