বর্ষাই রোগ-সংক্রমণের মূল, মরশুমি পেটের অসুখ রুখতে কী করবেন, জানুন

Published : Jul 21, 2025, 12:01 AM IST
typhoid

সংক্ষিপ্ত

বর্ষাকালে টাইফয়েডের মতো জলবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। দূষিত খাবার ও পানি এর প্রধান কারণ। সচেতনতা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

বর্ষাকাল আমাদের প্রকৃতিকে যেমন সতেজ করে তোলে, তেমনই নিয়ে আসে নানা ধরনের অসুখবিসুখ। এই সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় রোগ-জীবাণুর সংক্রমণও বেড়ে যায়। হয় মশাবাহিত ও জলবাহিত রোগের বারবাড়ন্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ও বিপজ্জনক রোগ হলো টাইফয়েড। টাইফয়েডের মতো অসুখের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়?

সালমোনেল্লা টাইফি নামে এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণেই টাইফয়েড হয়। বর্ষায় রাস্তার খোলা খাবার - কাটা ফল, কাঁচা স্যালাড, অঢাকা ভাজাভুজি, এসব বেশি খেলে, নোংরা হাতে খাবার খেলে, অপরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে খাবার পানীয় কিনে খাওয়া, রঙিন ঠান্ডা পানীয়, বরফের গোলা, আইসক্রিম খাওয়া ইত্যাদি কারণে ছড়াতে পারে অসুখ। বিশেষ করে ছোটদের জন্য ঝুঁকি বেশি, কারণ বড়োরা সতর্ক হলেও ছোটদের আকর্ষণ বাইরের এইসব খাবার ও পানীয়ের দিকেই থাকে।

কলকাতার এক হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের মতে,‘‘বর্ষার মরসুমে রাস্তার বরফ মেশানো জল, শরবত, আইসক্রিম এগুলো এড়িয়ে চলতেই হবে। কারণ, এই সমস্ত খাবারে টাইফয়েডের ব্যাক্টেরিয়া থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সুস্থ থাকতে হলে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতেই হবে’’।

মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের পেটের রোগের চিকিৎসক পবন ধোবলও এবিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘‘বর্ষায় খাবার জলের সঙ্গে বৃষ্টির জল বা দূষিত জল মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার উপর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই কারণে রাস্তার খাবার খাওয়া এই সময় অনেক বেশি ঝুঁকির হয় এই মরসুমে।’’

পেটের অসুখ এড়াতে কী করবেন?

১। সব সময় সঙ্গে জল রাখা দরকার। জল ফুটিয়ে খাওয়া ভাল। বাড়িতে জল পরিশোধনের যন্ত্র থাকলে, পরিশোধিত জলও খাওয়া যেতে পারে। বাইরে জল এড়ালেই বিপদ কমবে।

২। বর্ষায় রাস্তার খাবার বাদ দিলেও পেটের অসুখের ঝুঁকি কমবে। কাটা ফল, পানীয়, ভাজাভুজি— যে কোনও খাবারই এই সময় এড়িয়ে চলা ভাল।

৩। বাড়িতেও খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। যে কোনও ফল খুব ভাল করে ধুয়ে খেতে হবে। কাঁচা স্যালাড এবং সব্জি খাওয়ার বিষয়েও সতর্কতা জরুরি। খুব ভাল করে ধোয়ার পাশাপাশি সব্জি অল্প একটু ভাপিয়ে নিলে সংক্রণের ঝুঁকি কমবে। সামুদ্রিক খাবারও এই মরসুমে এড়িয়ে চলা ভাল।

৪। রাস্তাঘাট হোক, বাড়ি কিংবা রেস্তরাঁ—খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। পেটের অসুখ দূরে রাখার অন্যতম শর্ত এটিই। শুধু বর্ষাকাল নয়, এই অভ্যাস সব সময়ের জন্যই ভাল।

৫। বর্ষাকালে খুব তাড়াতাড়ি খাবার নষ্ট হয়। কৌটোর ঢাকা আলগা হলেই মশলাপাতি মিইয়ে যায়। পোকামাকড়, খাবারে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরিষ্কার পাত্রে বা ফ্রিজে রাখতে হলে বায়ুনিরোধী কৌটোয় খাবার রাখা ভাল। পেটের অসুখ বা টাইফয়েড এড়ানোর শর্ত হল পরিচ্ছন্নতা।

৬। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়া দরকার। সে জন্য দরকার উপযুক্ত পুষ্টি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, নানা রকম সব্জি পাতে রাখা দরকার। আদা, রসুন, হলুদের মতো মশলাপাতি, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, খাওয়া দরকার সুস্থ থাকার জন্য।

তাই চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘‘এই মরসুমে টানা ৩-৪ দিন জ্বর থাকলেই সতর্ক হওয়া দরকার। ডায়েরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য—দু’টি কিন্তু টাইফয়েডের লক্ষণ হতে পারে। তবে এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অনেক রকম ওষুধ রয়েছে। পেটের অসুখ হোক বা জ্বর হলে বেশি সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।’’

সারাংশ বর্ষায় সবচেয়ে সাধারণ এবং বিপজ্জনক সমস্যা হল জলবাহিত ও মশাবাহিত রোগ, যেমন - পেটের অসুখ, টাইফয়েড, আন্ত্রিকের ঝুঁকি। তবে সহজ কিছু অতর্ক অভ্যাস আপনাকে সুস্থ রাখতে পারবে।

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

রোজ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন! অজান্তেই কি শরীরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন?
Teeth Health: দাঁতের ফাঁকে খাওয়ার আটকে থাকলে কি দিয়ে পরিষ্কার করবেন টুথপিক নাকি ফ্লজ?