দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাড়ছে হিন্দি পড়ার ঝোঁকই। কিন্তু কেন নিজের ভাষার প্রতি আগ্রহ কমছে নতুন প্রজন্মের? যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুললেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার।
বাংলা ভাষা 'নন এক্সিস্টেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ', স্কুলে প্রয়োজন নেই বাংলার শিক্ষিকার। টার্মিনেশনের চিঠিতে এমনই কথা লিখেছিল কলকাতার নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আরিয়াদহ নওদাপারা হোলি চাইল্ড। চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। ঘটনার তিন দিনের মাথায় ওই শিক্ষিকা চাকরি ফিরে পেলেও এই ঘটনা যেন বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সংকট নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি অবশ্য গোটা ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের থেকে অনেক বেশি দোষের ভাগিদার মানেন অভিভাবকদের। তাঁর কথায়,'এই অপরাধটা স্কুলের যতটা তাঁর চেয়ে অনেক বেশি অভিভাবক অভিভাবিকাদের। কারণ তাঁরাই ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর জন্য হন্যে হয়ে পড়ে এবং এটা বিশ্বাস করেন না যে বাংলা মাধ্যমে পড়েও ভালো ইংরেজি শেখানোর ব্যবস্থা করা যায়।' এই প্রসঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকেও অনেকাংশে দায়ী করেছেন। তিনি বললেন,'রাজ্য সরকার যদি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি ভালো করে শেখানোর ব্যবস্থা করতেন, তাহলে অভিভাবকরা এত পরিমানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি ঝুঁকতেন না।' পাশাপাশি শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি 'ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে আদৌ কতটা ভালো করে ইংরেজি শেখানো হয় সে বিষয়ও সন্দেহ আছে। কতজন শিক্ষক সত্যি সত্যিই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।'
আরিয়াদহ নওদাপারা হোলি চাইল্ড স্কুলের বাংলার শিক্ষিকার অপসারণ পত্রে উঠে এসেছিল বাংলা ভাষার প্রতি ছেলেমেয়েদের অনাগ্রহের কথা। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাড়ছে হিন্দি পড়ার ঝোঁকই। কিন্তু কেন নিজের ভাষার প্রতি আগ্রহ কমছে নতুন প্রজন্মের? প্রশ্নের উত্তরে ফের অভিভাবকদের মানসিকতাকে দায়ী করলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেছেন,'এক্ষেত্রে আমি স্কুলকে দোষ দেব না। ছাত্রছাত্রীদের তো স্কুল বলে দিচ্ছে না দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি নিতে। তাঁদের ঠেলা দিচ্ছে তাঁদের বাবা মা, যে বাংলা পড়ে লাভ নেই হিন্দি পড়। তাই আমি এখানে দোষ দেব সেই সব অভিভাবক এবং অভিভাবিকাদের যাঁরা ভাবেন বাংলা পড়ে লাভ নেই বরং ইংরেজি তো পড়তেই হবে তা ছাড়া হিন্দি পড়া বাংলার চেয়ে ভালো।'
পশ্চিমবঙ্গের স্কুলের চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'নন এক্সিস্টেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ'-এর তকমা। তবে কি সত্যিই অস্তিত্ব সংকটে বাংলা ভাষা? শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষের এই আচরণকে 'অশিক্ষিত মন্তব্য' হিসেবে উল্লেখ করে স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়,'এটা অশিক্ষিত মন্তব্য। একেবারেই ভাওতা। এই ধরনের ভাষায় লেখার জন্য কর্তৃপক্ষের যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে তাঁর জন্য তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।' বাংলা ভাষা যে কোনও ভাবেই 'নন এক্সিস্টেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ' নয় তা স্পষ্ট করতে তিনি বলেছেন,'বাংলা নন এক্সিস্টেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ নয়। বাংলার স্কুলগুলিতে এখনও বাংলার ভিত্তি আছে। যদিও নানা দুর্নীতির জেরে এখন বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির অবস্থা ভালো নয়। অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবু আমি বলব বাঙালির চর্চায় বাংলা ভাষা দিব্যি জ্যান্ত আছে।' কেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে অভিভাবকদের? রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোই কি দায়ী? ইংরেজি শিক্ষার প্রতি রাজ্য সরকারের উদাসীনতাই কি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে আরও অবনমনের পথে ঠেলে দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য সকরকারকে তোপ দাগলেন শিক্ষাবিদ। তিনি বললেন,'শুধু ইংরেজি শিক্ষা নয়। সব রকমের শিক্ষার প্রতিই রাজ্য সরকারের উদাসীনতা ইদানিং প্রকাশ পাচ্ছে। তা নাহলে শিক্ষক নিয়োগে এত বড় দুর্নীতি হত না। রাজ্য সরকার সত্যি সত্যি শিক্ষাটা চলুক এটা চান বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু যদি রাজ্য সরকারের বিন্দুমাত্র সদিচ্ছা থাকে তবে তাঁদের উচিত বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও ভালো করে শেখানোর ব্যবস্থা করা।'
আরও পড়ুন -