
দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির হৃদয়ের উৎসব। পুজো আর প্রেমের সম্পর্ক যেন একে অপরের সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে জড়িয়ে— বন্ধুত্বের বাঁক মিশে যায় ভালোবাসায়। কিন্তু প্রেমে পড়ার পর যদি হয় প্রথম পুজো, তবে সেই আবেগ যেন আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। আলো ঝলমলে শহর, ভিড় ঠেলে প্যান্ডেল ঘোরা, ভোগের সুগন্ধে ভরে ওঠা দুপুর—সবই যেন আরও মিষ্টি লাগে যখন পাশে থাকে প্রিয়জন। আর প্রেমে পড়ার পর যদি হয় প্রথম পুজো, তবে সেই চারটে দিন হয়ে ওঠে একেবারে সিনেমার মতো। এই কয়েকটি দিনেই গড়ে ওঠে আজীবনের স্মৃতি, যেখানে ভিড়ের মাঝখানে আলতো স্পর্শ, অজান্তে হাসি আর নিঃশব্দ চোখাচোখি গোপন ভাষায় বলে দেয়—“আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।”
অষ্টমীর সকালে অঞ্জলির সময় সঙ্গীর পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি হাতে প্রার্থনা—এই অনুভূতি যে কতটা বিশেষ, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। প্রার্থনা করার সময় যেন মনে হবে, দেবীই আশীর্বাদ করছেন সম্পর্কের নতুন সূচনা। অঞ্জলির ফাঁকেই চুরি করা দুষ্টু-মিষ্টি চাহনি বা হাতের আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে যাওয়া—এসব ছোট্ট মুহূর্তই প্রেমকে গভীর করে তোলে। এরপর ভিড় ঠেলে বেরোনোর পথে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখা—এমন ছোট্ট মুহূর্তগুলোই হৃদয়ের গভীরে গেঁথে যায়। তারপর প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে হাঁটতে হাঁটতে, সঙ্গীর পছন্দমতো আলো কিংবা প্রতিমা দেখতে থেমে যাওয়া—এতে বোঝা যায় আপনি শুধু প্রেমিক নন, আপনি তার সঙ্গীও।
পথে কোথায় একসঙ্গে ভাগ করে খাওয়া ফুচকার বাটি বা ঠান্ডা পানীয়ের এক চুমুকও হয়ে ওঠে প্রেমের স্বাদে মিষ্টি যোগ। একসঙ্গে বেরোনোর সময় যদি দুজনেই মিলিয়ে জামাকাপড় পরা অনেকটা “আমরা একসঙ্গে”র মিষ্টি বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ভাবুন তো, একই রঙের পোশাকে তোলা ছবিগুলো কীভাবে গল্প বলবে! ছবি তুললেই বোঝা যাবে সেই মধুর ছাপ। আবার ভিড়ের মাঝে হঠাৎ একগুচ্ছ ফুল কিংবা ছোট্ট কোনও উপহার দিয়ে চমকে দিলে সঙ্গীর চোখের ঝিলিকেই বোঝা যাবে ভালোবাসার গভীরতা। আরও একটুখানি যত্ন—সঙ্গীকে রিসিভ করা কিংবা রাতের শেষে বাড়ি পৌঁছে দেওয়াও এক অঘোষিত প্রতিশ্রুতির মতো। এতে নিরাপত্তার সঙ্গে মিশে থাকে যত্নের নিদর্শন।আর খরচের প্রসঙ্গ? এ যুগের প্রেম সমানভাবে ভাগ করে নিতেই সবচেয়ে সুন্দর। একসঙ্গে খরচ করলে সম্পর্কের ভিত হয় আরও শক্ত, দুজনের সম্মানও অটুট থাকে। এ যুগের সম্পর্কে এটাই সবচেয়ে সুন্দর নিয়ম। প্যান্ডেল হপিংয়ে হাতে হাত রেখে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, কিংবা চুপিচুপি সঙ্গীর চুলে ফুল গুঁজে দেওয়া—এইসব অঙ্গভঙ্গিতেই মিশে থাকে মনের অজানা কথা। নবমীর রাতে আড্ডার ফাঁকে প্রিয় গানের সুরে মেতে ওঠা এসবই বলে দেয়, “আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।”
আর দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় মজা করতে করতে আলতো করে সঙ্গীর কপালে লাল রঙ ছুঁইয়ে দেওয়ার আনন্দ যেন এক গোপন প্রতিশ্রুতি—চিরকাল পাশে থাকার। সবশেষে বলা যায়, প্রেমে পড়ার পর প্রথম পুজো মানেই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অঞ্জলির পুষ্প, প্যান্ডেলের আলো, ভোগের স্বাদ, কিংবা সিঁদুরের আভা—সবকিছুতেই যেন মিশে থাকে ভালোবাসার রঙ। আর সেই রঙই পরিণত হয় আজীবনের সেরা স্মৃতিতে। তাই প্রেমে পড়ার পর প্রথম দুর্গাপুজো তাই শুধু উৎসব নয়, এটি সম্পর্ককে নতুন করে সাজিয়ে নেওয়ার সেরা সময়, যেখানে প্রতিটি হাসি, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি খুঁটিনাটি ভরে ওঠে ভালোবাসার অনন্ত রঙে। এটি দু’টি হৃদয়ের মিলনের পরশ। শহরের আলো, ঢাকের বাদ্যি আর ভিড়ের কোলাহলের মাঝেও সেই প্রেমের আবেগই সবচেয়ে বড় সম্পদ, যা সারাজীবন মনে থেকে যায়।