সংক্ষিপ্ত
২০২১ সালটা বাংলার জন্য ভোটের বছর ছিল। বছরের শুর থেকেই লেগেছিল ভোটের তোড়জোর। সবার প্রথমে বিধানসভা নির্বাচন, সেটা শেষ হতে না হতেই হয়েছে উপনির্বাচন, আর বছরের শেষ দিকে হয়েছে কলকাতা পুরভোট। রাজ্যজুড়ে ভোটের প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল গোটা বছরই। আর তার সঙ্গেই লেগে ছিল একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় থেকে বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি লেগেই ছিল। আর সেই সব স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়েই এবার নতুন একটা বছরকে স্বাগত জানিয়ে নেওয়ার পালা। তার আগে এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক গোটা একটা বছর যে যে বিষয়গুলি সবথেকে বেশি আলোচিত হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড়
২০২১ সালে মোট তিনটি ঘূর্ণিঝড় বাংলায় আছড়ে পড়েছিল। প্রথম বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপত্তি লাভ করে ২৩ মে একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসে বাংলার দিকে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল ইয়াস। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশ ও ওড়িশায় মূলত ঝড়টি প্রবল আকার ধারণ করেছিল। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০কিমি। তার জেরে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় গুলাব আঘাত আছড়ে পড়েছিল ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে। তারপর বছরের শেষ মাসেও ফের ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল বাংলায়। সেই ঝড়ের নাম ছিল জাওয়াদ। তবে এটি পশ্চিমবঙ্গে সেভাবে আঘাত করতে না পারলেও এর প্রভাবে কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এর জেরে জল জমেছিল শহর কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায়। এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০-৫৫ কিলোমিটার।
বিধানসভা নির্বাচন
২০২১ সালের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে এটি হল অন্যতম। একুশের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় ২০২০ সাল থেকেই। কারণ ঠিক তখন থেকেই লেগেছিল দলবদলের হিড়িক। প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচে দেখা যাচ্ছিল একাধিক নেতাকে। আর ওই সময় বাংলায় জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল বিজেপি। প্রাথমিক ভাবে গেরুয়া শিবির ভেবেছিল বাম, তৃণমূলকে পেরিয়ে বাংলাকে তারাই জয় করবে। আর তার জন্য সর্ব শক্তি দিয়েই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছিল তারা। মাঝে মধ্যেই রাজ্যে এসে প্রচার করতে দেখা যাচ্ছিল বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের। এমনকী, রাজ্যের পরিস্থিতি, নেতাদের গতিবিধি দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন তাহলে মনে হয় তৃণমূলেপর জামানা শেষ হল। এবার রাজ করবে বিজেপি। তবে মে মাসের ফলাফলের পর বদলে যায় ছবিটা। বাংলায় বিপুল মার্জিনে জিতে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসার পর বাংলার পাশাপাশি বাইরের একাধিক রাজ্যেও ক্ষমতায় দখলের স্বপ্ন দেখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই কারণে সেই রাজ্যগুলিতেও ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল। সেগুলি হল ত্রিপুরা, গোয়া, অসম।
আরও পড়ুন- রাজ্যে কয়লা কেলেঙ্কারি সহ একাধিক মামলায় CBI-ED, একুশে ভুগতে হল কোন নেতা-মন্ত্রীদের
উপনির্বাচন
তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতা দখল করলেও ভোটে জিততে পারেননি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ ওই নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে না লড়ে নন্দীগ্রাম থেকে লড়েছিলেন তিনি। আর সেখানে বিজেপির টিকিটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, সেখানে শুভেন্দুর কাছে হেরে যান তিনি। এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখার জন্য রাজ্যের কোনও না কোনও বিধানসভা আসন থেকে তাঁকে জিততে হতই। তারপর ফের ভবানীপুর আসন থেকে উপনির্বাচন লড়েন তিনি। এদিকে বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানে বিজেপির টিকিটে লড়াই করা রুদ্রনীল ঘোষকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এদিকে ভোটে জেতার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। কার্যত মুখ্যমন্ত্রীকে সেই পদ তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন মমতা। রেকর্ড মার্জিনে জিতে পরাস্ত করেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে।
অন্যদিকে আরও চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। একুশের বিধানসভা ভোটে দলের দুই সাংসদকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। দিনহাটায় প্রার্থী হয়েছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। আর রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে শান্তিপুরের প্রার্থী করেছিল বিজেপি। নির্বাচনে জয়ী হন তাঁরা দু'জনেই। কিন্তু, তারপরই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তাঁরা। তাই তাঁদের ছেড়ে যাওয়া দুই আসনে উপনির্বাচন হয়। অবশ্য উপনির্বাচনে সেই কেন্দ্র দুটি দখল করে তৃণমূল। দিনহাটার বিধায়ক হন উদয়ন গুহ ও শান্তিপুরের বিধায়ক হন ব্রজকিশোর গোস্বামী। এছাড়া বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা। কিন্তু, নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে ওই একই দিন সেখানেও উপনির্বাচন হয়। আর ভবানীপুর ছেড়ে দেওয়ার পর সেই জায়গায় লড়েছিলেন তৃণমূলের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানেও জয়ী হন তিনি। অন্যদিকে ভোটে জয়ী হওয়ার পর মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের। সেখানেও উপনির্বাচনের পর জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী।
