"তৃণমূল দলের অভ্যন্তরে কি কোনও ভেতরকার গোলযোগ চলছে? উত্তরাধিকারের লড়াই চলছে? আমি কারোর নাম নেবো না, কিন্তু আমার ইঙ্গিত স্পষ্ট," মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে রবিশঙ্কর প্রসাদের বাক্যবাণ।
নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। বঙ্গের শাসকদলকে উদ্দেশ্য করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি। ১৩ সেপ্টেম্বর 'নবান্ন চলো' অভিযানে বিজেপি নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ, জলকামান বর্ষণ এবং ধরপাকড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে যা হয়েছে, তা অত্যাচার, হিংস্রতা আর গণতান্ত্রিক অধিকারের হননের চরম সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বর্বরতার সমস্ত সীমানা অতিক্রম করেছে। বিরোধীদের আওয়াজ তোলার বৈধ অধিকারকে অস্বীকার করে পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা জানেন যে, যুগ যুগান্তর ধরে বাংলা বৌদ্ধিক আর সংস্কৃতিক পরম্পরার এক বিশাল বড় প্রদেশ। কিন্তু আমি এখন দায়িত্ব নিয়ে বলছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে এই বাংলা হয়ে উঠেছে একটা আইনকানুন বিহীন দেউলিয়া রাজ্য। মমতাজির বিষয়ে আরও বেশি করে এই কথা উঠছে কারণ, তিনি বাংলার পরিসীমার বাইরে গিয়ে লোকতন্ত্র বাঁচানোর কথা বলছেন। আর বাংলার অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করে সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে ওনার সরকার। মমতাজির কাছে আমার একটা সোজা বিনম্র প্রশ্ন যে, আপনার রাজ্যে যদি ভ্রষ্টাচারের সব সীমা লঙ্ঘিত হয়ে যায়, আপনার দলের প্রাক্তন নেতা তথা পূর্ব মন্ত্রী বা পরিচিতদের ফ্ল্যাট থেকে ৬০-৭০ কোটি টাকা পাওয়া যায়, তাঁরা গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছে, রোজ ইডি সিবিআইয়ের তল্লাশি চলছে, কোর্টে আপনার দলের নেতারা ছাড়া পাচ্ছেন না, কারণ তাঁদের তরফ থেকে নির্দোষ হওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ নেই, সেই আপনিই মা-মাতি-মানুষের কথা বলেছিলেন, মঙ্গলকর শাসনের বার্তা দিয়েছিলেন, এইই যদি তার স্বরূপ হয়, তাহলে এর প্রতিবাদ কেন করা হবে না? আর প্রতিবাদ করতে এলে আপনি পুলিশ দিয়ে পেটাবেন, আপনি রাস্তা বন্ধ করিয়ে দেবেন। আমাদের মহিলা নেত্রীদের মঙ্গলবার পুলিশ যেভাবে মেরেছে, তা সাধারণ মানুষ জানেন। আমাদের প্রধান নেতানেত্রী যেমন, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিনহা, তাঁদের সাথে কী কী করা হয়েছে, তা টেলিভিশনে সমস্ত মানুষ দেখেছেন।”
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে রবি শঙ্কর প্রসাদ আরও বলেন, “আমি বিনম্রতার সাথে আপনাকে আজ একটা কথা বলতে চাই, কথাটা একটু রুঢ়, কিন্তু আপনাকে বলাটা খুব জরুরি, যদি কোনও নেতা আর তার পার্টি এইভাবে বিরোধী দলের ওপর পুলিশি অত্যাচার চালায়, তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব করে, প্রতিবাদীদের ধরে জেলে ভরে দেয়, তাদের বিচার জনগণ করেন। আপনার পূর্বতন পার্টির নেত্রী ইন্দিরা গান্ধি দেশে এমারজেন্সি জারি করার পর তাঁর কী হাল হয়েছিল, তা আপনি জানেন। আর মমতাজি, আপনি নিজেও তো সিপিএমের আমলে নিজে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের পুলিশও তো আপনার ওপর লাঠি চালিয়েছিল। আজও আপনি সেই দিন স্মরণ করে অমর শহিদ দিবস পালন করেন। সব ভুলে গেলেন? আপনি তো সিপিএমের সরকারের চেয়েও বেশি অত্যাচার করছেন। এতে আপনার স্বাভাবিক স্বভাব আমার চোখে পড়ছে না। আপনি তিন-তিনবারের বিজয়ী মুখ্যমন্ত্রী, আমরাও জানি আপনি মাটি থেকে উঠে আসা নেত্রী। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আপনার সমস্ত প্রতিক্রিয়া আপনার নিজের রাজনৈতিক বিবর্তনের সম্পূর্ণ বিপরীত। তৃণমূল দলের অভ্যন্তরে কি কোনও ভেতরকার গোলযোগ চলছে? উত্তরাধিকারের লড়াই চলছে? আমি কারোর নাম নেবো না, কিন্তু আমার ইঙ্গিত স্পষ্ট। সেটা থেকে নজর ঘোরাতেই কি বিপক্ষ দলের ওপর এত বড় পুলিশি অত্যাচার করানো হল? মনে রাখবেন, আপনার পার্টি যত বেশি বিজেপির ওপর অত্যাচার করার চেষ্টা করবে, তাদের রুখে দেওয়ার চেষ্টা করবে, বিজেপি তত বেশি করে সামনের দিকে এগোবে।”
আরও পড়ুন-
শান্তিনিকেতনে ছাতিমতলার চরম দুর্দশা, লণ্ডভণ্ড হওয়ার ছবি দেখে শিউরে উঠছেন বঙ্গবাসী
পাহাড়ের ঢালে ক্রিকেটার বেদা কৃষ্ণমূর্তিকে প্রপোজ করলেন ক্রিকেটার অর্জুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরে গেল ভালোবাসার ছবি
সিডনিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের লেখা গোপন চিঠি, খোলা যাবে না একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত