বগটুই গণহত্যায় মূল অভিযুক্ত লালন শেখের শ্বশুর সমীর শেখ। যিনি এতদিন ধরে গণহত্যার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর বয়ান দিচ্ছিলেন, তাঁকেই এবার গ্রেফতার করল সিবিআই।
বগটুই গণহত্যায় নাটকীয় মোড়। যিনি এতদিন ধরে গণহত্যার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর বয়ান দিচ্ছিলেন, তাঁকেই এবার গ্রেফতার করল সিবিআই। আর এই ব্যক্তি কেউ নন, বগটুই গণহত্যায় মূল অভিযুক্ত লালন শেখের শ্বশুর সমীর শেখ। তৃণমূল পঞ্চায়েত উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর বগটুই গ্রামে একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল। যার জেরে জীবন্ত পুড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২টি শিশু। ৬ জন মহিলা এবং একজন পুরুষ। লালন শেখের শ্বশুর সমীর শেখ জানিয়েছিলেন রাত দেড়টা দুটো নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে জামাই এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গীকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছিলেন। এর খানিক পরেই সকলে বেরিয়ে যায়। তারপর থেকেই নিখোঁজ লালন শেখ।
বগটুই গণহত্যায় এই বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, ভাদু শেখ খুনের ঘটনায় লালন শেখ মূল অভিযুক্ত। পুলিশেও যে এফআইআর দায়ের হয়েছে তাতেও লালন শেখ এবং তার দলের নাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সমাজবিরোধী নামে কুখ্যাতি রয়েছে লালনের। ভাদু শেখের পরিবারের সঙ্গে লালন এবং তার দলের শত্রুতা কারও অজানা নয়। একটা সময় লালন শেখরা ভাদুদের জন্য কাজ করত। ভাদুর দাদা-র ডানহাত বলেও পরিচিত ছিল সে। কিন্তু, বগটুই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ এবং ব্রোকারি, কনট্রাক্টরি থেকে আসা বখরা নিয়ে লালনদের সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছিল ভাদুদের। যার জেরে লালনদের হাতেই ভাদুর দাদা খুন হয়ে যান। এরপর থেকে লালনদের নিশানাতেও ছিলেন ভাদু। এখন পর্যন্ত যা বয়ান নথিভুক্ত হয়েছে তাতে লালনরা ভাদুকে খুন হওয়ার পরই ভাদু বিরোধীদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয় এবং বাড়িতে ঢুকে মহিলা ও শিশুদের উপরে অত্যাচার করা হয়। যেখানে জীবন্ত অবস্থায় পুড়ে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
অবশ্য যাদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল এবং অত্যাচার হয়েছিল তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছিলেন যে সমীর শেখ হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন। যখন আগুন লাগানো হচ্ছিল সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন এবং নির্দেশ দিচ্ছিলেন সমীর শেখ। রাজ্য সরকারের সিট সেভাবে সমীর শেখের ভূমিকাকে গুরুত্ব না দিলেও সিবিআই মনে করছে যে লালনের শ্বশুরের বয়ানে বহু অসঙ্গতি রয়েছে। এমনকী, সিবিআই বগটুই থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে সমীর শেখকে লাগাতার জেরা করে। সিবিআই সূত্রে খবর জেরায় বারবার অসংলগ্ন বয়ান দেন সমীর। একেক সময় এক এক কথা বলছিলেন তিনি। জেরায় আরও স্পষ্ট হয় যে সমীর শেখ বহু জিনিস আড়াল করার চেষ্টা করছেন যার সঙ্গে বগটুই গণহত্যার গভীর যোগ রয়েছে। এরপরই সিবিআই সমীর শেখকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার বগটুই-এ নিহত তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের পরিবারের বয়ান নথিভুক্ত করে সিবিআই। এর জন্য ভাদু শেখের স্ত্রী এবং সন্তানরা বগটুই-এ ফিরে এসেছিলেন। ভাদু খুনের কয়েক দিন পর থেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ভাদুর স্ত্রী তাঁর বাপের বাড়িতে থাকছেন। সিবিআই-এর ডাক পেয়ে তিনি এবং সন্তানরা বাড়িতে ফিরে আসেন। ভাদুর বাড়িতে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করে সিবিআই।
আরও পড়ুন, 'সম্মানের সঙ্গে বাঁচুন', বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারের ১০ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দিলেন মমতা
সিবিআই-এর সঙ্গে রবিবার সাক্ষাৎ করেন বগটুই গণহত্যায় স্বজন হারানো মিহিলাল শেখ। তিনি জানান, সিবিআই কিছু নথি চেয়েছিল। কারণ, গণহত্যায় নিহতদের দেহাবশেষের ডিএনএ টেস্ট হবে। সেই কারণে তিনি কিছু নথি জমা করতে সিবিআই-এর কাছে এসেছিলেন। লালন শেখ এখন কোথায় সেই খোঁজে লেগে রয়েছে সিবিআই-ও। এখন পর্যন্ত বগটুই গণহত্যায় অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসাবে গ্রেফতার হয়েছেন আনারুল হোসেন। সিবিআই হেফাজতেও তিনি অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে গণহত্যার কোনও যোগ নেই।