
আজকের ব্যস্ততার জীবনেদৈনিক ৭-৮ ঘন্টার ঘুম বিলাসিতা। কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, পারিবারিক দায়িত্ব—সব মিলিয়ে বিশ্রামের সময় ক্রমেই কমে আসছে। ঘুমের দৈনিক ঘাটতি পুষিয়ে দিতে জাপানে এক অভিনব অভ্যাস প্রচলিত আছে, যাকে ‘ইনেমুরি’ বলা হয়। অর্থাৎ জেগে থাকতে থাকতে ঘুমোনো, যার মাধ্যমে অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। মন ভাল রাখতে এবং দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা সচল রাখতে পারে জাপানিরা।
এখন এই পদ্ধতি এখন শুধু জাপানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং পশ্চিমা দুনিয়াও ইনেমুরিকে স্বাদরে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
ইনেমুরি’ কী?
‘ইনেমুরি’ একটি জাপানি অভ্যাস, দিবানিদ্রা বা পাওয়ার ন্যাপের ধারণার মতোই। স্লিপ এক্সপার্টদের একাংশের মতে, দিনের ব্যস্ত সময়ের মধ্যে (বিশেষত দুপুরে) ১৫-২০ মিনিটের একটি ছোট ঘুম, কিন্তু বিছানায় শুয়ে নয়, চেয়ার, ট্রেনের সিট, বা অফিস ডেস্কে ব্যস্ততার ফাঁকে। জাপানি এই ধরনের ঘুমের প্রচলনকে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবেই দেখেন তাঁরা। এমনকি আলাদা করে ‘ইনেমুরি’ কেন্দ্রও রয়েছে জাপানে।
ইনেমুরির উপকারিতা
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘুমের দরকার ভীষণ। সেদিক থেকে জাপানের এই ইনেমুরি পদ্ধতি সঠিকভাবে পালন করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন-
* মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে
* স্ট্রেস ও উদ্বেগ হ্রাস পায়
* মুড ভালো থাকে ও মানসিক প্রশান্তি বাড়ে
* স্নায়ু বিশ্রাম পায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়ক
* শরীর ও মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর হয় দ্রুত
কীভাবে করবেন ইনেমুরি?
ধাপ ১ :
সঠিক সময় ও স্থান নির্বাচন করুন (বাস, ট্রেন, অফিস ডেস্ক)। ইচ্ছে না হলেও সেই সময়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, পারিপার্শ্বিক আলোচনা বা শব্দ থেকে মনকে দূরে রাখতে হবে। দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে যেকোনো সময় অভ্যাস করতে হবে।
ধাপ ২ :
মোবাইলে টাইমার সেট করুন, ১৫–২০ মিনিট মতো।
ধাপ ৩ :
চেয়ার বা ডেস্কে হেলান দিয়ে, চোখ বন্ধ করে পরিবেশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করুন। রিল্যাক্স করুন।
ধাপ ৪:
ঘুম ভাঙার পর চোখ ধীরে খুলুন, চোখে মুখে জল দিয়ে, ঠান্ডা জল পান করুন, এবং কাজে লেগে পড়ুন।
ধাপ ৫ :
দিনে একবারই ইনেমুরি করা যথেষ্ট, অতিরিক্ত করলে রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সারা দিনের কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি বা পাওয়ার ন্যাপ ক্লান্তি, একঘেয়েমি এবং উদ্বেগ দূর করতে পারে। আপনাকে রিচার্জ করবে। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর বলেন, ‘‘একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছোট ছোট বিরতির ঘুম শরীরকে ভাল রাখে। রাতে যাঁদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। অন্যদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারী হতে পারে।’’ তিনি আরও এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় এই ধরনের ঘুম ভাল নয়। শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’’ আবার দুপুরে বেশিক্ষণ ঘুমও ভালো না, কারণ এই ধরনের ঘুম অভ্যাস করতে গিয়ে অনেক সময়ে ‘স্লিপ ইনারশিয়া’ হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘বেশি ক্ষণ ঘুমোলে, ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু ক্ষণের জন্য কাজে মন বসতে না-ও পারে। সুতরাং, ‘ইনেমুরি’ অভ্যাস করার ফলে যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা উচিত।’’