কার্তিক বৈদিক দেবতা নন, কার্তিক হলেন পৌরাণিক দেবতা।ভারতে উনি প্রাচীন দেবতা হিসেবে পূজিত হন এবং প্রাচীন ভারতের প্রায় সর্বত্র ই কার্তিক পূজার প্রচলন ছিল।কার্তিক পূর্ণিমার উৎসবটি শুরু হয় ‘প্রবোধিনী একাদশীর’ দিন থেকে
কার্তিক বৈদিক দেবতা নন, কার্তিক হলেন পৌরাণিক দেবতা।কার্তিক ঠাকুর (Kartik Thakur) উত্তর ভারতের চেয়ে অধিক জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতে। তামিল ভাষীদের কাছে কার্তিকের রূপ হল ‘মুরুগন’।বাংলাতেও কার্তিক পুজো বেশ জনপ্রিয়।কার্তিক পূর্ণিমার (Kartik Purnima) একটি দিন উত্তর ভারতে ‘তুলসী বিবাহ’ উদযাপিত হয়। ভগবান বিষ্ণু (Vishnu Dev) এই দিনে শিবের উপাসনা করেছিলেন এবং তাঁকে এক হাজার পদ্ম ফুলও প্রদান করেছিলেন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার
(১)ভারতীয় পুরাণগুলির মধ্যে স্কন্দ পুরাণে কার্তিকের বিষয়ে সবিস্তার বর্ননা রয়েছে। মহাভারতে এবং সঙ্গম তামিল সাহিত্যে কার্তিকের নানান মাহাত্ম্যের (Signigicance of God Kartik) কথা বর্ণিত রয়েছে।কোথাও কার্তিকের খ্যাতি ‘স্কন্দ’ নামে, কোথাও বা ‘মুরুগন’ নামে তো কোথাও বা আবার তিনি ‘সুব্রহ্মণ্য’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন- Jupiter Transit 2021- রাশি পরিবর্তন করতে চলেছে বৃহস্পতি, ৪ রাশির বাড়বে ব্যাপক সমস্যা
(২)দেবাদিদেব মহাদেব শিব ও আদি পরাশক্তি পার্বতীর পুত্ররূপে কার্তিক সু প্রসিদ্ধ। দেবলোকে যেখানেই যুদ্ধ হয় সেখানেই দেবসেনাপতি কার্তিকের ডাক পড়ে। অন্যদিকে কৃত্তিকা নক্ষত্রে কার্তিক ঠাকুরের জন্ম হয়েছিল এবং ছয় কৃত্তিকার দ্বারা তিনি পুত্ররূপে গৃহীত ও প্রতিপালিত হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম কার্তিকেয় বা কার্তিক (Kartik)।
(৩) কার্তিক বৈদিক দেবতা নন, কার্তিক হলেন পৌরাণিক দেবতা।ভারতে উনি প্রাচীন দেবতা হিসেবে পূজিত হন এবং প্রাচীন ভারতের প্রায় সর্বত্র ই কার্তিক পূজার প্রচলন ছিল।কার্তিক পূর্ণিমার উৎসবটি শুরু হয় ‘প্রবোধিনী একাদশীর’ দিন থেকে; যেটি শুক্লপক্ষের একাদশী এবং পূর্ণিমা কার্তিক মাসের পঞ্চদশ দিন। এই কারণে পাঁচ দিন কার্তিক পূর্ণিমার (Kartik Purnima) উৎসব চলে ।
(৪) পাঁচ দিনব্যাপী কার্তিক পূর্ণিমার (Kartik Purnima) একটি দিন উত্তর ভারতে ‘তুলসী বিবাহ’ উদযাপিত হয়। পুরাণ অনুসারে এই বিশেষ দিনটিতে দেবী বৃন্দা বা তুলসী গাছ সহ ভগবান বিষ্ণুর বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল। তাই বৃন্দাবনে এই উৎসব পালিত হয় ধূমধাম করে।
(৫) কার্তিক পুজোর 9Kartik Puja) দিন কোনো কোনো জায়গায় বৈদিক মন্ত্র পাঠ করা হয় ও ভজন পরিবেশিত হয়। অনেক ভক্ত শিবের জন্য একটি বিশেষ পুজোর আয়োজন করেন। অনেকে বিশ্বাস করেন যে ভগবান বিষ্ণু এই দিনে শিবের উপাসনা করেছিলেন এবং তাঁকে এক হাজার পদ্ম ফুলও প্রদান করেছিলেন ।
