তাপস দাস: যাঁরা এ মরশুমে দলবদল করেছেন, রুদ্রনীল ঘোষ তাঁদের অন্যতম। চলচ্চিত্রজগতের এই নাম করা অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরেই সোশাল মিডিয়ায় অতি সক্রিয়। তিনি ছিলেন তৃণমূলে। সরকারি কমিটিতেও স্থান পেয়েছিলেন। সরকারি বিভিন্ন নীতির প্রশংসার চেয়ে বেশি সরব হতেন বিরোধীদের নিন্দায়। কেন তিনি শিবির বদল করলেন, তার বহুবিধ কারণের মধ্যে যে কারণটি সবচেয়ে ছড়িয়েছিল, তা একটি ভিডিও ছড়া। তাতে রুদ্রনীলের দাবি, স্বাস্থ্যসাথী নামক ভুয়ো কার্ড, বেকারত্ব, টেট পরীক্ষা দিয়েও কর্মহীনতা, চাকরি চেয়ে বাম নেতা মইদুলের মৃত্যুর মতো কারণই নাকি শাসকদল ত্যাগের প্রধান কারণ।
রুদ্রনীলকে টিকিট দেওয়া হয়েছে মমতাগড়ের। গত বছর পর্যন্ত মমতার আসন ছিল ভবানীপুর। এবার তিনি শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ করে নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মমতাশূন্য ভবানীপুরে তৃণমূল কংগ্রসের হয়ে লড়ছেন তৃণমূল ভেটারেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁরই বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে রুদ্রনীল ঘোষকে। জমকালো এই প্রার্থী হিংসায় জড়িয়েও পড়েছেন। চতুর্থ দফার ভোটের আগের রাতে চেতলা অঞ্চলে তাঁর ফ্লেক্স ছেঁড়া হয়েছে অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন। অকুস্থল চেতলা, রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ির অদূরে।
রুদ্রনীলের অভিযোগ, ফিরহাদ হাকিমের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তিনি পড়ে গিয়ে চোটও পান। রূপোলি পর্দায় রুদ্রর ১৬ বছর হয়ে গেল। খল চরিত্র থেকে মানবিক চরিত্র সব ধরনের কাজের জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন, পেয়েছেন একাধিক স্বীকৃতি। ব্যোমকেশ বক্সী হোক বা ভিঞ্চিদা, সবরকমের অভিনয়ে তিনি এক কথায় দুর্দান্ত। তাঁকে নিয়ে কাজ করেছেন সৃজিত মুখার্জি, অপর্ণা সেনের মত দুঁদে পরিচালকরা। আইএমডিবি-র খতিয়ান দেখাচ্ছে ৯০টির বেশি টাইটেলে তাঁর অভিনয়ের কথা।
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষ যে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রগড়ে দেবার হুমকি দিয়েছেন, তাকেও সমর্থন জানিয়ে সহশিল্পীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু রুদ্রনীল বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি রাজনীতিতে থাকতেই এসেছেন। হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের গ্র্যাজুয়েট রুদ্রনীল ঘোষের কলকাতায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, একটি মুর অ্যাভিনিউ অন্যটি রিজেন্ট পার্কে। হাওড়ার জগাছায় রয়েছে একটি বাড়ি। এই তিন সম্পত্তির মূল্যই এক কোটি টাকার বেশি। রুদ্রনীল জানিয়েছেন, তাঁর কোনও গাড়ি নেই। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে তাঁর যা আমানত রয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা। চমৎকার এই অভিনেতার রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশের চেহারা কেমন হবে, তা জানা যাবে অষ্টম তথা শেষ দফার ভোটে, ২৬ এপ্রিল।