
গরমের ছুটি মানেই স্কুল বন্ধ, পড়াশোনার ব্যস্ততা নেই, পরীক্ষার ভয়ও নেই। কিন্তু এই লম্বা ছুটির আনন্দে আত্মহারা বাচ্চা সারাদিন ফোন নিয়ে ঘরে বসে থাকে অথবা দুষ্টুমি করে অতিষ্ট করে তুলবে বাড়ি। অনেক অভিভাবকরাই অভিযোগ করেন, সারাদিন ঘরে বসে আছে, টিভি আর মোবাইল ছাড়া কিছু করেনা। কারোর কথা শোনেনা। দুস্টুমি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ছুটিতে বাচ্চার দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের হাতে ফোন অথবা ল্যাপটপ তুলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শুধু চোখ নয় মস্তিষ্কেও কুপ্রভাব পড়ে। বরং এই ছুটির সময়কে কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা করলে এই সময়টাই শিশুদের শারীরিক এবং মানসিকর বিকাশের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। পড়াশোনা কম করলেও, তার সাথে এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ -এ মনোযোগ দিতে হবে বেশি।
১। স্কেটিং করা : গরমের দিনে চড়া রোদে মাঠে খেলাধুলো করতে গিয়ে শরীর খারাপ হতে পারে, তার চেয়ে বরং স্কেটিং শিখতে ভর্তি করে দিন বাচ্চাদের। চাকা লাগানো জুতো পরে শরীরের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাওয়া, শরীরচর্চার সাথে মনোবল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে এই খেলা। শহরে বিভিন্ন সংস্থা স্কেটিং শেখায়, কোথাও আবার বাতানুকূল বিশাল ঘরেও স্কেটিং শেখানোর ব্যবস্থা থাকে। কিছুটা সময় নতুন কিছু শেখা ও একই সাথে নতুন খেলায় ব্যস্ত থাকবে শিশুরা। এতে শরীরচর্চাও হবে।
২। সাঁতার কাটা : প্রত্যেকটি বাচ্চারই ছোটবেলা থেকে সাঁতার শিখে রাখা জরুরী। শুধু আনন্দ বা জলে ভীতি কাটানোই নয়, কোনো অকস্মাৎ দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতেও সাঁতার শিখে রাখা জরুরী। আপনার বাচ্চার সাতার না জানলে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাঁতার অত্যন্ত উপযোগী।
৩। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ : মনোবিদেরা সব সময়ই অভিভাবকদের সন্তানকে নিয়ে একসাথে সময় কাটানোর কথা বলেন। ভোরের দিকে অথবা বিকেলে বাচ্চার সঙ্গে কোথাও থেকে হেঁটে আসতে পারেন, বলা ভালো বেরিয়ে আসতে পারেন। বাচ্চাকে আমাদের আশেপাশের পরিবেশের গাছপালা, ফুল, পাখি, প্রজাপতি, মাছ ইত্যাদি চেনাতে নিয়ে যেতে পারেন। সুবিধা থাকলে নদী বা ঝিলের ধার, মাঠে বা খোলা পরিবেশে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে পারেন।
৪। সামার ক্যাম্প : বেশ কিছু স্কুল বা সংস্থা আছে যারা গরমের ছুটিতে বাচ্চাদের প্রকৃতির মাঝে কোনও কোনও জায়গায় ক্যাম্প করাতে নিয়ে যায় যথেষ্ট নিরাপত্তার সাথেই। সেখানে খেলা, হাতের কাজ শেখা, পরিস্থিতির মোকাবিলা করা, প্রকৃতিপাঠ দেওয়া, সমবয়সিদের সঙ্গে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করানো হয় -এই ধরনের কাজ শেখানো হয়। এইসব ক্যাম্প গুলিতে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন।
৫। রান্নাবান্না : আপনার বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখার আরও একটি উপায় হল তাকে দায়িত্ব দেওয়া। অর্থাৎ নিজের দায়িত্বটুকু নিজে নেওয়া। তাদের নিজেদের পছন্দের খাবার তৈরি করা তবে অবশ্যই আপনার খেয়ালে নিরাপত্তায়। সেরম হলে বাচ্চাকে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করাতে হবে না, তবে চামচ দিয়ে নিজে পাউরুটিতে মাখন মাখানো, স্যালাড, আলুকাবলি, বাটার টোস্ট, বা স্যান্ডউইচের উপকরণ হাতের কাছে গুছিয়ে দিলে কীভাবে খাবারটি তৈরি করতে হবে তা হাতে ধরে শেখাতে পারেন এই ছুটিতে। এতে কিছুটা সময় ব্যস্ততায় আপনার সঙ্গে সময় কাটবে তার, কিছু কাজও শিখবে।
৬। ছবি আঁকা : অনেক খুদেই রং করতে ভালবাসে। তারা আঁকতেও চায়। ইচ্ছেমতো আঁকতে দিলে তাদের মনের ভাবও প্রকাশ পায়। আঁকার খাতা, পেনসিল ও রং দিয়ে ইচ্ছেমতো আঁকতে উৎসাহী করুন প্রথম দিনেই হয়তো খুব ভালো আঁকবে না, হয়তো শুধু হিজিবিজি রং করবে, কিন্তু তাতেও স্ক্রিন টাইম কমবে, বাচ্চা ব্যস্ত থাকবে।
৭। হাতের কাজ : বাচ্চাকে মুখে বলে দিলেই একা একা সমস্ত কিছু শিখে যাবে ভাবাটা ভুল। ছুটির দিনে অভিভাবকরাও একটু সময় বার করে বাচ্চার সঙ্গে ছোটখাটো হাতের কাজ করতে পারেন। ক্রাফটের জিনিসপত্র কিনে বা ওয়েস্ট মেটিরিয়াল দিয়ে উদ্ভাবনী জিনিসপত্র বানাতেই পারেন। কাগজ দিয়ে পাখি, ব্যাঙ মাছ বানানো, মাটি, বালি, বোতল, দড়ি, কাপড় ইত্যাদি বাড়ির অতিরিক্ত জিনিস দিয়ে ঘর সাজানোর রকমারি জিনিস বানানো যায়। চাইলে সমাজমাধ্যম দেখেও সহজেই অনেক কিছু বানানোর কৌশল শিখে নিতে পারেন।