
গরমে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত শরীর ও মনকে চাঙ্গা করতে অনেকেই ঠান্ডা জলে স্নান করেন। কেউ কেউ আবার টুকরো বরফ মিশিয়ে আরও ঠান্ডা করে নেন জল। সাময়িক ভাবে স্বস্তি মিললেও সেই অভ্যাস কি আদৌ শরীরের জন্য নিরাপদ? ঠান্ডা মানে ঠিক কতটা ঠান্ডা জলে স্নান করা যাবে? গবেষণা বলছে, গরমে ঠান্ডা জলে স্নান শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।
কয়েক মাস আগেই পাবমেড থেকে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে গবেষকেরা জানান, প্রত্যেক মানুষের শরীরই একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সইতে পারে। শরীরের জন্য সহনশীল তাপমাত্রা হল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বেশি গরম সহ্য করার মুশকিল হয়ে পড়ে। যদি ৩৯ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকেন, তা হলে শরীর খারাপ হতে পারে। ওই সময়ে শরীর ঠান্ডা করতে কেউ হঠাৎ ঠান্ডা জল মাথায়-গায়ে ঢালেন, তা হলে রক্তচাপ আচমকা বেড়ে যাবে, রক্তজালিকাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, হৃৎস্পন্দনের হারও বাড়বে।
তবে ঠান্ডা জলে স্নান ক্ষতিকর কেন?
ঠান্ডা জলে স্নান করলে বা ঠান্ডা ঘরে থাকলে, ত্বক ঠান্ডা হয় বটে, কিন্তু শরীরের ভিতরের অংশ মোটেই ঠান্ডা হয় না। গবেষকরা জানান, শরীরের নিজস্ব ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন’ বা কুলিং সিস্টেম আছে শরীরকে ঠান্ডা করার জন্য। অতিরিক্ত গরমে শরীর যে ঘামতে শুরু করে, তা এই কুলিং সিস্টেমেরই অন্তর্গত। শরীরের ৬০ শতাংশ তাপ নির্গত হয় ঘামের মাধ্যমে।
কুলিং পদ্ধতির সময়ে রক্তজালিকাগুলির আয়তন বাড়ে। ফলে আরও বেশি পরিমাণে রক্ত শরীরের surface-এ বা ত্বকের কাছে প্রবাহিত হয়। ওই সময়ে যদি বরফ মেশানো ঠান্ডা জল বা ঘরের তাপমাত্রার থেকে বেশি ঠান্ডা জল ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তা হলে শরীর মনে করে যে, তার নিজস্ব ঠান্ডা হওয়ার পদ্ধতির আর প্রয়োজন নেই। ফলে তাপ নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াটি আচমকা থেমে যায়। এতে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া বাধা পেয়ে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ আচমকা বেড়ে যায় এবং হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়।
তবে কী করা যেতে পারে?
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গরম লাগছে মানেই যে ঠান্ডা জলে স্নান করতে হবে, তা নয়। আগে শরীরকে নিজে থেকেই ঠান্ডা হতে দিন। এর পরে ঈষদুষ্ণ বা রুম টেম্পারেচারে থাকা স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলে স্নান করুন। আবার বেশি তাপমাত্রাও জলেও স্নান করতে যাবেন না রোজ, এতে শরীর কষে যাবে ভেতর থেকে।
জলের তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই সবচেয়ে ভাল। এতে শরীরের ক্লান্তি কাটবে, ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল হবে। গরমের সময়ে শরীরে হাঁসফাঁস হওয়া, অস্বস্তি দূর হবে।