২ ডিসেম্বর মনে পড়ে যায় ১৯৮৪ সালের সেই ভয়াবহ ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার কথা। বায়ু দূষণের ফলে ভোপালে প্রান হারিয়েছিল ৫ লাখের বেশি মানুষ।
ক্যালেন্ডারের ২ ডিসেম্বর(2 December) দিনটিকে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস(National Pollution Control Day) হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়ে থাকে। একটু পিছন ফিরে দেখলে মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার(Bhopal Gas Tragedy) কথা যা কেড়ে নিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের প্রান। সালটা ছিল ১৯৮৪। আজও এই দিনটিতে স্মৃতির স্মরণীতে তাজা হয়ে ওঠে সেই বিভীষিকাময় ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই মনে করা হয় জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস(National Pollution Control Day) একটি অনুস্মারক যে দূষণ কীভাবে মানুষের জীবনকে ধ্বংস করতে পারে। তাই সমাজ এবং সরকারকে দূষণ রোধে(Pollution control) তাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টাটুকু অবশ্যই করা উচিত। ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআইএল) কীটনাশক প্ল্যান্টে একটি গ্যাস লিকের ঘটনায় বহু মানুষের প্রান সংশয় হয়ে উঠেছিল। শুধু তাই নয়, এই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল ভোপালের হাজার হাজার মানুষের প্রান। উল্লেখ্য, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শিল্প বিপর্যয়গুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। ৫ লাখের বেশি মানুষ বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট (MIC) গ্যাসের সংস্পর্শে চলে এসেছিল। যার ফলস্বরূপ সেই বছর ভোপালে দেখা গিয়েছিল মৃত্যু মিছিল।
২০২১ সালে বায়ু দূষণের সমস্যাটিও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এটিও ব্যাপক হারে ভারতের বড় অংশকে প্রভাবিত করছে। ২ ডিসেম্বর, বুধবার সকাল পর্যন্ত ভারতের ৫ টি সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এক নজরে দেখে নিন বায়ু দূষণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে কোন কোন এলাকা।
সাঁকড়াইল, পশ্চিমবঙ্গ - ৩৯৮
জুনপুর, উত্তরপ্রদেশ - ৩৬৯
পিতমপুরা মনিটারিং স্টেশন, দিল্লি-৩৬০
পাটনা, বিহার-৩৫১
দাঁড়ভাঙা, বিহার-৩৩৬
প্রতিবছরই শীতকালে বায়ু দূষণের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর ভারত। বিশেষ করে, এনসিআরের আশেপাশের এলাকা এবং পূর্ব দিকে, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বায়ু দূষণের পরিমান বেড়ে যায় অনেকাংশে। উত্তর ভারতে দূষণের জন্য দায়ী করা হয় অনেকগুলি কারনকে। তার মধ্যে প্রথম কারনটি হল খড় পোড়ানো। এটি কৃষি জমির আশেপাশের এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করে। অক্টোবরের শেষের দিকে, কৃষকরা তাদের খরিফ ফসল কাটা শুরু করে এবং তাদের খড় পুড়িয়ে দেয়। সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এই কাজটি করা হয় যার ফলস্বরূপ বেড়ে যায় বায়ু দূষণের মাত্রা। ধুলো দূষণ অন্যতম আরেকটি প্রধান কারন। এই ফ্যাক্টরটি প্রধানত মেট্রোপলিটন শহরগুলিকে প্রভাবিত করে। যেখানে প্রতিনিয়ত চলে নির্মাণ কার্য। PM ২.৫ এবং PM ১০ দূষণকারীরা নির্মাণের ধূলিকণার উপর বসতি স্থাপন করে এবং ধোঁয়া আকাশে ওঠার পরিবর্তে মাটির কাছাকাছি উচ্চতায় ধরা পড়ে।
আগুনের ব্য়বাহরেও দূষিত হয় বায়ু। শীতকালে, অনেকেই কয়লা, কাঠ, আবর্জনা ইত্যাদি ব্যবহার করে আগুন জ্বালায়৷ এটি থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয় তা বায়ুকে দূষিত করে৷ শীতকালে অনেকেই আগুণের তাপে নিজেকে সেঁকে নেয়। এই বিষয়টিকে এড়াতে দিল্লি সরকার সম্প্রতি বৈদ্যুতিক হিটার বিতরণের কথা ঘোষণা করেছে। যানবাহন এবং শিল্প দূষণের ফলে বায়ু দূষণের বিষয়টি বহুকালের একটি সমস্যা। এটি শুধুমাত্র শীতকালে হাইলাইট করা হয় যখন শহরগুলিতে AQI বৃদ্ধি পায়। দিল্লি বিগত বছরগুলিতে এই সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতি বছরই, দূষণের এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লির আশেপাশে কয়েক দিনের জন্য শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকে।
Health Tips- সাবধান, ক্রমশ বায়ুতে বাড়ছে দূষণের মাত্রা, সুস্থ থাকতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি
বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই ক্ষতিকর। স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ বায়ু দূষণের কারণেই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য ধূমপানের জন্যও দূষিত হয় বায়ু। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৯ সালে ভারতে বায়ু দূষণের সাথে সম্পর্কিত কোনও না বিষয়েই প্রায় ১৬.৭ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বায়ু দূষণ এড়াতে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থার তালিকার উল্লেখ করা হল।
১. পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা।
২.গাড়ি যখন ব্যবহার হচ্ছে না তখন লাইট বন্ধ করা।
৩. পণ্য পুনর্ব্যবহার এবং পুনরায় ব্যবহার করা।
৪. প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করা।
৫. বনের আগুন এবং ধূমপান হ্রাস করা।
৬. এসির পরিবর্তে ফ্যান ব্যবহার করা।
৭. চিমনির পরিবর্তে ফিল্টার ব্যবহার করা।
৮. পটকা না ফাটানো
৯. ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত পণ্যের ব্যবহার এড়িয়ে চলা