নির্বাচন পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো পুরুলিয়ার জেলাশাসক হয়ে ফিরে এলেন রাহুল মজুমদার। অন্যদিকে, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার হয়ে এলেন এস সেলভা মুরুগান।
ভোটের আগে পুরুলিয়া জেলা থেকে বদলি করা হয়েছিল জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে। আবার ভোট মিটে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেই জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে পুরনো জায়গাতেই পুনর্বহাল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের বিধান সভা নির্বাচনের মাস ছয়েক আগেই পুরুলিয়ার জেলা শাসক রাহুল মজুমদারকে বদলি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নবান্নে। সেই জায়গায় জেলা শাসক হয়ে এসেছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
অন্যদিকে ভোটের মাস দেড়েক আগে পুলিশ সুপার এস সেলভা মুরুগানকে বদলি করে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল বিশ্বজিৎ মাহাতোকে।
৫ই মে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নবান্নের দায়িত্ব নিয়েই রাজ্য জুড়ে প্রশাসনিক পদে রদবদল করতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রদবদলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পুরুলিয়া।
পুরুলিয়ার বর্তমান জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতোকে বদলি করে দেওয়া হল। সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় রাহুল মজুমদার এবং এবং এস সেলভা মুরুগানকে ।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। পুরুলিয়ায় গেরুয়া ঝড় থেকেছে অব্যাহত। সেই সময় পুরুলিয়ায় জেলাশাসক পদে ছিলেন অলকেশ প্রসাদ রায়, অন্যদিকে পুলিশ সুপার পদে ছিলেন জয় বিশ্বাস।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক ফলাফল এবং বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে জেলা। বদলি করে দেওয়া হয় জেলাশাসক অলকেশ প্রসাদ রায় এবং পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাসকে। জেলার পুলিশি ব্যবস্থার হাল ধরতে সেই সময় পুলিশ সুপার পদে নিয়ে আসা হয় দুঁদে গোয়েন্দা অফিসার আকাশ মাগারিয়াকে। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। ফল খারাপ হতেই পুলিশ সুপার আকাশ মাগারিয়াকে বদলি করে নিয়ে আসা হয় এস.সেলভা মুরুগানকে।
পুরুলিয়া জেলায় প্রশাসনিক কাজে বেশ দক্ষতার সাথে কাজ করে গেছেন রাহুল মজুমদার। বামফ্রন্ট শাসনকালের শেষের দিকে রাহুল মজুমদার পুরুলিয়া জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন। সেক্ষেত্রে রাহুল মজুমদার পুরুলিয়া জেলাকে হাতের তালুর মতো চেনেন। সেজন্যই আবার তাকে জেলাশাসক করে পুরুলিয়ায় পাঠানো হয়। করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে কোমর বেঁধে কাজ করেছেন রাহুল বাবু। জেলার ২০টি ব্লক এবং১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ১০০দিনের কাজ এবং মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলাকে শিখরে পৌঁছে মডেল তৈরি করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ সেই রাহুল মজুমদারকে তাই নিজের দপ্তরে নিয়ে গেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোট মিটতে পুরুলিয়া জেলার রাশ ধরতে তাই আবার রাহুল মজুমদারকেই পুরুলিয়ার জেলাশাসক পদে পুনর্বহাল করলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
যদিও পুরুলিয়ার রাজনৈতিক মহলের মতে বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়া জেলায় অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জেলার ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছে মাত্র তিনটি আসন। হেরে গেছেন জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বলরামপুর বিধানসভার দু'বারের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
হারতে হয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট সুজয় ব্যানার্জিকে। সারা রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বকালীন রেকর্ড ফল করলেও রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পুরুলিয়ার সার্বিক ফলাফল চিন্তা ভাবনা করে এবং ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে হারানো জমি ফিরে পেতেই আবার রাহুল মজুমদারকে জেলাশাসক পদে পুনর্বহাল করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।