সোমবার ভগবানগোলায় ভোট। আর সেই ভোটের দিনেই প্রার্থী না হতে পেরে চরম মানসিক অবসাদে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েশেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মাস খানেক ধরে চরম মানসিক নিপীড়নের মধ্যে দিন কাটানোর পর এদিন চিরঘুমের দেশে মমতার সহ যোদ্ধা ভগবানগোলার সাগির হোসেন।
শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৯২ সাল থেকে।আজকের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেসের নেত্রী, সেই সময়কার তাঁর সহ যোদ্ধা তথা মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের প্রথম সৃষ্টিকর্তা ভগবানগোলার সাগির হোসেন। পেশায় হাই স্কুলের প্রাক্তন এই শিক্ষককে এইবার বিধানসভা নির্বাচনের দলনেত্রী টিকিট না দিয়ে বহিরাগত ইদ্রিস আলী কে ভগবানগোলা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। আর তারপর থেকেই কার্যত চরম মানসিক অবসাদে নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলেন সাগির বাবু। মাস খানেক ধরে চরম মানসিক নিপীড়নের মধ্যে দিন কাটানোর পর সোমবার ভোটের দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে মারা গেলেন তৃণমূলের ওই বর্ষিয়ান নেতা।
আরও পড়ুন, মৃত্যুতেও ফিরছে না হুঁশ, ভোট কর্মীর দায়িত্বে থাকা কলিং পার্সোনালদের দুরাবস্থার ছবি ভাইরাল
এই ঘটনা শোনার পরই স্থানীয় সাগির হোসেন এর অনুগামী তৃণমূল কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে তার পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসী এমনকি বিরোধী দলের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে। তার পরিবারের তরফ থেকেও এই ঘটনায় সাগির সাহেব কে যোগ্য সম্মান না দেওয়াই চরমভাবে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন। এহেন বর্ষিয়ান কয়েক দশকের তৃণমূল নেতার রাজনীতিতে উত্থান হয় উল্কা গতিতে। বর্তমানে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতির পদে ছিলেন বরিষ্ঠ এই নেতা সাগির হোসেন। সম্প্রতি তাকে দল তার জন্মস্থান ভগবানগোলা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী না করার প্রতিবাদে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত তাৎপর্যপূর্ণভাবে খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল প্রার্থী না করলেও আলাদাভাবে প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছি ।'
তবে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছেন তা কিন্তু স্পষ্ট করেননি তিনি। সেই বিষয়ে বারংবার জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি মুখে কুলুপ এটা ছিলেন। মৃত ওই তৃণমূল নেতা সাগির হোসেনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,যুব কংগ্রেসের সময় কাল , সেই ১৯৯২ সাল থেকেই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে চলেছেন ভগবানগোলার বাসিন্দা সাগীর হোসেন । পরবর্তীতে তৃণমূল গঠনের শুরু থেকেই সাগীর দলের অন্যতম সদস্য ।পুরষ্কার হিসেবে জেলাতে দল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন একাধিক বার । দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি সাগীর বিভিন্ন ভাবে দল কে সাহায্য করেছেন ।কিন্তু যখন থেকে দল স্বাবলম্বী হয়েছে ধিরে ধিরে সাগীর পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন । এমন কি সুদিনে তাকে সংসদীয় রাজনীতিতে সাংসদ কিংবা বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়েছে তার ভগবানগোলার বাইরে অথচ জেলাতে সাগীর হোসেনের নেতৃত্বে প্রথম ও বলিষ্ঠ সংগঠন গড়ে ওঠে এই ভগবানগোলাতেই ।
অথচ দল এই সময় তাকে টিকিট না দিয়ে হুগলী থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে ইদ্রিশ আলি কে আর তাতেই কিভাবে চরম অভিমান হয় বর্ষীয়ান এই তৃণমূল নেতার । জেলা নেতৃত্ব একাধিক বার তার বাড়িতে গিয়ে মান ভাঙাতে ব্যর্থ হন। আর শেষ পর্যন্ত দলের প্রতি একরাশ অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে পৃথিবী ছাড়লেন সাগির সাহেব।তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ তথা জেলা সভাপতি আবু তাহের খান বলেন,"সাগির সাহেব আমাদের জেলার কেবল এক বলিষ্ঠ নেতা নন, সজ্জন মানুষ থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুর্শিদাবাদের বুকে। তারই মৃত্যুতে দলের প্রভূত ক্ষতি হবে এলাকায়"।