
বর্ষাকাল মানেই বৃষ্টি, কাদায় ভেজা জুতো-মোজা আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। এর মাঝেই নিঃশব্দে আসে এক অস্বস্তিকর রোগ — অ্যাথলিটস ফুট। নাম শুনে অনেকে ভাবতেই পারেন হয়তো খেলোয়াড়দের কোনো সমস্যা। কিন্তু বাস্তবে, যেকোনো ব্যক্তি, যাদের পা বেশিরভাগ সময় স্যাঁতসেঁতে থাকে, তারাই আক্রান্ত হতে পারেন এই ছত্রাকঘটিত সংক্রমণে। তাই জেনে রাখা দরকার ঠিক কী এই রোগ, কীভাবে ছড়ায় বর্ষায় এবং কীভাবে প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা যাবে।
কী এই অ্যাথলিটস ফুট?
অ্যাথলিটস ফুট হল এক ধরনের ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, যার বৈজ্ঞানিক নাম টিনিয়া পেডিস (Tinea Pedis)। এটি সাধারণত পায়ের পাতার পাতলা চামড়ায়, বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে দেখা দেয়। চামড়া লাল হয়ে যায়, চুলকানি হয়, ফাটল ধরতে পারে, কখনও কখনও জলেভরা ছোট ছোট ফোসকা-ও দেখা যায়। রোগটি সংক্রামক, অর্থাৎ এটি এক জনের থেকে অন্য জনের শরীরে যেতে পারে সহজেই, বিশেষত জুতো, মোজা, তোয়ালে শেয়ার করলে।
অ্যাথলিটস ফুটের লক্ষণ কী কী?
* আঙুলের ফাঁকে চামড়া ফেটে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া
* অতিরিক্ত চুলকানি ও জ্বালা
* পায়ে হঠাৎ করে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়া
* জলেভরা ফোসকাও হতে পারে কখনো
* চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া
বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেশি কেন?
বর্ষার জল-কাদায় আমাদের পা থাকে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জুতো-মোজার ভেতর আটকে। এই আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাক বৃদ্ধির জন্য আদর্শ। বিশেষ করে যদি পায়ে ঘাম ধরে বা জল ঢুকে যায় এবং তা দ্রুত শুকানো না হয়, তাহলে ছত্রাক সংক্রমণ হবেই। এছাড়া বর্ষায় পায়ের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা কঠিন, সেটাও একটা বড় কারণ।
প্রতিরোধ করবেন যেভাবে -
১। পা শুকনো রাখুন - বাইরে থেকে এলে পা ভালোভাবে ধুয়ে মুছে ফেলুন, আঙুলের ফাঁকে যাতে জল না লেগে থাকে।
২। উপযুক্ত মোজা ও জুতো - সুতির মোজা ব্যবহার করুন যাতে ঘাম শোষণ হয়। খোলামেলা জুতো বেছে নিন যাতে বাতাস চলাচল করে।
৩। ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার নয় - মোজা, তোয়ালে, জুতো — এসব ব্যক্তিগত জিনিস অন্যের সঙ্গে ভাগ না করাই ভালো।
৪। অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার বা ক্রিম - বাইরে বের হওয়ার আগে বা ঘাম হলে ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে, চিকিৎসকের পরামর্শ করে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
৫। বাথরুম বা কমন শাওয়ার - কমন বাথরুমে গেলে চটি পরে চলাফেরা করুন। পা ভিজলে, দ্রুত শুকিয়ে নিন।
চিকিৎসা দরকার কবে?
পায়ের চামড়া ফেটে গেলে, ফোসকা হলে, ঘা হয়ে রক্তপাত শুরু হলে বা সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে বুঝলে দ্রুত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধও খেতে হতে পারে।