বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সাধারণত দেখা যায় সেটি সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মাঝখানে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তাঁর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ; বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিক। দেবীর মূর্তি অনেক রকম ভাবেই বানান শিল্পীরা। কখনো বা পাথরের, কখনো বা ধাতুর আবার কখনো বা মৃণ্ময়ী রূপে, আবার কখনো বা দেখতে পাওয়া যায় রত্নখচিত মূর্তি।
তবে মাটির তৈরি মূর্তি বানাতে মূলত গঙ্গা মাটি, গো-চনা, গো-মূত্র এই তিন মূল উপাদানের প্রয়োজন হয় এবং এই উপাদান ছাড়া দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরী হয় না। আর এই তিন উপাদান ছাড়াও রয়েছে আরেক উপকরণ, যা দিয়ে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি হয়, তা হল গণিকালয়ের পুণ্য মাটি। এই উপাদান ব্যবহার করে পটুয়ারা দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়েন। সমাজে এরা যতই তুচ্ছ হোক না কেন, মায়ের কাছে তাঁর সকল সন্তানই সমান। গণিকালয়ের পুণ্য মাটি ছাড়া তাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় মায়ের মাটির মূর্তি।
ধর্ম প্রজ্ঞাদের অনেকের মতেই গঙ্গা মাটি, গো-চনা এবং গো-মূত্র মানব দেহকে পবিত্র করে। তাই সমস্ত শুভ কাজের আগে এই তিন উপকরণের ব্যবহার করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আর সেই সূত্র ধরেই দুর্গা দেবীর আরাধনাতেও ব্যবহৃত হয় গঙ্গা মাটি, গো-চনা এবং গো-মূত্র। কিন্তু গণিকালয়ের মাটি কেন ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, একজন পুরোহিত গণিকালয় থেকে মাটি সংগ্রহ করে, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে তা শুদ্ধ করেন এবং সেই মাটি দিয়েই তৈরি হয় দেবী প্রতিমা।
গঙ্গা মাটি এবং গণিকালয়ের মাটির ছাড়াও দেবীর মূর্তি তৈরির কাজে যে মাটি ব্যবহৃত হয়, তাতে রাজদরবারের মাটি, চৌমাথার মাটি, গজদন্ত মৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি থাকে। নারীশক্তিকে সম্মান জানিয়ে দুর্গা পুজোয় ব্যবহৃত হয় নবকন্যার ঘরের মাটি। এবং এই নবকন্যা হলেন (১) নর্তকী/ অভিনেত্রী, (২) কাপালিক, (৩) ধোপানী, (৪) নাপিতানি, (৫) ব্রাহ্মণী, (৬) শূদ্রাণী, (৭) গোয়ালিনী, (৮) মালিনী ও (৯) পতিতা।