আরও পড়ুন- বারেবারে মুখ থুবড়ে পড়ছে বামেরা, ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ পালে হাওয়া লেগেও শূন্য কেন ভোট বাক্স
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই
ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল বাংলায়। তৃণমূল সেই লড়াইয়ে ব্যাপক মার্জিনে জেতে। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রাজ্যে উঠে আসে বিজেপি। কিন্তু, তারপর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা নিয়ে সরব হয় তারা। সেই সময় বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ সামনে আসছিল। রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা নিয়ে সমীক্ষা বলছে সবথেকে বেশি হিংসা হয়েছে কোচবিহার ও বীরভূমে। এরপর বিষয়টি গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। তারপর ১৯ অগাস্ট হিংসার ঘটনায় আদালতের তরফে তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআই-এর হাতে। খুব ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলির তদন্ত করছে তারা। গোটা বাংলাকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করে অফিসাররা তদন্ত চালাচ্ছেন। নতুন করে বেশ কয়েকটি FIR-ও দায়ের করা হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারদের তরফে। এই গোটা ঘটনাকে হাতিয়ার করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে চেয়েছিল বিজেপি। এখনও পর্যন্ত এনিয়ে একাধিক মামলা চলছে।
ফিরহাদ, সুব্রত, মদন, শোভন গ্রেফতার
সালটা ২০১৬। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগেই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায় তৃণমূলের কিছু নেতা মন্ত্রী ঘুষ নিচ্ছেন। পরপর দুটি ভিডিও প্রকাশ হয়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ইকবাল আহমেদ, শঙ্কু দেব পান্ডা, অপরূপা পোদ্দার এবং পুলিশ অফিসার সৈয়দ এম এইচ মির্জাকে। ম্যাথু স্যামুয়েল জানিয়েছিলেন টাকার বান্ডিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আরও দুজনকে, এবং তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা হলেন সুব্রত বক্সি এবং দীনেশ ত্রিবেদী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। স্টিং অপারেশনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রথমে দায়িত্ব যায় ইডির হাতে, পরে ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নারদা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয় সিবিআইকে। তৃণমূল বলেছিল ভোটের আগে এসব চক্রান্ত করেছে বিরোধীরা। তবে সেই ফুটেজ ততদিনে দেখে ফেলে ছিলেন বাংলার সব মানুষ। আবার এই বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক পরই। গ্রেফতার করা হয়েছিল ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্রকে। আচমকা বাড়ি থেকে তুলে সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে। জানা গিয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে নারদকাণ্ড নিয়ে মামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন খোদ রাজ্যপাল। সেই নিয়ে রাজ্য এবং রাজ্যপালের বিবাদ চলেছে এক দফা। এরপর নিজাম প্যালেস থেকে তাঁদের পাঠানো হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। মদন মিত্র থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পরে সুব্রত মুখোপাধ্যায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেল থেকে এসএসকেএমের উডবার্নে গিয়েছিলেন। জেলে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। বেশ কয়েকদিন জেল এবং হাসপাতালের পর ছাড়া পান তাঁরা। পরে ছাড়া পেয়েছিলেন ফিরহাদও।
আরও পড়ুন- ইয়াস থেকে জাওয়াদ চলতি বছর কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাকে, কেন বঙ্গোপসাগরই মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়
মুকুল ও রাজীবের তৃণমূলে ফেরা
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে তৃণমূল দল ত্যাগ করেছিলেন মুকুল রায়। সেইসময় তিনি ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং রাজ্যসভার সাংসদও। তিনি রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, পারিবারিক দল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছিলেন। সেইসময় তাঁকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছিল দল। তারপর আবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২১ সালে ফের তৃণমূলে ফেরেন মুকুল।
অন্যদিকে একুশের বিধানসভা ভোটের (Assembly Election) মাসদুয়েক আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। মমতার (Mamata Banerjee) ছবি হাতে নিয়ে চোখের জলে তৃণমূল ছেড়েছিলেন তিনি। তারপর তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। পাল্টা তাঁকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। নির্বাচনের প্রচার সভা থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের অন্য নেতারা। 'গদ্দার' তকমাও জুটেছিল রাজীবের ভাগ্যে। এরপর বিজেপির টিকিটে ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ফলপ্রকাশের পর রীতিমতো হতাশ হন। নিজের কেন্দ্রতেও তিনি জিততে পারেননি। তারপর থেকেই তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৯ মাস পর তৃণমূলে ফেরেন তিনি।
কলকাতা পুরভোট
