
পুলিশের সামনে দিয়েই বেআইনিভাবে গরু পাচার, ধরে ফেললেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অন্যদিনের মতোই কলকাতা হাইকোর্টের ওকালতি সেরে বাড়ির পথ ধরেছিলেন আইনজীবী সায়ন সচিন বসু। সাউদার্ন অ্যাভিনিউ-এর কাছে বাড়িতে ফিরতে রোজই তিনি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তাজ বেঙ্গলের সামনে দিকের রাস্তা ধরেন।
মঙ্গলবার বিকেলেও তাজ বেঙ্গলের সামনে দিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরেছিলেন সায়ন সচিন। হঠাৎ একটি ছোট ম্যাটাডোর ভ্যানের দিকে নজর যায় তাঁর। দেখতে পান গাড়ির পিছনের বনেট পার করে কতগুলো শিং বেরিয়ে রয়েছে। গাড়ি নিয়ে গিয়ে ওই সন্দেহজনক ভ্যানের পথ আটকান সায়ন সচিন।
ভ্যানের চালককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন ভ্যানে মোট ১৭টি গরু রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এই গরু কিনে তারা এখন দক্ষিণ ২৪ পরগণায় বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু, এই গরু কেনার কোনও রসিদ বা গরু নিয়ে যাওয়ার কোনও সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি চালক এবং তার সঙ্গীরা।
এরপর-ই ১০০ ডায়াল করে পুলিশকে ঘটনাস্থলে ডাকেন সায়ন। অভিযোগ, প্রথমে এক সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে এলেও তিনি গরু ভর্তি গাড়ি দেখে চলে যান। এরপরও এক পিসিআর ভ্যান আসে, তারাও বিষয়টিকে আমল না দিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ। উপায় না পেয়ে কাছেই আলিপুর থানায় ফোন করেন আইনজীবী সায়ন সচিনের। সেখান থেকে পুলিশ আসে। প্রাথমিত জিজ্ঞাসাবাদে ভ্যানের চালক এবং তার সঙ্গীরা কেউ এতগুলো গরু নিয়ে যাওয়ার কোনও সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এরপরই পুলিশ বেআইনিভাবে গরু পাচারের অভিযোগ ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। আর সেই সঙ্গে গরু ভর্তি গাড়িটিকেও আটক করা হয়।
আলিপুর থানায় ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে অভিযোগও দায়ের করেন। পশু নির্যাতন আইনে ভারতীয় দণ্ডবিধি-র আন্ডার সেকশন ১২০ বি এবং সেকশন ১১ডি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আলিপুর থানায় দায়ের হওয়ার এই অভিযোগের কেস নম্বর ৬৮/২৩।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা জানিয়েছে তারা স্থানীয় বাজারে গরুগুলোকে বিক্রি করবে বলে নিয়ে যাচ্ছিল। আইনজীবী সায়ন সচিন বসু জানিয়েছেন, ধৃতরা জানিয়েছে গরুগুলো তারা মেদিনীপুর ও বহরমপুর থেকে কিনেছে। এতগুলো জেলা পেরিয়ে এরা গরু কিনল শুধু নয় সেই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার মধ্যে দিয়ে এক জেলা থেকে আর এক জেলায় গেল অথচ পুলিশের চোখে পড়ল না! পুলিশের কী করে এই বেআইনি গরু পাচারের ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারে! তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সায়ন সচিন বসু। এমনকী, তাজ বেঙ্গলের সামনের রাস্তায় আসার সময় গরু ভর্তি গাড়িটি দ্বিতীয় বিদ্যাসাগর সেঁতু পার হয়েছে। সেখানেও পুলিশ ভর্তি থাকে। তাদর চোখে কেন পড়ল না এমন ঘটনা তাতেও সন্দেহ উসকে দিয়েছেন সায়ন সচিন। তাঁর অভিযোগ আসলে এভাবেই দিনের পর দিন রাজ্য থেকে কলকাতা- সর্বত্রই গরু পাচার হচ্ছে বেআইনিভাবে কিন্তু প্রশাসনের তাতে কোনও নজর নেই। বুধবার এই গরু পাচারকাণ্ডে ৪ জনকেই বিকেলে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। নিজের দায়ের করা মামলায় নিজেই সওয়াল করেন আইনজীবী সায়ন সচিন বসু এবং পুলিশ ও প্রশাসনের গাফিলতিকেও আদালতের নজরে নিয়ে আসেন তিনি।
আরও পড়ুন -
বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, রাজ্যজুড়ে চলবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত
পুজোর আগেই চালু হবে মাঝেরহাট মেট্রো, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি