সংক্ষিপ্ত
রাজ্যে একুশের ভোটে বিরোধীদের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের ক্রাইমের লম্বা লিস্ট। কারণ বিরোধীদের হাতে ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
রাজ্যে একুশের ভোটে বিরোধীদের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের ক্রাইমের লম্বা লিস্ট (Crime List)। তবে বিরোধীদের ক্রাইমেরও তালিকা নেহাত কম নয়। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের হাতে ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কারণ কেন্দ্রে বসে রয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, বিজেপির সরকার। আর সেখানটাই পাল্লা ভারি ছিল গেরুয়া শিবিরের (BJP)। যদিও ক্রাইমসিন গুলি বেশিরভাগগুলিতেই মাথা চাড়া দেয় ভোটের ঠিক দোরগড়ায়। শিরোণামে উঠে আসে আইকোর, কয়লা কেলেঙ্কারি, গরুপাচার কাণ্ডের সঙ্গে উঠে আসে তৃণমূলের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের নাম। যার বড়সড় প্রভাবও পড়ে প্রাক ভোটের দিনগুলিতে বাংলার রাজ্য-রাজনীতিতে।
রাজ্যে কয়লা কেলেঙ্কারিতে নাম ওঠে তৃণমূল নেতার পাশাপাশি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োাপধ্যায়ের। যা কয়লাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল বিরোধী দলের। কয়লা কেলেঙ্কারির দায়িত্ব নেয় কেন্দ্র তদন্তকারী সংস্থা। অভিষেকের নাম জড়াতেই তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলাকেও তলব করে ইডি। একাধিকবার দিল্লিতে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। একদিকে তখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন হবে হবে করছে। তারই মাঝেই দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আর প্রায় প্রতিদিনই কয়লা কেলেঙ্কারি ইস্যু তুলে অভিষেক ও মমতাকে পিসি-ভাইপো আখ্যা দিয়ে তোপ দেগেছেন।ভোটের আগে বিজেপি যোগের পর শুভেন্দু তোপ দেগে বলেছিলেন, 'যতোদিন অবধি আমাদের সঙ্গে দিদি ছিল ততদিন সব ঠিক ছিল। কিন্তু দিদি যেই পিসি হয়ে গেল, তখন কেবল মাত্র ভাইপোকেই দেখে গিয়েছে। ভাইপোকে রক্ষা করে গিয়েছে এবং কীভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী করা যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়েছে। আমাদের শুধু ল্যাম্পপোস্ট বানিয়ে রেখেছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।' শুভেন্দু আরও বলেছিলেন, পিসি-ভাইপো কয়লা কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত । ৯০০ কোটি টাকা ভাইপোর কাছে গিয়েছে,' বলে অভিযোগ এনেছিলেন শিশিরপুত্র।
আরও পড়ুন, Round Up 2021: রাত পেরোলেই পুরভোট, ফিরে দেখুন বছরটাকে ভোট-ভাইরাসের গ্রাফে
তবে কয়লাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা। তার নাগাল পেতে গিয়ে রীতিমত কালঘাম ছুটেছে গোয়েন্দাদের।উল্লেখ্য, খাদান থেকে বেআইনিভাবে কয়লা তুলে পাচারের অভিযোগ লালার বিরুদ্ধে। এই কাজে লালাকে সাহায্য করেছে ইসিএল, নিরাপ্ততা সংস্থা সিআইএসএফ, রেলের উচ্চপদস্থ কর্মীচারীরাও। তার এই কর্মকাণ্ডে রাজ্য়ের একাধিক প্রভাবশালী ব্য়াক্তিরও যোগ রয়েছে। অভিযোগ, কয়লা পাচারের টাকা তাঁদের কাছে পৌছে দিতেন লালাই। পাচারের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে বিনয় মিশ্র এবং ভাই বিকাশেরও। ইতিমধ্যে বিকাশকে গ্রেফতারও করেছে ইডি। তাঁকে জেরা করে ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, কয়লা পাচারের মূল চক্রী লালার ব্যাবসা ছিল প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রভাবশালীদের পিছনেই ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এদিকে কয়লাকাণ্ডের জল গড়িয়েছে ভোটের পরেও। থামেনি কয়লা কেলেঙ্কারি তদন্ত। তবে ভোটের ফলাফলের পর অভিষেক বলেছিলেন, ' ভোটে হেরে গিয়ে এখন প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতিতে নেমেছে ওরা। এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া এদের আর কোনও কাজ নেই।'
অপরদিকে আইকোর মামলায় নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। প্রসঙ্গত, ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে একাধিক তলব করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ১৩ সেপ্টেম্বর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে শিল্পমন্ত্রীকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু সিবিআই-র দফতরে হাজিরা দেননি সেবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ভবানীপুরের উপনির্বাচন এবং বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে সিবিআই-কে চিঠি দিয়েছিলেন পার্থ। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, সিবিআই আধিকারিকরা চাইলে তাঁর বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।' তাঁর এই উত্তর পেয়ে সেবার সোজা পার্থর কর্মক্ষেত্র শিল্পভবনেই পৌছে যান সিবিআই-র তিন আধিকারিক। অপরদিকে, গরুপাচারকাণ্ডেও ভোটের আগে হেভিওয়েটদের নাম ওঠে।
সূত্রের খবর, সিবিআই অফিসারেরা তদন্তে নামতেই উঠে এল একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মধ্য কলকাতার রেস্তরা- কফিশপগুলিতে হামেশাই যাতায়াত লেগে থাকত এনামূল হক, আনারুল শেখ ও মহম্মদ মোস্তাকদের। আর এখান থেকেই গরু পাচার এবং টাকা পয়সার যাবতীয় লেনদেন চলত। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের মানুষদেরও গরুপাচার ঘিরে যাতায়াত ছিল। অপরদিকে, বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক গরু পাচার চক্রের মাথা এনামূল হকের যোগাযোগ আর পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের মুর্শীদাবাদে একটা বাড়ি আছে, যেটা এনামূল বানিয়ে দিয়েছে। তাঁর ছেলেকে চাকরীও দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষে উপহারের তালিকায় রয়েছে একটি গাড়িও। ক্ষমতায় আসার পরেই বাংলাদেশে গরু পাচার রোধে বিএসএফকে বিশেষ করে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। যার জেরে বাংলাদেশে অনেকটাই দাম বেড়েছে মাংসের। তবুও গরু পাচার বন্ধ করা যায়নি। কাদের মদতে এই পাচার কাণ্ড চলছে, তা জানতে অভিযান চালাচ্ছে সিবিআই কলকাতা-সহ রাজ্যে।গরুপাচার কাণ্ডে আরও অনেক তথ্য এবার হাতে লাগতে পারে অনুমান তদন্তকারিদের।