সারা বিশ্বেই বিভিন্ন দলের ফুটবলারদের জন্য পাগল তাঁদের সমর্থকরা। একইভাবে ফুটবলাররাও সমর্থকদের কথা ভাবেন। কারণ, সমর্থকরা না থাকলে তো ফুটবলারদের কদরই থাকে না।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় হেরে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সাগ্নিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুটবলের ভাষায় ইনজুরি টাইম চলছে। হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হয়তো জিততে পারবেন না এই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। কিন্তু একটা কথা শুনে তাঁর মন ভালো হয়ে যেতে পারে। তাঁর জন্য সুদূর সিরিয়া থেকে বিশেষ বার্তা দিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার মাহমুদ আল-আমনা। সেই আমনা, ব্রেন টিউমার অপারেশনের ২ দিনের মাথায় যাঁর ফ্রি-কিক থেকে করা গোল দেখে 'জয় ইস্টবেঙ্গল' বলে চিৎকার করে উঠে মাথার শিরার একটি সেলাই ছিঁড়ে ফেলেছিলেন সাগ্নিক।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলার কাছ থেকেই সাগ্নিকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পান আমনা। তিনি এটাও জানতে পারেন, তাঁর গোল দেখে লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে শারীরিক ক্ষতিও করেছেন এই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছেন। সমর্থকদের আবেগ, ভালোবাসার কথা জানেন আমনা। ইস্টবেঙ্গলে খেলার সুবাদে এখানকার সমর্থকদের আবেগ-উত্তেজনার পরিচয়ও পেয়েছেন সিরিয়ার এই ফুটবলার। একজন তরুণ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে দুঃখ পেয়েছেন আমনা। সাগ্নিকের জন্য তাঁর বার্তা, ‘ওর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে আমি খুব দুঃখ পেলাম। আমার আশা, ও মৃত্যুের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে এবং দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে। ঈশ্বর অলৌকিক কাণ্ড ঘটান।’
মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪-তম প্রতিষ্ঠা দিবসে স্বপন বল মেমোরিয়াল 'সমর্থক’ সম্মান দেওয়া হয় সাগ্নিক ও দৃষ্টিহীন প্রদীপ দাসকে। সাগ্নিকের বাবা সম্মান গ্রহণ করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার বলার কিছু নেই। আমার বলার ভাষাও নেই। আমার ছেলেটা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। ওর ২ বার ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়েছে। ও এখন ক্যান্সারের থার্ড স্টেজে চলে গিয়েছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বলতে ও অজ্ঞান। ওর যখন প্রথমবার অপারেশন হয়, তার ২ দিন পর ফ্রি-কিক থেকে আল-আমনা গোল করেছিল। সেটা দেখে আমার ছেলে জয় ইস্টবেঙ্গল বলে চিৎকার করে মাথার শিরার একটা সেলাই ছিঁড়ে ফেলে। সে কথা ও কোনওদিন বলেনি। ও ইস্টবেঙ্গলের পতাকাটাকে বুকে আঁকড়ে ধরে আছে। ও যতদিন বাঁচবে, অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকতে চায়। ও জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আপনারা ওর হয়ে প্রার্থনা করুন। এছাড়া আর বলার কিছু নেই।'
সবারই প্রার্থনা, মারণ রোগের বিরুদ্ধে শেষমুহূর্তে গোল করে জীবনের ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনুন সাগ্নিক। তিনি লাল-হলুদ গ্যালারিতে ফিরুন।
আরও পড়ুন-
একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত, অপরজন দৃষ্টিহীন, সমর্থকদের বিশেষ সম্মান ইস্টবেঙ্গলের
'গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে,' লাল-হলুদে স্বামীজি স্মরণ
East Bengal Foundation Day : ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে চাঁদের হাট