বৃহস্পতিবার কাকভোরেই এল দুঃসংবাদ। প্রয়াত ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এই ফুটবলার ছিলেন আপাদমস্তক ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী।
১৯৬২ থেকে ১৯৬৫, পরপর ৪ বার কলকাতা লিগ জিতেছে মোহনবাগান। গড়ের মাঠে তখন সবুজ-মেরুনেরই দাপট। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৬ সালে লাল-হলুদের অধিনায়ক হলেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার অবশ্য তাঁর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার কথাই নয়। সদ্য চাকরি পেয়েছেন। ফলে অফিস দলের হয়েই খেলার কথা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন যে ছোটবেলা থেকে। সেই স্বপ্নপূরণের সুযোগ হাতের মুঠোয় এসেও চলে যাবে! দরবার করলেন জ্যোতিষ গুহর কাছে। অফিসের বড়কর্তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জ্যোতিষ গুহকে নিয়ে। আলোচনার পর ঠিক হল, পরের মরসুম থেকে অফিস দলের হয়ে খেলবেন। নতুন উদ্যমে লাল-হলুদ জার্সি পরে মাঠে লড়াই শুরু করলেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চ্যালেঞ্জ, মোহনবাগানকে পরপর ৫ বার লিগ জিততে দেবেন না। সেটা করেও দেখালেন। লিগ চ্যাম্পিয়ন হল ইস্টবেঙ্গলই। শুধু লিগই নয়, তাঁর অধিনায়কত্ব আইএফএ শিল্ডও জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল।
চাকরির জন্য ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে হলেও, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ছিলেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৫ সালে তাঁকে ক্লাবের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছিল। সেই চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ভোরে প্রয়াত হলেন। এদিন ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁর ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেননি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। একজন আদ্যোপান্ত ইস্টবেঙ্গলপ্রেমীর চিরবিদায়ে লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে শোকের ছায়া।
চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বেই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথমবার খেলেন কিংবদন্তি মহম্মদ হাবিব। প্রথম ম্যাচে তিনি ভালো খেলতে পারছিলেন না। সেই সময় নিয়ম ছিল, কোনও ফুটবলারকে পরিবর্তন করতে হলে, প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই করতে হবে। হাবিব ভালো খেলতে পারছেন না দেখে তাঁকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জ্যোতিষ গুহ। কিন্তু জীবনে একবারই তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছুটে গিয়ে হাবিবকে মাঠ থেকে বেরোতে বাধা দেন। জ্যোতিষ গুহকে বলেন, হাবিবকে তুলে নেওয়া যাবে না। সেদিন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় যদি জ্যোতিষ গুহর বিরোধিতা না করতেন তাহলে হয়তো হারিয়ে যেতেন হাবিব। কিন্তু সেটা হতে দেননি ইস্টবেঙ্গলের তৎকালীন অধিনায়ক।
গত কয়েক বছর ধরে সাফল্য পাচ্ছে না ইস্টবেঙ্গল। প্রিয় ক্লাবের এই হাল দেখে কষ্ট পেতেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন ঘুরে দাঁড়াক ইস্টবেঙ্গল। ভবিষ্যতে হয়তো আবার সাফল্য পাবে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেটা দেখে যেতে পারলেন না চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-
লাল-হলুদে ফিরলেন খাবরা, সঙ্গী মন্দার রাও দেশাই, এডুইন সিডনি বনসপল
Father's Day 2023: 'ভগবানকে দেখিনি, শঙ্কর বাবাকে দেখেছি,' আবেগপ্রবণ অলোক মুখোপাধ্যায়
Indian Football: লেবাননের বিরুদ্ধে ২-০ জয়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত