মোদীর স্কিম না মমতার স্ক্যাম, বাংলাকে বাছতে বলল বিজেপি

তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, কাটমানি, নিয়োগ-দুর্নীতি, কয়লা-চুরি, বালি-চুরি

তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিই বিজেপির মূল অভিযোগ

এর উল্টো দিকে রয়েছে বিজেপির উন্নয়ন মূলক প্রকল্প

মমতার স্ক্যামের বদলে মোদীর স্কিম বেছে নিতে বলল তারা

তোলাবাজি, সিন্ডিকেট-রাজ, কাটমানি, নিয়োগ-দুর্নীতি, কয়লা-চুরি, বালি-চুরি, গরু-চুরি এমনকী রেশনেও চুরি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের প্রচারে দুর্নীতির কাঠগড়ায় ঠায় দাঁড়িয়ে শাসকদল তৃণমূল। গত দশ বছরে বাংলায় এত দুর্নীতি হয়েছে যে ‘করাপশন অলিম্পিক করা যাবে’ বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘এরা বড় খেলোয়াড়। খুব খেলেছে। খেলে খেলে বাংলার গরিবদের লুটেছে। কিচ্ছু ছাড়েনি। আমফানের টাকা লুঠ করেছে। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট অনেক খেলা খেলেছে।’

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট-রাজের দাপটে কোনও কাজ করাই দায়। তোলাবাজি সবচেয়ে বেশি চলে আবাসন এবং ফ্ল্যাট তৈরির নামে। শুধু বালি-পাথরকুচি কেনাই নয়, বর্গফুট পিছু নিজেদের ভাগ বুঝে নেয় তৃণমূলের দাদারা। এ ছাড়াও পুরসভায় নকশা অনুমোদন থেকে জলের ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছেন ‘সেটিং দাদা’। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সব করিয়ে দেবেন তিনি। এদের বাদ দিয়ে কোনও রকমের নির্মাণকাজ সম্ভব নয় এরাজ্যে। সে ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরিই হোক বা কল-কারখানা বা জনহিতার্থে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তোলাবাজির সঙ্গে পাশবালিশ হয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট। তার উপরে কাটমানির চল। ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকতে না ঢুকতে ঘরে চলে আসবেন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। পার্টি ফান্ডে চাঁদার আবদার তাঁদের। বার্ধক্য ভাতার  টাকা পেতে আগে সরিয়ে রাখতে হবে কাটমানি। এমনকী সরকারি প্রকল্পে শৌচাগার বানানোর টাকা নিয়েও নয়ছয় হয়েছে যথেচ্ছ।

Latest Videos

আরও পড়ুন - দলবদলুদের ভোট দেয় না বাংলা, শুভেন্দু-রাজীবদের জন্যই কি মার খাবে বিজেপির জয়ের স্বপ্ন

আরও পড়ুন - 'ভাইপো'র জন্যই কি ডুবছে তৃণমূল, নাকি আসন্ন নির্বাচনে তিনিই 'দিদি'র অক্সিজেন

গত বছর আমফান-দুর্নীতির স্মৃতি এখনও তাজা। সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হুগলি, হাওয়া, নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ি ভাঙে। আর এরপরেই ত্রাণের টাকা নিয়ে শুরু হয় লুটোপুটি।  তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা নিজে বা পরিবারের লোকেদের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ঢুকিয়ে ত্রাণের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ। প্রায় এক বছর কাটতে চললেও আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই বাড়ি তৈরির টাকা এখনও পাননি। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা অমিত শাহের কথায়, ‘আমফান বুলবুলের ক্ষতিপূরণ পেতেও গরিব মানুষদের ৫০০ টাকা কাটমানি দিতে হয়। রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়লে যারা কাটমানি খেয়েছে সেই সব তৃণমূল গুন্ডাদের জেলে ঢোকানো হবে। বালি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়াদের জেলে ঢোকানো হবে।’

উল্লেখ্যে, বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে বালি, কয়লা আর গরু চুরি নিয়ে রাজ্যে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই, ইডি। ইসিএল-এর খনিতে সেখানের কর্মীদের মদতে বেআইনি ভাবে কয়লা খনন আর তারপর নিরাপত্তা বাহিনী ও সিআইএসএফ কর্মীদের মদতে তা পাচার হয়ে আসছে বহু দিন ধরে। পাচারে সাহায্য করে রেলকর্মীদের একাংশও। গত কয়েক বছরে এই চক্র আরও সক্রিয় ও সংগঠিত হয়েছে। সৌজন্যে অনুপ মাঝি ওরফে লালা।  অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয়ে কয়লার বেআইনি কারবারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে গত পাঁচ বছরে। সম্প্রতি পাণ্ডবেশ্বরের রেলওয়ে সাইডিং এলাকায় প্রায় ৯ মেট্রিক টন কয়লা চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু হতে সর্ষের মধ্যে ভূত বেরিয়ে আসে। সিবিআই এই তদন্তের দায়িত্বভার নেয়। লালা ততদিনে নিরুদ্দেশ। কিন্তু তার বাড়ি ও বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে অনেক প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশকর্তাদের নাম পায় সিবিআই। গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত এনামুল হকের নামও জড়ায়। সেই সঙ্গে উঠে আসে যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রের নাম। বিনয় পলাতক। সিবিআই জানিয়েছে, কয়লা পাচারের টাকা কী ভাবে বিদেশে গিযেছে, তার তদন্ত করার জন্য বিনয় ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের তল্লাশি-জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিজেপি-র অভিযোগ, কয়লা পাচার কাণ্ডের মাথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক। বাংলায় ভোটের দামামা বাজার আগে থেকেই বিজেপি-র নিশানায় ছিলেন অভিষেক। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। বালি, কয়লার পর গরু চুরিতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। কয়লা-কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার নাম সিবিআইয়ের খাতায় ওঠার পর আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়েছে বিজেপি। অভিষেক এই সবে না-দমে বলছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে বর্ডার (বিএসএফ) আর কয়লাখনি (সিআইএসএফ) এলাকায়। তারা কেন থামাচ্ছে না কোটি কোটি টাকার চুরি হচ্ছে বলছে যখন।’

