সংক্ষিপ্ত

কলকাতা ফুটবলের সোনালি দিনের অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র শঙ্কর পিল্লাই। ইস্টবেঙ্গলে যিনি শঙ্কর মালি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ফুটবলারদের কাছে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন শঙ্কর বাবা।

কোচ, সহকারী কোচ, গোলকিপার কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, কিট ম্যানেজার, এসব শব্দ কলকাতা ফুটবলে খুব পুরনো নয়। আই লিগ বা আইএসএল-এর যুগে হয়তো এসব সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু সাত বা আটের দশকে এই শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত ছিল না গড়ের মাঠ। একজনই কোচ থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে কর্মকতারাই দলের যাবতীয় বিষয়ে নজর রাখতেন। ইস্টবেঙ্গলে অবশ্য পরিবেশ একটু অন্যরকম ছিল। কোচের চেয়েও ফুটবলারদের কাছের মানুষ ছিলেন শঙ্কর পিল্লাই। সমর্থকদের কাছে তিনি শঙ্কর মালি নামে পরিচিত হলেও, ফুটবলারদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'শঙ্কর বাবা'। ফুটবলাররা যেমন তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন, তেমনই ভালোও বাসতেন। শঙ্কর মালিও ফুটবলারদের বুক দিয়ে আগলে রাখতেন। জন্মসূত্রে বাঙালি না হওয়া সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল অন্তপ্রাণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দলের সাফল্যে যেমন তাঁর মুখে হাসি দেখা যেত, তেমনই ব্যর্থতায় আত্মীয় বিয়োগের মতো শোকাহত হয়ে পড়তেন তিনি।

রবিবার পিতৃ দিবসে প্রিয় শঙ্কর বাবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না প্রাক্তন ফুটবলার অলোক মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, 'আমি ভগবানকে দেখিনি, শঙ্কর বাবাকে দেখেছি। সকালেই আমরা প্রাক্তন ফুটবলাররা বিবেকানন্দ পার্কে শঙ্কর বাবাকে নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এরকম মানুষ আর আসবে না। ওঁকে নিয়ে কথা শুরু করলে শেষ করা যাবে না। সারারাত ধরে কথা বলে যেতে পারি।'

কোথায় আলাপ? অলোকবাবু জানালেন, '১৯৮২ সালে কলকাতায় নেহরু কাপের সময় আমরা হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে ছিলাম। তখন উনি আমাদের বুট দিতে এসেছিলেন। সেই সময় আলাপ হয়। উনি আমাকে বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলে খেললে তবেই বুট দেব। তখন আমি মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলতাম। শঙ্কর বাবা চাইছিলেন আমি ইস্টবেঙ্গলে খেলি। এরপর যখন আমি ইস্টবেঙ্গলে সই করি, তখন সবসময় ওঁর সাহায্য পেয়েছি। আমাদের কী দরকার, সেটা ওঁকে কখনও বলতে হত না। জার্সি, প্যান্ট, বুট, সব উনি গুছিয়ে রেখে দিতেন। কোন মাঠে কী বুট পরে খেলব, সেটা উনিই বলে দিতেন। কার প্যান্ট ছিঁড়ে গিয়েছে, কার বুটের স্টাড উঠে গিয়েছে, সব ওঁর নজরে থাকত। ময়দান মার্কেট থেকে বুট সারিয়ে এনে দিতেন, প্যান্ট সেলাই করিয়ে আনতেন।'

অলোকবাবু আরও জানালেন, ‘শুধু আমাদের সঙ্গেই নয়, সব ফুটবলারের সঙ্গেই শঙ্কর বাবার একইরকম সম্পর্ক ছিল। ১৯৮৫ সালে আমরা ফেডারেশন কাপ খেলতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন আমেদদা (খান)। উনি জোর করে শঙ্কর বাবাকে ওঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন।সবাই ওঁকে ভালোবাসতেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সবার আগে শঙ্কর বাবার ছবি রাখা উচিত।’

আরও পড়ুন-

জেভিয়ের সিভেরিও, সাউল ক্রেসপোর সঙ্গে চুক্তি, শক্তিশালী হচ্ছে লাল-হলুদের স্প্যানিশ ব্রিগেড

কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি থেকে ১ বছরের লোনে ইস্টবেঙ্গলে ডিফেন্ডার নিশু কুমার

কলম্বিয়ায় কার্লেস পুওল, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সঙ্গে খেললেন ফুটবল