২০২১ সালটা বাংলার জন্য ভোটের বছর ছিল। ২১-এর শুরুতে বিধানসভা নির্বাচন, বছরের মাঝে উপনির্বাচন আর শেষে পুরভোট। কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় পুরভোটের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। কোথাও ২০১৮ তে, কোথাও ২০২০ তে। বিরোধীরা পুরভোট চেয়ে দরবার করেছে বহুবার। শেষ পর্যন্ত গোটা রাজ্যের এক সঙ্গে না হলেও কলকাতা পুরভোট হয়েছে। একসঙ্গে ভোট করানোর প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল সেই পরিমাণ কাঠামো নেই তাঁদের। কবে হবে বাকি পুরভোট তা নিয়ে আদালতে গিয়েছিল বিরোধী দল। সম্প্রতি বাকি ভোটের দিন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে। সেই ভোট হবে আগামী বছর জানুয়ারিতে। এদিকে তার আগেই কলকাতা পুরসভায় ভোট হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ দিয়েই ভোট হয়েছে বঙ্গে। অবশ্য একাধিকবার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে চেয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু, তাতে সায় দেয়নি কমিশন। কমিশনের মতে সিলমোহর দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আর তার ফল হিসেবে ভোটের দিন তিলোত্তমায় ছাপ্পা, রিগিং ও বোমাবাজি হয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বিরোধীরা তা নিয়ে আদালতে গেলেও কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। এরপর ফল প্রকাশ হয় ২১ ডিসেম্বর। তাতে দেখা যায় ১৪৪টি আসনের মধ্যে ১৩৪ টাই গিয়েছে তৃণমূলের ঘরে। বাকি ১০টা আসন ভাগ করেছেন বিরোধী তিন দল সহ নির্দলের প্রার্থীরা। আসন সংখ্যার নিরিখে বাম তৃতীয় এবং বিজেপি দ্বিতীয় হলেও, প্রাপ্ত ভোটের দিক থেকে গেরুয়া শিবিরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে সিপিএম। বামেদের ভোটের পরিমাণ বেশ ভালোই বেড়ে গিয়েছে।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর কলাইকুন্ডায় ইয়াস পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে চরমে উঠেছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সঙ্ঘাত। সেই বৈঠকে কেন আলাপন যোগ দেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। এমনকী, এরপর আলাপনকে দিল্লিতে বদলির নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে দিল্লির সেই নির্দেশ এড়াতে তড়িঘড়ি মুখ্যসচিব পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। কিন্তু, তাতেও সঙ্ঘাত থামেনি। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। আরও মুখ্যসচিব হন এইচ কে দ্বিবেদী।
গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনিয়ম
স্কুল সার্ভিস কমিশনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পরে তা নিয়ে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ২০১৯ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রচুর নিয়োগ হয়েছে বলে মামলা দায়ের হয় আদালতে। প্রাথমিক ভাবে ওই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল কমিশনের বিরুদ্ধে। কিন্তু, পরে কমিশন আদালতে জানায়, ওই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সুপারিশ তারা করেনি। এরপর অভিতেই জড়িয়ে পড়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নাম। আদালতে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন পর্ষদের আইনজীবীও। তিনি জানান, পর্ষদ নিজে থেকে কোনও নিয়োগ করেনি। কমিশনের সুপারিশ মেনেই হয়েছে যাবতীয় নিয়োগ। এরপরই একক বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। প্রথমে বলা হয় এই দুর্নীতির তদন্ত করবে সিবিআই। যদিও পরে বলা হয় এই মামলায় সিবিআই অনুসন্ধান হবে না। বদলে গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছিল কি না বা হলে কীভাবে হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে বিশেষ অনুসন্ধানকারী দল। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে একথা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে মাথায় রেখে বিশেষ অনুসন্ধানকারী দল গড়ে এই মামলার অনুসন্ধান করতে হবে। এসএসসি-র গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আগেই সিবিআইকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে যায়। তখনই সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। জানানো হয় গ্ৰুপ-ডি নিয়োগ মামলার অনুসন্ধান করবে বিশেষ অনুসন্ধানকারী দল। প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে ওই দলে থাকবেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের আশুতোষ ঘোষ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সহ-সচিব (প্রশাসন) পারমিতা রায় এবং হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু
২৪ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরীক্ষা চলাকালীনই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। এরপর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে উডবার্নের আইসিসিউ-তে ভর্তি করেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে কার্ডিওলজি আইসিইউ-তে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। সুব্রতকে ‘নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন’ বা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল অক্সিজেনও। পরে তাঁর বুকেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় গত সপ্তাহে বাইপ্যাপ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন সুব্রতর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও করা হয়। দুটি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। তারপর ঠিকই ছিলেন তিনি। কিন্তু, ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরপর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিনি স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তারপর রাত ৯টা ২২ মিনিটে সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাত ১১টা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তপসিয়ার পিস ওায়ার্ল্ডে। এরপর ৫ নভেম্বর সকালে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অনুরাগীরা। পরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।