গত এক মাসে রাজ্য সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে যেভাবে একের পর এক আক্রমণ বান হেনেছেন শুভেন্দু অধিকারি, তাতে এই সৌজন্য সাক্ষাত নেহাতই শিশু।
নবান্নে পা পড়েছে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছেন তিনি। বেরোবার সময় বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে এগিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এপর্যন্ত প্রশাসনিক পদমর্যাদার দিক থেকে সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে সংবেদনশীল বঙ্গভূমিতে এত সহজে কি রাজনীতির খেলা বোঝা যায়? সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতা-শুভেন্দুর এই সাক্ষাতকে রাজৈনিতক বিশ্লেষকরা প্রদীপের তলায় অন্ধকার হিসেবেই দেখছেন। কারণ গত এক মাসে রাজ্য সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে যেভাবে একের পর এক আক্রমণ বান হেনেছেন শুভেন্দু অধিকারি, তাতে এই সৌজন্য সাক্ষাত নেহাতই শিশু।
কি কি আক্রমণ ধেয়ে এসেছে শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে গত এক মাসে, চলুন দেখে নিই সেই পরিসংখ্যান
১. তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রামায়ণের ‘পূতনা রাক্ষসী’র সঙ্গে তুলনা করেন শুভেন্দু অধিকারি। কখনও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলনা করলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সঙ্গে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন ‘লেডি কিম’। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘রাজনীতির বাইরেও যে সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক, আত্মিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্কটা পশ্চিমবাংলায় মমতা ব্যানার্জির মত একজন লেডি কিম তুলে দিয়েছেন। এই পূতনা রাক্ষসীর হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাব।’
২. টেট আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন ও এক আন্দোলনকারীর হাত পুলিশ কামড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কড়া ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লেখেন মমতার পুলিশের নতুন হিংস্র রূপ সামনে এল। রেজিমেন্টের প্রমিলা বাহিনীকে কেন ব্যবহার করা হয়েছে, তা বোঝা গেল।
৩. কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে তৈরি করা হাসপাতাল অনৈতিকভাবে উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অভিযোগ তুলে শুভেন্দু অধিকারী সরব হন। ও রাজ্য সরকারের এই অবৈধ কাজের প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাবেন।
৪. রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুকে অপমান করে তীব্র সমালোচনার মুখে অখিল গিরি। এই ইস্যুতে সরব হন শুভেন্দু অধিকারী। তৎকালীন রাজ্যপাল লা গণেশনকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ও তৃণমূলের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা।
৫. কয়লাকান্ডে মমতার সরকারকে কোণঠাসা প্রায়ই করেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতা বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, কয়লা দুর্নীতির ১০০০ কোটি টাকা রাজ্যে পুলিস প্রশাসন নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘরে গিয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কয়লা পাচারের সঙ্গে বড় চক্র যুক্ত আছে। সেই চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগ আছে। কয়েকদিন আগে দিল্লির আদালতে গুরুপদ মাঝির নামে যে চার্জশিট পেশ হয়, সেখানে এই উল্লেখগুলি রয়েছে। নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু
৬. মা সারদার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করেন নির্মল মাঝি। তা নিয়ে সরব হন শুভেন্দু। কেন সারদা মায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা? ব্যাখ্যা দিতে হবে’ নির্মল মাজিকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন ‘তোলামূলের সংস্কৃতি কী? বলছে মা সারদা নাকি জন্মেছেন কালীঘাটে’।
৭. রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়েও মমতা সরকারকে শুভেন্দু অধিকারির আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছিলেন ডেঙ্গিতে রাজ্যে চিকিৎসক ও পুলিশ-সহ বহু মানুষের মৃত্যু হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় কেন বিবৃতি দিচ্ছেন না? শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াকআউট করেন। গেরুয়া শিবির স্লোগান দিতে থাকে, 'মশাদের সরকার/আর নেই দরকার।' রাজ্য সরকার ডেঙ্গি মোকাবিলায় উদ্যোগী নয়, এমন বার্তা দিতে বিজেপি বিধায়করা মশারি নিয়ে বিধানসভার প্রাঙ্গণে এবং সামনের রাস্তায় মিছিল করে।
৮. কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাওয়া নিয়ে মমতা-শুভেন্দু বিবাদ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম বদলে বাংলা বাড়ি নাম দিয়ে রাজ্য সরকার প্রচার করে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। এমনকি সম্প্রতি, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে CBI তদন্তের দাবিতে, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু। এই নিয়ে কখনও প্রধানমন্ত্রী, তো কখনও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে চিঠি লিখেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপরই কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
৯. সম্প্রতি নতুন রাজ্যপালের শপথে গ্রহনে আসন-বিতর্ক! বসার ব্যবস্থা নিয়ে খুশি হননি শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যপালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশও নেনি তিনি। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্যুইট করলেন শুভেন্দু। সেই ট্যুইটেই বসার জায়গার ছবি দেখিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। 'বিজেপি ত্যাগী দুই বিধায়কের পাশে কেন আসন? তৃণমূলে যোগ দেওয়া কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসের পাশে কেন আসন? প্রশ্ন তুলে শপথ অনুষ্ঠানে থাকলেন না শুভেন্দু অধিকারী।