মাসির বাড়ি থেকে ফিরেও বাইরে ৩ দিন, পুরীর রথযাত্রার চমকদার তথ্য

রথ যাত্রা মানে পুরীর বিখ্যাত রথ যাত্রা 
 জগন্নাথের প্রধান উত্‍‌সব হল রথযাত্রা
 পুরীর এই রথযাত্রার মহিমা উল্টো রথের পরেও থাকে অব্যাহত
 মাসির বাড়ি থেকে ফেরার পরও  জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম প্রবেশ করেন না মূল মন্দিরে
 তিন দিন এরকম ভাবেই বাইরে থাকে রথ-সহ বিগ্রহ

debojyoti AN | Published : Jul 12, 2019 5:17 AM IST

পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন- 

‘রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধূমধাম
ভক্তেরা লুটায় পথে করিছে প্রণাম!' — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আর এই রথ যাত্রার কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা-র কথা। জগন্নাথের প্রধান উত্‍‌সব হল রথযাত্রা। লোককথা অনুসারে বলা হয়— আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয়। জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যান (সেটি জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত) এবং সাত দিন পরে সেখান থেকে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত । এছাড়াও রথযাত্রা পতিতপাবনযাত্রা, নবযাত্রা, গুন্ডিচাযাত্রা নামেও পরিচিত।  
   
রথযাত্রায় তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি আলাদা রথ। জগন্নাথের রথের নাম ‘নন্দীঘোষ’। নন্দীঘোষ-এর উচ্চতা ৪৫ ফুট। এতে থাকে ১৮টি চাকা। পুরো রথটি লাল-হলুদ কাপড়ে মোড়া হয়। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ।সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথের দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়িতে বেঁধে আলাদা আলাদা ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। আবার সাত দিন বাদে তিনটি বিগ্রহ জগন্নাথ দেবের মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। 

 পুরীর এই রথযাত্রার মহিমা উল্টো রথের পরেও থাকে অব্যাহত।মাসির বাড়ি থেকে ফেরার পরও  জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম প্রবেশ করেন না মূল মন্দিরে। তিন দিন এরকম ভাবেই বাইরে থাকে রথ-সহ বিগ্রহ। কিন্ত এখন প্রশ্ন হল বাইরে কেন বিগ্রহ - কারণ এই তিন দিন পালিত হয় কিছু অনুষ্ঠান। যার মূল কেন্দ্রবিন্দু-তে থাকেন জগন্নাথদেব। 
বছরে এক বার মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন জগন্নাথ, কিন্ত ফিরে আসার পর রীতিমত ধূমধাম করে সমারোহের সঙ্গে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম কে মন্দিরে রত্নবেদি-তে তোলা হয়। আসুন জেনে নিই ঠিক কী কী পালিত হয় উল্টো রথের পরে? যা দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন এই মন্দির লাগোয়া অঞ্চলে।
 
সোনাবেশ- এই দিন প্রভু জগন্নাথ সহ সুভদ্রা-বলরাম ও সেজে ওঠেন নানা সোনার গয়নার সাজে। সোনার বেশে সুসজ্জিত হয়ে ওঠেন সকলে। পুনর্যাত্রার পর একাদশী তিথি তে পালিত হয় এই সোনাবেশ। 

অধরপনা- এই উৎসব পালিত হয় দ্বাদশীর সন্ধ্যায়। এই রীতি অনুযায়ী জগন্নাথদেব-কে শরবত খাওয়ানোর পালা চলে। এক বিশেষ পাণীয় নিবেদন করা হয় জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে।    

রসগোল্লা উৎসব-  ত্রয়োদশীর দিন জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় কয়েকশ হাড়ি রসগোল্লা, ভোগ হিসেবে। এ যেন বাড়ীতে অতিথি আসার পর এক মিস্টিমুখের পর্ব,তার-ই প্রতিচ্ছবি। সর্বশেষে নীলাদ্রিবিজয় উৎসবের মাধ্যমে শেষ হয় এই সমস্ত রীতি -রেওয়াজ। এভাবেই বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের পর জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম কে মন্দিরে মূল রত্নবেদি-তে তোলা হয়। এই সমস্ত অনুষ্ঠান ঘিরেই প্রতি বছর উল্টো রথের পরও দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় জমান এই উৎসব দেখার জন্য। 

Share this article
click me!