
গ্রীষ্মের তাপ প্রশমনে অনেকেই নারকেল জল পান করেন। এটি শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ করে তোলে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা আছে যাদের গ্রীষ্মকালেও নারকেল জল পান করা এড়িয়ে চলা উচিত। কারা এবং কেন নারকেল জল পান করা উচিত নয় তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১. কিডনি রোগী:
কিডনি শরীর থেকে পটাশিয়াম নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারকেল জলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে, কিডনি ঠিকমতো কাজ না করার ফলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটি হৃদস্পন্দনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রাণঘাতীও হতে পারে। গ্রীষ্মকালে শরীরে জলশূন্যতার কারণে কিডনির কার্যকারিতা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কিডনি রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নারকেল জল পান করা এড়িয়ে চলা উচিত।
২. উচ্চ পটাশিয়াম (হাইপারক্যালেমিয়া):
কিছু লোকের স্বাভাবিকভাবেই রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। এই অবস্থাকে হাইপারক্যালেমিয়া বলে। ইতিমধ্যেই শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকলে নারকেল জল পান করলে পটাশিয়ামের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদরোগ, পেশী দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্রীষ্মকালে ঘামের মাধ্যমে কিছু পটাশিয়াম বের হয়ে গেলেও, নারকেল জলে থাকা অতিরিক্ত পটাশিয়াম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রক্ত পরীক্ষায় পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি ধরা পড়লে নারকেল জল পান করা একেবারেই বন্ধ করা উচিত।
৩. হৃদরোগী:
কিছু হৃদরোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কম পটাশিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন। নারকেল জলে থাকা অতিরিক্ত পটাশিয়াম তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়াও, কিছু হৃদরোগের ওষুধও শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। গ্রীষ্মকালে জলশূন্যতা হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই হৃদরোগীদের নারকেল জল পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. অ্যালার্জি আক্রান্ত:
কিছু লোকের নারকেল জল থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। নারকেল জল পান করার পর যদি চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদের অবিলম্বে নারকেল জল পান করা বন্ধ করা উচিত। গ্রীষ্মকালে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হতে পারে। আগে নারকেল জল পান করে অ্যালার্জি হয়ে থাকলে, তাদের এটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনকারী:
কিছু ওষুধ শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়াতে বা কমাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের ওষুধ সেবনকারীদের নারকেল জল পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গ্রীষ্মকালে শরীরে জলশূন্যতার কারণে ওষুধের কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে। তাই ওষুধ সেবনকারীদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৬. গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস নারকেল জল পান করা এড়িয়ে চলা উচিত:
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়েই ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। নারকেল জলে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট এবং খনিজ পদার্থ থাকে। কিছু চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই সময় নারকেল জল পান করলে কিছু মহিলার পাচনতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, কিছু লোকের নারকেল জল ঠান্ডা লাগতে পারে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় নারকেল জল পান করা ভালো কারণ এটি জলশূন্যতা রোধ করতে এবং বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। তবে, সাবধানতার জন্য আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।