(৬) পুরাণ কথা অনুসারে, ব্রহ্মার বরে মহাতেজস্বী তারকাসুরকে নিধনের জন্যই পরাক্রমশালী যোদ্ধা কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। তারকাসুরকে বধ করা কোনো দেবতার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না এবং তার অত্যাচারে দেবকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এবং সেসময় দৈববলে প্রাপ্ত অজেয় শক্তির অধিকারী এই দেবশিশু কার্তিকেয় তারকাসুর নিধন করেছিলেন এবং এই তারকাসুর নিধন করে দেবকুলে কার্তিক হন দেব সেনাপতি।পুরাণমতে তিনি তরুণ সদৃশ, সুকুমার, শক্তিধর এবং সর্বসৈন্যের পুরোভাগে অবস্থান করেন।
(৭) কার্তিক (Kartik) একাধিক নামে সম্বোধিত হয়ে থাকেন। যেমন- কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুলেয়, ক্রৌঞ্চারতি, শরজ, তারকারি, শক্তিপাণি, বিশাখ, ষড়ানন, গুহ, ষান্মাতুর, কুমার, সৌরসেন, দেবসেনাপতি গৌরী সুত ইত্যাদি। এছাড়াও কার্তিকের আরও অনেক নাম আছে যেমন- পাবকি, মহাসেন, ষন্মুখ,কুমার, কুমারেশ, গাঙ্গেয়, বিশাখ, মহাসেন, কুক্কুটধ্বজ, নৈগমেয়।
(৮)কার্তিক ঠাকুর (Kartik Thakur) উত্তর ভারতের চেয়ে অধিক জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতে। তামিল ভাষীদের কাছে কার্তিকের রূপ হল ‘মুরুগন’। যিনি তাদের প্রধান আরাধ্য দেবতাদের মধ্যে অন্যতম। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে যেখানে তামিলদের সংখ্যা বেশি সেখানে 'মুরুগন দেব' সাড়ম্বরে পুজিত হয়ে থাকেন।
(৯) বাংলার কার্তিক পুজো (Kartik Puja) বেশ জনপ্রিয়। কোথাও বস্ত্রহীন কার্তিক তো কোথাও আবার পুত্রসন্তান বরদানকারী দেবতা কার্তিক তো কোথাও আবার দেব সেনাপতি কার্তিক। শুধু তাই না জমিদার ও বাবু কালচারের জন্য বাংলার গণিকা সমাজেও কার্তিক পূজা বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ছিল। আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজোর সময়েও কেউকেউ কার্তিক ঠাকুরের পূজা করত।
(১০)কার্তিক ঠাকুরের (Kartik Thakur) সঙ্গে ছয় সংখ্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আর সেই কারণেই হয়ত স্ত্রী ষষ্ঠীর সাথে তার মিল৷ যতক্ষণ না বাচ্চা বড় হচ্ছে ততদিন অবধি তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন ৷কথিত আছে কার্তিক ঠাকুরের কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়। সেজন্য সদ্য বিয়ে হয়েছে অথবা বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে কিন্তুু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা একটি জনপ্রিয় লোকাচারের মধ্যে পড়ে।
আরও পড়ুন- Astrology News- মঙ্গলবারে বজরঙ্গবলীর পুজোয় এই ৪ রাশি পাবে বিশেষ কৃপা