
প্রতি বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং হার্টকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে তথ্য দেওয়া। আজকের জীবনযাত্রায়, ভুল খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং ব্যায়ামের অভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে।
একসময় এই সমস্যাটি শুধুমাত্র বয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন এটি সব বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে ওঠার পর জীবনযাত্রায় কীভাবে পরিবর্তন আনা উচিত এবং প্রথম ৯০ দিনে কী ধরনের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, সেই সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে জেনে নিন।
হার্ট অ্যাটাকের পর ৯০ দিনের যত্ন কেমন হওয়া উচিত?
হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর মেডিকেল ইমার্জেন্সি, যা থেকে সেরে উঠতে সময় এবং সতর্কতা প্রয়োজন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। প্রথম ৯০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা হার্ট এবং শরীরের পেশীগুলির পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। গবেষণা অনুসারে, সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই ঝুঁকি ২৩-৩০ শতাংশ কমানো যেতে পারে। সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন।
ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ:
সুস্থ হয়ে ওঠার সময় ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। রক্তচাপ, সুগার লেভেল, কোলেস্টেরল এবং হার্ট রেট নিয়মিত পরীক্ষা করান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পাতলা করার ওষুধ, বিটা-ব্লকার এবং স্ট্যাটিনের মতো ওষুধগুলি কঠোরভাবে মেনে চলুন।
রক্তচাপ এবং সুগার পরীক্ষা:
বাড়িতেই রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা নিরীক্ষণ করুন। এটি চিকিৎসার সময় ডাক্তারকে সাহায্য করবে।
হালকা ব্যায়াম:
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, সুস্থ হয়ে ওঠার সময় প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট হাঁটা দিয়ে শুরু করুন। কঠোর শারীরিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলুন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন:
চর্বিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জাঙ্ক ফুড কমিয়ে দিন। ফল, শাকসবজি, ওটস, মাছ, বাদাম এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবারকে অগ্রাধিকার দিন। লবণ খাওয়া কমান এবং অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
মানসিক চাপ হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধ্যান, যোগ বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান এবং মদ্যপান হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলি পুরোপুরি ত্যাগ করুন।
ডাক্তাররা কী বলছেন?
বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সুধীর সাক্সেনা (ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মোহালি) বলেছেন, 'সুস্থ হয়ে ওঠার ৯০ দিনের সময়কালে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। সঠিক যত্নের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যেতে পারে।'
হার্ট অ্যাটাকের পরের প্রথম ৯০ দিন সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জীবনযাত্রা, ওষুধ সেবন, ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি একটি সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন। বিশ্ব হার্ট দিবসের এই উপলক্ষে, আপনার হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এই পরামর্শগুলি অনুসরণ করুন এবং দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমান। আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখুন, একটি সুস্থ জীবন উপভোগ করুন!