বাংলার সাধারণ মানুষ অবশ্য গরু, কয়লা বালি চুরি নিয়ে ততটা ভাবিত নয়, তৃণমূল আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে যতটা। বিশেষ করে এসএসসিতে নিয়োগ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে জনমনে। সেই ক্ষোভ যে অমূলক নয়,  কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (সিএজি বা ক্যাগ) রিপোর্টে তা প্রমাণিত। ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এসএসসি যে ১২টি পরীক্ষা নিয়েছিল, সেগুলি নিয়ে তদন্ত করে প্রচুর অনিয়ম ধরেছে সিএজি। সিএজি-র দাবি, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার যে নম্বর চূড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ হয়েছে, তার সঙ্গে সিস্টেমে লিখে রাখা নম্বরের মিল নেই। ৭২৪৭ জন পরীক্ষার্থীর প্যানেলের নমুনায় অডিটে ৫ জন এমন প্রার্থীর হদিশ মিলেছে, যাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ৫.৫ এর কম পেয়েও চূড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। এঁদের এক জন চাকরিও পেয়েছেন। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে ১৮-২০ লক্ষ, সেখানে সব মিলিয়ে কত অনিয়ম হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। সিএমজি তাদের রিপোর্টে পরিষ্কার লিখেছে, সিস্টেম, চূড়ান্ত প্যানেল এবং অডিটের নম্বর আলাদা আলাদা থাকাতেই প্রমাণিত বার বার অনলাইন সিস্টেমে ঢুকে তা বদল করা হয়েছে। আবার একাদশতম সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এমন ২২৬৪ প্রার্থীর খোঁজ মিলেছে, যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বর ১ থেকে ২৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসএসসি-র এই মেধাতালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী হাইকোর্টে মামলা করলে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে যায়। মামলাগুলি এখনও বিচারাধীন। স্বাভাবিত ভাবেই গত কয়েক বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি স্কুলে।   

আরও পড়ুন - বঙ্গ ভোটে পদ্ম হাতে ৯ মুসলমান, বিজেপি কি সত্যিই সংখ্যালঘু-বিরোধী - কী বলছেন প্রার্থীরা

আরও পড়ুন - মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা

তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়োগেও। হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক-চিকিৎসকের পদে মোট ৬৪৭ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে। অভিযোগ, শাসকদলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ, পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীদের পিছনে ফেলে তৃণমূলের এক চিকিৎসক নেতার ছেলে সাধারণ এমবিবিএস পাশ হওয়া সত্ত্বেও বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে আরএমও হযেছেন। সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করা আর এক জন ৬টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগে নিয়োগপত্র পেয়েছে। এক জন চিকিৎসক আলাদা আলাদা মেডিক্যাল কলেজের ১৩টি বিভাগে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এই ধরনের উদাহরণ রয়েছে অজস্র। সম্প্রতি বনকর্মী নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন  পুরসভায় কর্মী-আধিকারিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ভূরি ভূরি।  রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কথায়, ‘মমতার অফিসার, দলের লোকজন আর দালালরা অনেক দুর্নীতি করেছে এবং প্রচুর টাকা লুটেছে। দুর্নীতির এই শিল্প আটকাতে ব্যর্থ সরকার।’ লকডাউনের সময় রেশনে দুর্নীতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নবান্নকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘গণবণ্টনের অনিয়মের কারণে গরিব মানুষ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্নযোজনায় খাদ্য শস্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ নবান্ন থেকে পাল্টা চিঠিতে রাজ্যপালকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি মেনে নেওয়া হয় রেশন সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে ৩২টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অর্থাৎ দুর্নীতি হয়েছে রেশনে।

স্বাভাবিক ভাবেই এবারের ভোটে দুর্নীতির প্রশ্নে রেশন থেকে আমফানের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। গত ডিসেম্বরে তৃণমূলের সরকার তাদের শাসনকালের সাফল্যের খতিয়ান দিয়ে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের পরে বিজেপির রাজ্য টুইটার হ্যান্ডেল থেকে বলা হয়, ‘১০ বছরের দুর্নীতি, দশ বছরের সিন্ডিকেট, দশ বছরের তোলাবাজি, ১০ বছর ধরে গণতন্ত্রের গালে থাপ্পড়। তৃণমূলের রিপোর্ট কাড হল এটাই।’ 

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari: 'তৃণমূল বাচ্চাদের ট্যাবও খেয়ে ফেলছে' চরম কটাক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর
'দুর্নীতি করবে বলেই এরা এই প্রকল্প চালু করেছে' ট্যাব দুর্নীতিতে সরব অধীর রঞ্জন চৌধুরী
Suvendu Adhikari Live: বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে মহা মিছিল শুভেন্দুর, দেখুন সরাসরি
Suvendu Adhikari: 'লটারি কেলেঙ্কারিতে ভাইপো সরাসরি যুক্ত' সব ফাঁস করে যা বললেন শুভেন্দু
'ট্যাব কেলেঙ্কারিতে মমতা ও আইপ্যাক যুক্ত' বিস্ফোরক দাবি শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari