
ক্যান্সার - শব্দটি এখনও বহু মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে পটু। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি হলেও এখনও ক্যানসারে ভয় কাটেনি মানুষের জীবনে-মনে।সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু এক দিনের ব্যায়ামের একটি সেশনও ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ধীর করতে পারে। এ গবেষণা বলছে, ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি শরীরচর্চার ভূমিকা একেবারে অবিশ্বাসনীয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা বা ক্যানসার কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে এমন জৈবরাসায়নিক নিঃসরণ করার কাজ করতে পারে শরীরচর্চা।
গত জুলাই মাসে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘পাবমেড’-এ ব্রেস্ট ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড ট্রিটমেন্টের জার্নালে। সেখানে বলা হয়, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং (RT) এবং হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (HIIT)-এর একটি সেশনই শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি জোগাতে পারে। যেখানে গবেষক ফ্রান্সেস্কো বেত্তারিগার দাবি রাখেন, শরীরচর্চার একটিমাত্র সেশনই মায়োকাইনসের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। এই মায়োকাইনস্ হল এমন এক প্রকার প্রোটিন, যা ক্যানসার-বিরোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং ব্যায়ামের সময় পেশি থেকে নিঃসৃত হয়। গবেষকের দেওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, এই প্রোটিনগুলিই ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি সম্ভবত ২০-৩০ শতাংশ ধীর করতে পারে।
স্তন ক্যানসারজয়ী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং বা হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে বলা হয়। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে—ব্যায়ামের ঠিক আগে ও পরে এবং ফের আধ ঘণ্টা বাদে তাঁদের শরীরে ক্যানসাররোধী মায়োকাইনসের মাত্রা মাপা হলে, ক্যানসাররোধী প্রোটিনের মাত্রা নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেখা গিয়েছে, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং বা হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং, দুই-ই এমডিএ-এমবি-২৩১ কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে, যা ক্যানসারের ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়। আর এখান থেকেই গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন, যে স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব শরীরচর্চার সাহায্যে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে।
আবার, কলকাতার ক্যানসার রোগচিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়ও জানান, ব্যায়াম করলে কোলন ক্যানসারেরও ফেরত আসার ঝুঁকি কমে যায়। তিনি আরও জানান, ‘‘গত মাসেই আমেরিকার শিকাগোতে আয়োজিত বিশ্ব ক্যানসার কনফারেন্স-এ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সেখান থেকে জানা যায়, স্টেজ ২ এং স্টেজ ৩ কোলন ক্যানসারের রোগীদের অপারেশন ও কেমোথেরাপি দেওয়ার পর একটি দলকে সাধারণ জীবনযাপন করতে বলা হয়, অন্য দলকে নিয়মিত ব্যায়াম, শরীরচর্চার মধ্যে দিয়ে যেতে বলা হয়। দেখা যায়, প্রথম দলের তুলনায় দ্বিতীয় দলের রোগীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি অনেকখানি কমে এসেছে। তাই এখন কোলন ক্যানসার রোগীদের নিয়মিত শরীরচর্চা করতে বলা হচ্ছে। শুধু কোলন ক্যানসার নয়, একাধিক ক্যানসারের ঝুঁকিই কমাতে পারে রোজের নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা’’।
* রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং
ডাম্ববেল, কেট্লবেল, স্কোয়াট, পুশ-আপ, প্ল্যাঙ্ক, বাইসেপ্স কার্ল ইত্যাদি এই ধরণের ব্যায়ামগুলি রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই ব্যায়ামগুলি কোরকে পেশি শক্তিশালী হয়, মেটাবলিজম বাড়ে, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
* হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং
৩০ সেকেন্ড জাম্পিং জ্যাক, তারপর ১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম, আবার ৩০ সেকেন্ড বার্পি করতে হবে। ২০-৩০ মিনিট এইধরণের ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে নিয়মিত। অল্প সময়ে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে শরীরের ওজন ও প্রদাহ কমানো যায়।
কী ভাবে ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিত শরীরচর্চা উপকার করে?
* প্রথমত, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরচর্চা। ক্যানসারে পরিণত হতে পারে, এমন অস্বাভাবিক কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা পালন করে। * শরীরের প্রদাহও কমায়, যা ক্যানসারের ঝুঁকির বড় কারণ। * শরীরের ওজন এবং ইস্ট্রোজেন এবং ইনসুলিনের মতো হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নয়তো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
সপ্তাহে পাঁচ দিন, দিনের কোনও এক সময়ে, মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যায়াম আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য যথেষ্ট। একটানা আধ ঘণ্টা শরীরচর্চা করতে না পারলে ভেঙে ভেঙে বিশ্রাম নিয়ে করুন। প্রতি বার খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন, শরীরকে সচল রাখুন।