সংক্ষিপ্ত

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সর্বভারতীয় ট্রফি নেই ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনও স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে লাল-হলুদ। কারণ, সমর্থকরা ক্লাবের পাশে আছেন।

ছোটবেলা থেকে বাঘাদার কথা শুনেছেন বর্তমান প্রজন্মের ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। সাতের দশকে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিটি ম্যাচে গ্যালারিতে থাকতেন বাঘাদা। একটি ম্যাচে প্রথমার্ধ পর্যন্ত তিনি আসেননি। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিরতির সময় হন্তদন্ত হয়ে গ্যালারিতে পৌঁছন বাঘাদা। সবাই জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী হল? আপনার এত দেরি!’ বাঘাদা জবাব দেন, 'ছোট ছেলেটা কাল রাতে মারা গিয়েছে। দাহ করে শ্মশান থেকে সোজা মাঠে আসছি।' সে কথা শুনে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যান। ইস্টবেঙ্গলের প্রতি এই ভালোবাসা বিরল না হলেও, এরকম নজির আর নেই। একবার অর্থের অভাবে ইস্টবেঙ্গলের দল গড়া নিয়ম সমস্যা হচ্ছিল। তখন বাড়ির দলিল নিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে হাজির হন এক সমর্থক। লাল-হলুদ জনতা এতদিন ক্লাবকে শুধুই ভালোবেসে এসেছে, বিনিময়ে ক্লাব থেকে সেভাবে কোনও সম্মান পায়নি। এবারের প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে সমর্থকদের সম্মান জানানো শুরু করল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। এই উদ্যোগে খুশি লাল-হলুদ সদস্য-সমর্থকরা। তাঁরা ক্লাবকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।

মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪-তম প্রতিষ্ঠা দিবসে স্বপন বল মেমোরিয়াল 'সমর্থক’ সম্মান দেওয়া হল সাগ্নিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদীপ দাসকে। তরুণ ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সাগ্নিক ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁর বাবা সম্মান গ্রহণ করতে এসেছিলেন। দৃষ্টিহীন প্রদীপ ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে পান না। শুধু গ্যালারির চিৎকার শোনার জন্য স্টেডিয়ামে যান। ইস্টবেঙ্গল নামটাই তাঁকে স্টেডিয়ামে টেনে নিয়ে যায়। এই ২ সমর্থককে কুর্ণিশ জানাল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। বাঘাদার মতোই লাল-হলুদের ইতিহাসে অমর হয়ে যেতে পারেন সাগ্নিক ও প্রদীপ।

সাগ্নিকের বাবা বললেন, 'আমার বলার কিছু নেই। আমার বলার ভাষাও নেই। আমার ছেলেটা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। ওর ২ বার ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়েছে। ও এখন ক্যান্সারের থার্ড স্টেজে চলে গিয়েছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বলতে ও অজ্ঞান। ওর যখন প্রথমবার অপারেশন হয়, তার ২ দিন পর ফ্রি-কিক থেকে আল-আমনা গোল করেছিল। সেটা দেখে আমার ছেলে জয় ইস্টবেঙ্গল বলে চিৎকার করে মাথার শিরার একটা সেলাই ছিঁড়ে ফেলে। সে কথা ও কোনওদিন বলেনি। ও ইস্টবেঙ্গলের পতাকাটাকে বুকে আঁকড়ে ধরে আছে। ও যতদিন বাঁচবে, অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকতে চায়। ও জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আপনারা ওর হয়ে প্রার্থনা করুন। এছাড়া আর বলার কিছু নেই।'

আরও পড়ুন-

ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে রাজনীতির অনুপ্রবেশ, তাল কাটলেন অরূপ বিশ্বাস

East Bengal Foundation Day : ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪-তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন বাংলাদেশের শিল্পী মেহরিনের

ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে শুভেচ্ছা ইনভেস্টরদের, দিকে দিকে নানা অনুষ্ঠান সমর্থকদের