
সকালে দুধ আনতে এবং ময়লা ফেলতে বেরিয়ে ১৫ মিনিটের আগেই রোজ বাড়ি ফিরে আসত যে মেয়ে, সে একঘণ্টা পরেও ফিরে এল না কেন? এই প্রশ্নেই আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল মায়ের মন। রবিবার সকাল ৯টা থেকে খোঁজ শুরু করেন ভীত বাবা। পাড়ায় প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়ের খোঁজ শুরু করলেও একটি ফ্ল্যাটে যাননি তাঁরা। কারণ, সেই নির্দিষ্ট একটি ফ্ল্যাটেই বাইরে থেকে বন্ধ করা ছিল দরজা। আর, সেই ফ্ল্যাটেই ঘটে গেল ভয়ঙ্কর কাণ্ড। সোমবার সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কলকাতায় পা রাখার আগেই কলকাতা পুলিশের চূড়ান্ত গাফিলতির নজির দেখতে পেল শহরবাসী।
ঘটনাস্থল কলকাতার তিলজলা। এখানেই রবিবার সকালবেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বছর সাতেকের ছোট্ট নাবালিকা। রাস্তার কুকুরকে ভয় পেয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে সে ঢুকে গিয়েছিল পাশের ফ্ল্যাটে। সেই ফ্ল্যাটেই হঠাৎ একটি দরজার ভেতর থেকে তাকে টেনে নেওয়া হয় ভেতরে। কোনও চিৎকার করার আগেই তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় রান্নাঘরের সিলিন্ডারের সঙ্গে। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে নির্মম নির্যাতন। সকালে বারবার আতঙ্কিত অবস্থায় তিলজলা থানায় ছুটে আসতে থাকেন শিশুর বাবা। বারবার থানায় যাওয়ার কারণে তাঁকে প্রচণ্ড ধমক দেন থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। এরপরেও যখন নিরুপায় অবস্থায় শিশুর বাবা চতুর্থবারের জন্য থানায় ছুটে আসেন, তখন পুলিশকর্মীরা ‘এক থাপ্পড় মারব’ বলে তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং শিশুর বাবার বয়ান অনুযায়ী, এরপর থানায় লিখিত অভিযোগ লেখানো হলে সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ৪ জন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা এলাকায় খোঁজখবর করা শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করার অনুরোধ জানান। কিন্তু, অভিযোগ উঠেছে যে, তখনও চূড়ান্ত গাফিলতি করে ওই পুলিশকর্মীরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক তো করেনইনি, উলটে তাঁরা যখন দেখলেন যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি অলোক কুমারের ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল, অথচ ভেতরে তাঁকে দেখা গিয়েছিল এবং দরজা খুলতে বলা হলে তিনি বলেন যে, তিনি রান্না করছেন, তখন পুলিশ কর্মীরা তাঁকে একেবারেই জোর করেননি দরজা খোলানোর জন্য। সেই সময়ে তাঁরা আবার থানায় ফিরে যান এবং বেপাত্তা শিশুর জন্য কেউ মাথাই ঘামাননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩২ বছর বয়সী অলোক কুমার বিহারের সমস্তিপুর থেকে কলকাতায় এসে সেলুনের কাজ করত। সে ফ্ল্যাটের ভেতরেই ছিল এবং ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। রাত ৯টা নাগাদ পুলিশ আসে এবং তখন সন্দেহ হওয়ায় অলোকের ফ্ল্যাটের দরজা খোলানো হয়। তখন দেখা যায় তার রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে বস্তায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে শিশুর দেহ। অর্থাৎ, অভিযোগ শিশুর মায়ের বক্তব্য, অলোক তাঁর মেয়েকে এতও অত্যাচার করেছিল যে শিশুকন্যার জিভ বাইরে ঠেলে বেরিয়ে এসেছিল, তার মাথায় স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফুটো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল অলোক, ঘাড়ে, কানের পাশে, হাতে, শরীরের সর্বত্র মোটা ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে ফুটো ফুটো করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তখন তাড়াতাড়ি পুলিশ কর্মীরা মৃতদেহ নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান এবং অলোককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। জেরা করার সময় অলোক খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু, সে ভেতরে থাকাকালীন কে তার ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করেছিল, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এর পাশাপাশি যে পুলিশকর্মীরা শুরু থেকেই গাফিলতি করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল কিনা, তা-ও জানানো হয়নি কলকাতা পুলিশের তরফে। রাতে বিক্ষোভকারী জনতার কাছে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, ধৃত অলোক কুমারকে আজই আদালতে পেশ করা হবে।
আরও পড়ুন-
গ্রামের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শিক্ষার অভাব? এবার শিক্ষা দিতে এগিয়ে এসেছে শহরের ছাত্রছাত্রীরাই
সাভারকারকে অপমান করবেন না, বিরোধী জোটে ফাটল তৈরি হবে: রাহুল গান্ধীকে উদ্ধব ঠাকরের সতর্কবার্তা