প্রায় দু’বছর হয়ে গিয়েছে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায় জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় তিনি মৃতের তকমা পেয়েছেন। আর সেই কারণেই তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযোগের তীর উপপ্রধানের দিকে।
এ যেন 'কাগজ' (Kaagaz) সিনেমার ভরতলাল বিহারি। যিনি জীবিত অবস্থাতেই সরকারি খাতায় মৃতের (Death) তকমা পেয়েছিলেন। তারপর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করেন তিনি। আর এবার ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটল উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Pargana) বসিরহাটে।
প্রায় দু’বছর হয়ে গিয়েছে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বার্ধক্য ভাতা (Pension Scheme) পাচ্ছেন না। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায় জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় তিনি মৃতের তকমা পেয়েছেন। আর সেই কারণেই তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযোগের তীর উপপ্রধানের দিকে।
বসিরহাটের বাদুড়িয়া ব্লকের যদুরহাটী উত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের পিঙ্গলেশ্বর গ্রাম। এই গ্রামেরই বাসিন্দা বছর একাত্তরের সহিদুল মণ্ডল। পেশায় কৃষক (Farmer)। জীবিত অবস্থায় বহাল তবিয়তে এখনও ঘুরে বেড়ান তিনি। কিন্তু, সরকারি রেকর্ড বলছে তাঁর নাকি মৃত্যু (Death) হয়েছে। তিনি এখন মৃত। এমনই আজব দৃষ্টান্তের সাক্ষী হয়েছে বাদুড়িয়া।
আরও পড়ুন- নেতাজির জন্মদিন উদযাপনেও চলল গুলি, ফের উত্তপ্ত ভাটপাড়া
১০ বছর ধরে সঠিক সময়ই তিনি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছিলেন। কিন্তু, সমস্যা তৈরি হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। সেই মাস থেকেই তাঁর বার্ধক্য ভাতা হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি ব্যাঙ্কে (Bank) গিয়ে যোগাযোগ করেন। ব্যাঙ্ক থেকে সঠিক কোনও কারণ জানতে না পারায় তিনি যোগাযোগ করেছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতে। কিন্তু, সেখান থেকেও কোনও সদুত্তর পাননি তনি। অবশেষে বাদুড়িয়ার বিডিও অফিসের নোডাল অফিসারের (Nodal Officer) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর জানতে পারেন, বার্ধক্য ভাতার যে তালিকা রয়েছে সেই তালিকায় তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বর্তমান যদুরহাটী উত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাইদুল হক বৈদ্য। সহিদুলের অভিযোগ, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে যে তালিকায় সেই তালিকায় সই করেছেন জাইদুল নিজে। আর তার ফলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর বার্ধক্য ভাতা।
আরও পড়ুন- 'একটা ট্যাবলো থাকলে কী ক্ষতি হত', নেতাজি জয়ন্তীতে মমতার নিশানায় কেন্দ্র
এ প্রসঙ্গে সহিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি স্বীকার করে নেন তিনি। বলেন, "প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেও এটা হতে পারে।" অন্যদিকে এব্যাপারে পঞ্চায়েত প্রধান কনকলতা মণ্ডলকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি জানান, "যে সময় জাইদুল হক এই কাজটি করেছিলেন সেই সময় আমি শারীরিক অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলাম। ফলে সেই সময় পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন বর্তমানের উপপ্রধান জাইদুল হক বৈদ্য। তাই যা করার তিনিই করেছেন।"
কনকলতা আরও বলেন, "অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত করেছি। চাইব যত দ্রুত সম্ভব ওই ব্যক্তির বার্ধক্য ভাতা যেন চালু করা হয়।" বিষয়টি নিয়ে বাদুড়িয়ার বিডিও, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক, বাদুড়িয়ার বিধায়ক, যদুরহাটী উত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে অভিযোগ করেছেন সহিদুল।
আরও পড়ুন- ওরা বাদ দিয়েছে আমরা শুরু করব, Netaji জয়ন্তীতেই যোজনা কমিশন তৈরির ঘোষণা মমতার
কোনওরকমে দিন গুজরান করেন সহিদুল। তাঁর কাছে এই বার্ধক্য ভাতা ছিল পরম প্রাপ্তির। কিন্তু, দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। তাই তিনি চাইছেন অবিলম্বে যেন মৃতের তকমা উঠে গিয়ে তাঁকে জীবিত ঘোষণা করা হয়। আর তাঁর বার্ধক্য ভাতা পুনরায় চালু হোক।