যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যুতে উঠে আসছে র্যাগিং-এর তত্ত্ব। এই ঘটনার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা। ঘটনার তীব্র অভিঘাত এসে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যুতে উঠে আসছে র্যাগিং-এর তত্ত্ব। এই ঘটনার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা। ফেসবুকজুড়ে ঘুরছে 'যাদবপুর তুমি খুনি' পোস্টার। আক্রমণ পালটা আক্রমণে ক্রমশ বেড়ে চলেছে বিতর্ক। তবে ঘটনার আঁচ শুধুমাত্র তর্ক-বির্তকেই সীমাবদ্ধ নেই। ঘটনার তীব্র অভিঘাত এসে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাইবার বুলিং-এর শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। সমাজমাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকী বাদ থাকছে না লৈঙ্গিক পরিচিতি নিয়ে আক্রমণও। পড়ুয়াদের অভিযোগ সমাজমাধ্যমে ক্রমাগত হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ঘটনায় রীতিমত আতঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অকথ্যভাষায় গালিগালাজ এমনকী বেশ কিছুক্ষেত্রে 'অপরাধমূলক ব্যবসার' সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও তোলা হচ্ছে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক প্রাক্তন ছাত্রীর অভিযোগ, ফেসবুকে তাঁকে তাঁর লৈঙ্গিক পরিচয় তুলে আক্রমণ করা হয়েছে। দীপান্বিতা পাল নামক ওই প্রাক্তনী জানিয়েছেন,ফেসবুকের একটি পোস্টের কমেন্টে সেকশনে এক ব্যক্তির সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি, সেখান থেকেই আচমকাই তর্কের মোর ঘুরে তাঁকে হোমোফোবিক অ্যাটাক করা হয়। দীপান্বিতার কথায়,'আমি তাঁকে বারবার বলি যে আপনিও আমাদের সঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হন। কিন্তু উনি আমাদেরই খুনি বানাতে ব্যস্ত। কথাকাটাকাটির মধ্যে হঠাৎ করে আমার সেক্সুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে এল।'
এখানেই শেষ নয়, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিফেমিং, এমনকী হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী। লালবাজারের সাইবার সেলে ঘটনার অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী জানিয়েছেন,'ফেসবুকের একটি মিম পেজ আমার অনুমতি ছাড়াই আমার ছবি তাঁদের পেজে পোস্ট করেন, এবং যার জেরে আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। এমকী আমার লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।' ইতিমধ্যেই এই ঘটনার অভিযোগ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক প্রাক্তনী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন ফেসবুকে ধর্ষনের হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি থেকেই অকথ্য ভাষায় গালাগ এমনকী হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই আক্রমণের ঘটনা শুধুমাত্র সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আটকে নেই। রাস্তায় ঘাটেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সাংবাদিকতা বিভাগের অপর এক ছাত্র জানিয়েছেন,'গত ১৩ অগাস্ট একটি সরকারি পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় বাসের জন্য নন্দনের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। সেখানেই এক ব্যাক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার নাম(এখন মনে নেই) বলায়,ভদ্রতার খাতিরে আমাকেও কথা বলতে হয়। কথা বলতে গিয়ে যাদবপুরের স্টুডেন্ট বলায় সে সঙ্গে সঙ্গে আমায় বলেন,'তোমরা তো হার্মাদ,তোমাদের সকলের শাস্তি হওয়া দরকার।' এরপরে সেই ব্যাক্তি তোমার পাশে দাঁড়ানো ঠিক নয় গোছের যাবতীয় কথা বলতে বলতে সরে দাঁড়ান। আশেপাশের লোকেরাও তাঁকে সমর্থন জানান। আমি ভয়ে বেশি কিছু না বলে চুপ করে যাই।কিন্তু আমার মনে এর একটা গভীর প্রভাব পরেছে বুঝেছিলাম।'
একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ পড়ুয়াদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, বিনা দোষে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে 'খুনি' বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে? ঘটনার জেরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান তাঁরা।