দুর্গা পুজোর সূচনা হয়েছিল বহু প্রাচীন কালেই। বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার পরিচয় রয়েছে। দুর্গাপুজোর রীতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল কুমারী পুজো। অষ্টমীর সকালের অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো। দুর্গাপুজো ছাড়া অনেক জায়গাতে জগদ্ধাত্রী পুজো, অন্নপূর্ণা পুজো, এমনকী কালিপুজোতেও হয়ে থাকে কুমারী পুজো। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া, বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট-এ কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে।
আরও পড়ুন- আজও মা নীলবর্ণা রূপেই পূজিত হন কৃষ্ণনগরের এই বাড়িতে
শাস্ত্রানুযায়ী কুমারী পুজোর উৎপত্তি হয় কোলাসুর-কে বধ করার মধ্যে দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে কোলাসুর এক সময় স্বর্গ ও মর্ত্য-এর অধিকার নেওয়ার ফলে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী পুর্নজন্ম-এ কুমারীরূপে কোলাসুর-কে বধ করেন, এর ফলে মর্ত্যে কুমারীপুজোর প্রচলন শুরু হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে কুমারীপুজোর পদ্ধতি। বর্ণনানুযায়ী কুমারী পুজোতে কোনও জাতি, ধর্মভেদ নেই। তবে সাধারণত ব্রাক্ষন কন্যা-কেই পুজো করা হয়।
১ থেকে ১৬ বছরের কন্যাকে কুমারীরূপে পুজো হয়। বয়স অনুযায়ী কুমারীদের বিভিন্ন নামে পুজো করা হয়।
এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী
তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যার নাম কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভগা
ছয় বছরের কন্যার নাম উমা
সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী
আট বছরের কন্যার নাম কুষ্ঠিকা
নয় বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যার নাম রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যার নাম ভৈরবী
তোরো বছরের কন্যার নাম মহালপ্তী
চৌদ্দ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা অন্নদা
পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পুজো করেছিলেন। পুজোর সময় বেলুড় মঠে কুমারী পুজোর প্রচলন আছে। বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গা পুজোর সময়ে বিবেকানন্দ একসঙ্গে অনেক কুমারীর পুজো করেছিলেন। এখন সেখানে একজন কুমারীকেই অষ্টমীর সকালে নিষ্ঠা ভরে পুজো করা হয়। এছাড়া আরও নানা জায়গাতেও কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে।