আসানসোলের '১০ দিগন্ত' প্রকাশ তৃণমূলের, ইস্তেহারে জোর স্বাস্থ্য-সড়ক সহ একাধিক বিষয়ে
আসানসোল পুরনিগম নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। ইস্তেহারে জোর দেওয়া হয়েছে একাধিক বিষয়ের উপর। নিকাশি থেকে শুরু করে সড়ক পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্যায়ন সহ একাধিক বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে তৃণমূল।
Web Desk - ANB | Published : Jan 15, 2022 10:16 AM IST / Updated: Jan 15 2022, 03:53 PM IST
কলকাতা পুরনিগমের ভোটের পর এবার রাজ্যের বাকি চারটি পুরনিগমের ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। বিধাননগর (Bidhannagar), চন্দননগর (Chandannagar), আসানসোল (Asansol) ও শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমে ভোট রয়েছে প্রায় এক মাস। এদিকে ২২ জানুয়ারি এই চার পুরনিগমে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। শনিবারই তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ( State election Commission)। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই কমিশনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ভোট (Election) পিছিয়ে গেলেও এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছে না তৃণমূল। আজ আসানসোল পুরভোটের (Asansol Municipal Election) ইস্তেহার (Manifesto) প্রকাশ করেছে তারা। তৃণমূলের (TMC) পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সব রাজনৈতিক দলই। জোরকদমে চলছে প্রচারও।
আসানসোল পুরনিগম নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। ইস্তেহারে জোর দেওয়া হয়েছে একাধিক বিষয়ের উপর। নিকাশি থেকে শুরু করে সড়ক পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্যায়ন সহ একাধিক বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে তৃণমূল।
১) আসানসোলের সব খাল এবং নদীগুলির যান্ত্রিকভাবে পরিষ্কার এবং নিষ্কাশন করা, কঠিন-বর্জ্য ফেলা থেকে নিষেধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জমা জলের নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই খালে জলের নির্গমনপথ তৈরি করা হবে।
২) আসানসোলের সব খাল যান্ত্রিকভাবে পলিমুক্ত এবং নিষ্কাশন করা, সঙ্গে কঠিন-বর্জ্য খালে ফেলা নিষেধের মাধ্যমে আসানসোল পুরনিগম অধীনস্থ সব খালগুলির সংস্কার করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জমা জলের নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত জলের নির্গমনপথ তৈরি করা হবে।
সড়ক পরিকাঠামো
১) যাতায়াতের সুবিধার জন্য আসানসোল জুড়ে পাকা রাস্তা নির্মাণ। রাস্তার মান উন্নতির জন্য কোল্ড-প্যাচিং প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে রাস্তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
২) আসানসোল, জামুরিয়া এবং রানিগঞ্জ এলাকায় যানজট কমাতে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়াও, প্রধান এলাকায় ৪টি নতুন ফুট-ওভারব্রিজ নির্মাণ এবং বর্তমান ফুটপাথগুলি প্রশস্ত করা হবে।
৩) অবৈধ পার্কিং প্রতিরোধে ২টি বহুস্তরীয় গাড়ি পার্কিং লট নির্মাণ, টহলদারি বৃদ্ধি এবং বাজারের কাছাকাছি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করা হবে।
৪) যানজট কমাতে, যাত্রীদের সুবিধার্থে অটোরিকশা ও ই-রিকশাগুলির জন্য প্রধান এলাকায় নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড বরাদ্দ করা হবে এবং যাত্রীদের সুবিধার জন্য নতুন রুটগুলির সীমানা নির্ধারণ করা হবে
৫) প্রধান সড়ক জুড়ে পরিবহনের সুবিধার্থে যেখানেই সম্ভব বাসের জন্য ডেডিকেটেড লেন স্থাপন করা। জামুরিয়া, রানিগঞ্জ, বার্নপুর, বরাকর, আসানসোল বাজার, আসানসোল স্টেশন এবং উষাগ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ নতুন বাস-স্টপ নির্মাণ করা হবে।
১) ২টি বিদ্যমান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং প্রতিদিন অন্তত দু’বার প্রতিটি বাড়িতে জল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত বুস্টার পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।
২) আগামী ৫ বছরে আসানসোলের সব বাড়িতে ১০০ শতাংশ কলের জলের সংযোগের সুবিধা থাকবে।
নাগরিক বান্ধব আসানসোল
১) নিষ্ক্রিয় এবং অচল লাইটগুলির পরিবর্তে এলইডি (LED) লাইটের প্রতিস্থাপন এবং সমস্ত প্রভাবিত এলাকায় প্রতি ৩০ মিটার অন্তর রাস্তায় আলো স্থাপন করার পাশাপাশি নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে।
২) জামুরিয়া, রানিগঞ্জ, বার্নপুর, কুলটি এবং আসানসোলের বাজারগুলিতে আগামী ৫ বছরে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো এবং পার্কিংয়ের সুবিধা সহ নাগরিকদের সুবিধার সঙ্গে মানোন্নয়ন করা হবে।
৩) হাঁটার পথ, বেঞ্চ এবং খেলার মাঠ-সহ পার্কের সৌন্দর্যায়ন। শহরের সবুজায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত পার্কগুলিতে ‘আরবান মিনিয়েচার ফরেস্ট’ তৈরি করা হবে।
৪) সম্ভাব্যতার সবদিক খতিয়ে দেখার পর পরবর্তী ৫ বছরে পর্যায়ক্রমে ওভারহেড তারের জায়গায় ভূগর্ভস্থ তারের সুবিধা প্রদান করা হবে।
৫) জনসাধারণের অনুষ্ঠান এবং সামাজিক জমায়েতের জন্য শহরে ১০টি আসানসোল পৌরনিগম দ্বারা পরিচালিত কমিউনিটি হল নির্মাণ করা হবে, যা ন্যূনতম মূল্য দিয়ে বাসিন্দারা ব্যবহার করতে পারবে।
৬) নাগরিক সুবিধাসহ লালবাজার শ্মশানের মানোন্নয়ন এবং সৌন্দর্যায়ন। এছাড়াও, জামুরিয়ায় একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি-সহ শ্মশান স্থাপন করা হবে। সরকার অনুমোদিত শ্মশানে মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হবে।
এগুলির পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়ের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে। তার মধ্যে রয়েছে মডেল বিদ্যালয় তৈরি করা হবে। এছাড়া জোর দেওয়া হবে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরও। তার মধ্যে রয়েছে, নতুন গাইনোকোলজি, কার্ডিওভাসকুলার এবং পালমোনারি ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি ২৩টি নগর স্বাস্থকেন্দ্রগুলিকে আধুনিক চিকিৎসার সুবিধাসহ আপগ্রেড করা হবে। নিশ্চিত করা হবে যে, সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র দিবারাত্রি খোলা থাকবে। শহরে গৃহহীনদের জন্য তৈরি করা হবে ২টি আশ্রয়কেন্দ্র। যা একটি পারিবারিক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে।