সময় যত গড়াচ্ছে ততই অত্যাধুনিক হয়ে উঠছি আমরা। ঘড়ির কাঁটার থেকেও আগে ছুটতে গিয়ে মাঝে-মাঝে হাঁফিয়েও উঠছি। সামনের জনকে টেক্কা দেওয়ার এই ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে ভুলতে বসেছে আজকের প্রজন্ম। কিন্তু যদি এই প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় না থ
মুম্বই: সময় যত গড়াচ্ছে ততই অত্যাধুনিক হয়ে উঠছি আমরা। ঘড়ির কাঁটার থেকেও আগে ছুটতে গিয়ে মাঝে-মাঝে হাঁফিয়েও উঠছি। সামনের জনকে টেক্কা দেওয়ার এই ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে ভুলতে বসেছে আজকের প্রজন্ম। কিন্তু যদি এই প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় না থাকত, দৌড়ানো লাগত না প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে তাহলে কেমন হতো বলুন তো?
দৈনন্দিন এই একঘেয়ে জীবন থেকে কী মুক্তি চান আপনিও? তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য...
প্রতিদিনের ব্যস্ততা ভুলে আপনিও কী 'slow living'-এ বাঁচতে চান? জানেন এই 'স্লো লিভিং' আসলে কী? এই 'slow living' আদতে বিদেশের জনপ্রিয় অভ্যাস। তবে হাল আমলে এখন আমাদের দেশেও এটি বেশ জনপ্রিয়।
জানা গিয়েছে, এটি প্রথম তৈরি হয়েছিল ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে। ইতালীয় ধীর খাদ্য আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় এর জন্ম। বা ধীর গতির জীবনধারার উৎপত্তি। এই স্লো লিভিং আসলে আধুনিক পশ্চিমা দেশগুলির ফাস্ট ফুডের ওপর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার বিরোধিতার জন্য তৈরি হয়েছিল। একসঙ্গে এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎপাদন কৌশল ও বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাদ্যভাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
‘স্লো লিভিং’ (Slow Living) বলতে বোঝায় সাধারণত প্রতিদিনের জীবনযাত্রার গতি কমিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া। নিজের পছন্দের কাজ করা। দৈনন্দিন জীবনের গতি থেকে কিছুটা গতি কমিয়ে বেঁচে থাকা। এরফলে শরীর ও মন ভাল থাকে, আনন্দে বাঁচা যায়। একটু ধীর-স্থির ভাবে চললে তা কমে বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে। পশ্চিমা দেশগুলি বেশ কয়েক বছর আগেই এই ‘স্লো লিভিং’ চর্চায় বিশ্বাস রেখেছে। এখন ধীরে ধীরে এ দেশেও ছড়িয়েছে এই রীতি। কর্পোরেটের ব্যস্ততা, প্রতিযোগিতার যাঁতাকলে, বেশি রোজগারের চাপ, কম বয়সে অনেক খ্যাতির জন্য দৌড়, সবকিছু থেকে ব্যতিক্রম হওয়ার জন্য পা এগিয়েছেন অনেকেই।
এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বলা যেতে পারে, অপরাজিতা সেনগুপ্ত ও দেবল মজুমদারের কথা তুলে ধরা যায়।
জানা গিয়েছে, প্রবাসী অপরাজিতা সেনগুপ্ত ও দেবল মজুমদার তাঁদের ১৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে বীরভূমের এক গ্রামে থাকতে শুরু করেছিলেন বিগত দশ বছর আগে। প্রযুক্তি, সুযোগ-সুবিধা পেয়েও তারা নিজের মেয়েকে ব্যস্ততার যাঁতাকলে ফেলে দিতে চাননি। বীরভূমে মাটির বাড়ি বানিয়ে, দুই একর জমিতে চাষ বাস শুরু করেন দু’জনে। নিজেদের জমি থেকেই ফল-সব্জি, চাল উৎপাদন করে, তাই খান। অপরাজিতা সেনগুপ্ত তার কথায় হতাশা প্রকাশ করেছেন, বলেছেন , ‘‘বুঝতে পারছিলাম, এই মৌলিক জিনিসগুলির প্রতি উদাসীনতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ক্রমশ পণ্যের উপর নজর বাড়ছে। এদিকে চাকরির জন্য দু’জনেই ছুটে বেড়াচ্ছি, কিন্তু সন্তানের জন্য সময় বার করতে পারছি না। টাকা রোজগার করার দৌড়ে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাকে ভুলিয়ে রাখতে প্লাস্টিকের খেলনা, সিন্থেটিক পোশাক, মোবাইল-ট্যাব কিনে দিচ্ছি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস ভুলে ফাস্ট ফুডের জগতে ঢুকে যাচ্ছি। এর পরই দেবল আর আমি খাবার নিয়ে পড়াশোনা করি। তাতে দেখা যায়, সবকিছুতেই গোলমাল। বিষাক্ত হয়ে উঠছে শরীর। সেটিই বোধহয় সঙ্কেত ছিল আমাদের জন্য।''
অন্যদিকে বছর চল্লিশের চিত্রশিল্পী এবং ‘জলাদর্শ কালেক্টিভ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কৌস্তভ চক্রবর্তী নিজের মতো করে ধীর গতির যাপনেই বিশ্বাসী। পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যও পৃথিবীর তাড়াহুড়ো থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন দুনিয়াকে। সম্প্রতি মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর ছবি ‘নধরের ভেলা’, যেখানে নিজের জীবন, নিজের ইচ্ছাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন সবার কাছে তিনি। তাহলে আর এত ভাবনা কীসের? প্রতিদিনের ইঁদুর দৌড়ে যদি আপনি হাঁফিয়ে ওঠেন তাহলে বেছে নিতে পারেন আপনিও এই 'Slow living' লাইফস্টাইল।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।