
সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শিশুদের ছোটবেলার অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যতের আচরণে প্রতিফলিত হতে পারে। বাবা-মায়ের তাদের আচরণে সতর্ক থাকার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সন্তান লালন-পালনে জড়িত বাবা-মায়ের সর্বদা তাদের আচরণে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ব্যক্তিত্ব শিশুদের মধ্যে প্রতিফলিত হবে। বাবা-মাকে আদর্শ করেই শিশুরা বেড়ে ওঠে। শিশুদের পুষ্টিকর খাবার, শিক্ষা, পোশাক ইত্যাদি দেওয়াটাই কেবল বাবা-মায়ের দায়িত্ব নয়। এর বাইরে তাদের আচরণকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং পরিবর্তন করাও বাবা-মায়ের দায়িত্ব। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বাবা-মায়ের ভুলেও করা উচিত নয় এমন পাঁচটি ভুল এই পোস্টে দেখুন।
সব বাবা-মা এক রকম হয় না। প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের সন্তানদের লালন-পালন করেন। কঠোর বাবা-মা শিশুদের শৃঙ্খলা শেখানোর জন্য নিয়ম-কানুন পালন করান। নরম বাবা-মা শিশুদের তাদের নিজস্ব গতিতে সংশোধন করে এবং পথ দেখানোর চেষ্টা করেন। প্রতিটি বাবা-মা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তাদের জানা তথ্যের মাধ্যমে শিশুদের পথ দেখান। তবে বাবা-মায়ের কিছু আচরণ শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে তা এখানে জেনে নিন।
কঠোরতা এবং কোমলতা!
কঠোরতা এবং কোমলতা উভয়ই বাবা-মায়ের থাকা উচিত এমন গুণ। বাবা-মায়ের উভয়েরই শিশুদের প্রতি কঠোর হওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন যদি কঠোর আচরণ করেন, তবে অন্যজনকে শিশুদের আলিঙ্গনকারী কোমল বাবা-মা হতে হবে। বাবা-মায়ের এই আচরণ শিশুদের ভারসাম্য দেয়। বিশেষ করে এই বিষয়ে বাবা-মায়ের একটি দলের মতো কাজ করা উচিত। উভয়েরই একে অপরকে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, একই সাথে শিশুদের প্রতি কঠোর এবং কোমল হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব বুঝতে হবে। এভাবে বাবা-মায়ের মধ্যে বোঝাপড়া না করে উভয়ই কঠোর বা উভয়ই কোমল বাবা-মা হলে শিশুদের কিছু দায়িত্ব শেখানো সম্ভব হবে না।
বিচ্ছিন্ন আচরণ:
শিশুদের প্রশ্ন, তাদের চাহিদা ইত্যাদি বাবা-মা যদি ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেন বা পূরণ না করে এড়িয়ে যান, তবে তাদের বিচ্ছিন্নকারী বাবা-মা বলা হয়। এই বাবা-মা শিশুদের জন্য কিছুই করবেন না। বাবা-মায়ের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ শিশুদের একাকীত্ব এবং হতাশায় ফেলে দেয়।
হেলিকপ্টার লালন-পালন পদ্ধতি:
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং হলো সন্তান লালন-পালনের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বাবা-মা তাদের সন্তানদের উপর অতিরিক্ত নজর রাখেন। ফলস্বরূপ, তারা তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখেন। তারা তাদের জন্য অতিরিক্ত খরচ করেন, এমনকি ঋণও করেন, এবং তাদের পুরো জীবন শিশুদের ঘিরেই আবর্তিত হয়। এর ফলে শিশুরা ভালোভাবে বেড়ে উঠবে বলে বাবা-মা বিশ্বাস করেন। এটি সবসময় একই ফলাফল দেয় বলে বলা যায় না। শিশুদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে।
রক্ষণশীল বাবা-মা:
হেলিকপ্টার বাবা-মায়ের মতোই রক্ষণশীল বাবা-মাও তাদের সন্তানদের অজান্তেই ক্ষতি করেন। তাদের সন্তানরা যেন কোনও ভুল না করে সেজন্য সবকিছু দেখে দেখে করার ফলে তারা শিশুদের সব দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। শিশুদের সব কাজ বাবা-মা নিজেরাই করে দেওয়ার ফলে শিশুদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে।
শাস্তি দেওয়া:
শিশুরা ছোটখাটো ভুল করলেও তাদের সাথে সাথে শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা বাবা-মায়ের মধ্যে দেখা গেলে তা ভুল। এই ধরনের অভ্যাস শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। তাদের মধ্যে সবসময় একটা ভয় কাজ করে। এর ফলে তারা সৎ না হয়ে মিথ্যা বলতে পারে। আপনার কাছে সত্য বলার সাহস তাদের থাকবে না।
সন্তান লালন-পালনে আপনার কখনই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি করা উচিত নয় এবং শিশুদের বোঝার চেষ্টা করা উচিত, তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং তাদের সমর্থন করা উচিত। একজন ভালো বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য অবশ্যই এটি অনুসরণ করবেন।