লুধিয়ানার ১৩ বছরের নম্যা অবাক করে দিয়েছে সবাইকে
তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ মাইক্রোসফট সিইও
ইউনেস্কো ক্লাবস ২০১৮-২০১৯ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইউথ মাল্টিমিডিয়া কম্পিটিশন জিতেছিল নম্যা
এখন সমগ্র বিশ্বের শিক্ষকদের সে শেখায় তার তৈরি শিক্ষামূলক ভিডিওগেম মাইনক্রাফট
গত সপ্তাহে 'মাইক্রোসফট'স ফিউচার ডিকোডেড' শীর্ষক প্রযুক্তি বিষয়ক সমাবেশে মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেল্লা তাঁর বক্তৃতা শেষ করলেন নম্যা যোশীর প্রশংসা করে। নম্যা যোশী, ১৩ বছরের একটা ছোটো মেয়ে, যার বাড়ি লুধিয়ানায়। নম্যা যোশীর এক বছর আগেও সংবাদ শিরোনামে এসেছিল তার কাজের জন্য। তার তৈরি ব্লক বিল্ডিং গেম মাইনক্রাফট কীভাবে অনেক স্কুল ছাত্রীকেই সহায়তা করেছিল ইতিহাস এবং অন্য বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে তা নিয়ে আলোচিত হয়েছিল তার নাম। নম্যা জিতে নিয়েছিল ইউনেস্কো ক্লাবস ২০১৮-২০১৯ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইউথ মাল্টিমিডিয়া কম্পিটিশন। যোশী এখানেই থেমে নেই, প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বকে বদলানোর লক্ষ্যে সে লিপ্ত রয়েছে।
সেদিন সামিটে নাদেল্লা বলেছিলেন নম্যা যোশীর মতো আরও অনেক খুদে উদ্ভাবকদের সঙ্গে আলাপ করতে চান। নম্যা সারা বিশ্বের শিক্ষিকাদের শিখিয়ে আসছে মাইনক্রাফট। ওর মতো ছোটোদের উৎসাহ, প্যাশন এবং অকপটতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন মাইক্রোসফটের সিইও। এখন যেকোনও মানুষ, যার তেমন প্রশিক্ষন নেই সেও প্রযুক্তিকে শিখতে ও তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কিছু কোড কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন অ্যাপ তৈরি করা কিংবা গেম তৈরি করে তা দিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখানোর ইচ্ছে নিয়েই বড়ো হচ্ছে এই নতুন প্রজন্ম। ইউ টিউব ভিডিও ও আরও নানা সাইটের অনলাইন ভিডিও দেখে দেখে শিখে নিচ্ছে ছোটোরা আর সারা বিশ্বের প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে নিমেষেই।
নম্যা যে প্রোজেক্টটা তৈরি করেছিল তার নাম "ম্যাজিকাল ওয়ার্ল্ড অফ বুক্স লিডিং টু ২০৩০" যেখানে সে হ্যারি পটারের জগৎ ও মিশরীয় সভ্যতার উপাদান মিশিয়ে এমন নিদর্শন তৈরি করেছিল যে ১০-১৪ বছরের গ্রুপে সেই সেরার সম্মান লাভ করে।
এছাড়াও নম্যা রসায়ন, সাইবার সিকিউরিটি, পরিবেশ বিদ্যার জন্য ইচ ড্রপ কাউন্টস- জল সংরক্ষণ, প্রাণিবিদ্যার জন্য শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ের ওপর মাইনক্রাফট ওয়ার্লডস তৈরি করেছে। আগে মানুষ কীভাবে বাঁচত এবং এখন মানুষ কেমন আছে এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার উপায় নিয়েও সে তৈরি করেছে মাইনক্রাফট ওয়ার্ল্ড। ফরাসি ভাষার অধ্যায় নিয়েও সে তৈরি করেছে শিক্ষামূলক গেম। তার ইচ্ছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য এবং মোঘল সাম্রাজ্য নিয়ে নতুন গেম তৈরি করার।
নম্যা পড়তে ভীষণ ভালোবাসে। হ্যারি পটার সিরিজ তার সবথেকে প্রিয়। মাইনক্রাফট ওয়ার্ল্ড ছাড়াও তার আর একটি ইচ্ছে হয় লেখক হতে।এখন সে পড়ছে পার্সি জ্যাকসনের অ্যাাডভেঞ্চার। তার ইচ্ছেপূরণের লক্ষ্যে সে থামতে জানে না তাই 'দি সিক্রেট অফ দি আইল্যান্ড' শীর্ষক একটি বইয়ের প্রথম দুটি অধ্যায় সে ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছে। বোঝাই যাচ্ছে ইতিহাস, আবিষ্কার, রহস্য এসবে তার খুব আগ্রহ।
নম্যা নিজের স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সংশোধন করে ভারি মজা পায়। তবে শুধু নিজের স্কুল নয় সে সম্প্রতি গেস্ট স্পিকার হয়ে গিয়েছিল ফিনল্যান্ডে, 'কেইওএস ২০১৯' ইভেন্টে। ওখানে একটা ওয়ার্কশপে ওখানকার শিক্ষকদের সে শিখিয়ে এসেছে মাইনক্রাফট। নিজের ইউটিউওব চ্যানেল ও স্কাইপের মাধ্যমে নম্যা প্রশিক্ষণ দেয়। চিন্তা আদান প্রদান করলেই তার ফলশ্রুতি গভীর, শিক্ষামূলক ও সুন্দর হয় বলেই সে মনে করে।
ইউনেস্কো-এর আমন্ত্রণে এই বছরের শেষে সে যাবে বিল্ডারস অফ দি ইউনিভার্স ক্যাম্প যা অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকার মেরিল্যান্ডের হুড কলেজে।
তার এই জয়যাত্রার শুরু কিন্তু মায়ের ল্যাপ্টপে খেলতে খেলতে। মাইনক্রাফট এডুকেশন এডিশন খেলতে খেলতেই সে আবিষ্কার করতে থাকে একের পর এক জগৎ ও নতুন নতুন চিন্তাক্ষেত্র। নম্যার মা মণিকা জোশী তার স্কুলেরই আইটি প্রধান। প্রথমে বন্ধু, তারপর মা ও অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে তার চিন্তাভাবনা সে আদানপ্রদান করতে থাকে এবং সে সফল হয় তার উদ্ভাবনায়। তারপরের গল্প তো এখন জানা।