মমতার থেকে বাংলায় নাকি বেশি জনপ্রিয়তা নরেন্দ্র মোদী-র! এমনই বোমা ফাটাল এক ভাইরাল অডিও ক্লিপ। আর এই অডিও ক্লিপ-এ যিনি মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বাংলায় বেশি জনপ্রিয় নেতা বলে অভিহিত করেছেন তিনি আর কেউ নন- প্রশান্ত কিশোর। যদিও, অডিও ক্লিপে নাম থাকা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বাস্তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলী উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের কোনও সংযোগ রয়েছে কি না তা প্রমাণিত হয়নি। অডিও ক্লিপগুলি বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইটারে শেয়ারও করেছেন। এই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর প্রশান্ত কিশোর নিজে একটি টুইট করেছেন। সেখানে তিনি সরাসরি স্বীকার করেননি যে অডিওটি তাঁর। তবে, তিনি টুইটে লিখেছেন, ' বিজেপি আমার কথাকে তাদের নেতার থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়াটা তিনি উপভোগ করছেন। আর সেই সঙ্গে ফের একবার জানিয়ে দিতে চাই বিজেপি বাংলায় ১০০টি-রও বেশি আসন পার করতে পারবে না।'
বাংলা জুড়ে ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ। এবারের দফায় কলকাতার একটা অংশ এবং কলকাতর নিকটবর্তী শহরাঞ্চলে ভোট হচ্ছে। এমন সময়ে প্রশান্ত কিশোরের এই অডিও ক্লিপের প্রকাশ পাওয়টা রাজনৈতিক মহলে গুরুত্ব সহকারেই দেখা হচ্ছে। অডিও ক্লিপের মোদীকে মমতার থেকে বেশি জনপ্রিয় বলতে গিয়ে কোন যুক্তি খাড়া করেছেন প্রশান্ত কিশোর নামে ব্যক্তি? অডিও ক্লিপের প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, হিন্দুদের কাছে মোদীর জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ নেই। কারণ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের কাছে বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে মোদীর। তার ধারেকাছে অন্য কোনও রাজনৈতিক নেতা এমনকী দেখা যাচ্ছে অন্তত ১০ শতাংশ এমন মানুষ রয়েছে যারা মোদীকে ভগবান বলে মনে করেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাংলায় বিজেপি সরকারের সম্ভাবনার রাস্তাকে পরিষ্কার করে দিয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দলিতদের ভোট।'
এমএলএ ঠাকুর্দার নেত্রী নাতনি, বালির সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর উজ্জ্বল বাম ঝাঁকের অন্যতম মুখ ...
বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সহপর্যবেক্ষক অমিত মালব্য তাঁর টুইটে ভাইরাল অডিও-র এই অংশগুলো তুলে ধরেছেন।
মাথা বাঁচাতে অভিনব উপায়, হেলমেট পরেই বুথে নাটাবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ...
ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে প্রশান্ত কিশোর নামে যে ব্যক্তির গলা শোনা গিয়েছে, তিনি আরও জানিয়েছেন যে, 'গত ২০ বছর ধরে বাংলায় সিপিএম থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস .পুরোপুরি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করেছিল। এর মানে ছিল যে মুসলিমরা যে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে তারাই সরকার তৈরি করবে। কিন্তু, এবারের ভোটের অঙ্কটা একটা আলাদা। কারণ, হিন্দুদের ভোটের বিশাল অংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে মতুয়াদের ভোট। লোকসভা নির্বাচনে মতুয়ারা পুরোপুরি বিজেপি-কে ভোট দিয়েছিল। তবে, বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৭৫ শতাংশ মতুয়া ভোট বিজেপি-র ঝুলিতে যাবে। ২৫ শতাংশ ভোট যাবে তৃণমূলে। যেভাবে সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের ফায়দা তুলেছে তার একটা খারাপ প্রভাব পড়েছে সমাজের উপরে। এই কথাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।'
দুই মন্ত্রীর ভাগ্যপরীক্ষা চতুর্থ দফায়, তালিকায় রয়েছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরা ..
ভাইরাল অডিও ক্লিপে প্রশান্ত কিশোর নামে ওই ব্যক্তির আরও দাবি- তৃণমূলের সার্ভেতেও বিজেপি এগিয়ে। তৃণমূল একটি সার্ভে করিয়েছিল, যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভোটে কাকে দেবেন? কে গঠন করবে সরকার? সমীক্ষায় দেখা গেছে বিজেপিই সরকার গঠন করছে। তৃণমূল কাটাছেঁড়া করে দেখেছে অধিকাংশ লোকই মনে করছে বিজেপি সরকার গঠন করবে। এই রাজ্যে এখনও বাম ভোট ১২ শতাংশ। তারমধ্যে ২ শতাংশ মানুষ মনে করছে বিজেপি আসছে ক্ষমতায়। বামেরাও চাইছে বিজেপি আসুক মমতা হারুক। তৃণমূল স্তরে অনেকেই বিজেপি ক্যাডারই বাম থেকে এসেছে। বিজেপির পক্ষে ৮৫ শতাংশ ভোট রয়েছে।
মোদীর জনপ্রিয়তার কারণ প্রসঙ্গে এই ভাইরাল অডিও ক্লিপে প্রশান্ত কিশোর নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছন, ' বাংলায় সরকার বিরোধী মনোভাব মূলত রয়েছে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে। মোদীর বিরুদ্ধে সে জাতীয় কোনও মনোভাব নেই। হিন্দিভাষীদের মোদীকে সমর্থন করবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই রাজ্য বিজেপির শাসন দেখেনি। গত ৩০-৩৬ বছর ধরে বিজেপি বিরোধিতাই দেখেছে এই রাজ্য।' প্রশান্ত কিশোরের কথায় যে লাড্ডু মানুষ খায়নি সেটাই দেখার চেষ্ট করে দেখতে চায় বাংলার মানুষ। তারই সঙ্গে সহযোগিতা করছে মোদীর জনপ্রিয়তা। সরকার বিরোধী মনোভাব আর বিজেপির ভোট মেশিনারি।
ইতিমধ্যেই এই ভাইরাল অডিও ক্লিপ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র এই অডিও ক্লিপের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মরিয়া। এর আগেও প্রশান্ত কিশোরের নানা ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় বিজেপি-র এগিয়ে যাওয়ার উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু, সেই কথা প্রকাশ্যে যখনই এসেছে তখনই মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রশান্ত কিশোর। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোরকে রাজনৈতিক কৌশলী উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-প্যাককে ঘিরে আদি তৃণমূলের একটা বিশাল অংশ ক্ষুব্ধ এবং এই সংস্থার বিরুদ্ধে তোলাবাজি থেকে শুরু করে অর্থের বিনিময়ে আসন পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ করেছিলেন অসংখ্য তৃণমূল নেতা। যদিও, প্রকাশ্যে বারবারই প্রশান্ত কিশোর দাবি করে আসছেন বিজেপি ১০০বেশি আসন পাবে না। অথচ, ব্যক্তিগত আড্ডায় অন্যকথাই বলছেব প্রশান্ত কিশোর। সবমিলিয়ে বাংলার নির্বাচন এখন নাটকীয়তায় ভরপুর।