এক যুবতীর সঙ্গে ভিকি হালদারের সঙ্গী শুভঙ্কর মণ্ডলের সম্পর্ক তৈরি হয়েছল। সেই যুবতীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। কিন্তু, রোজগার ভালো ছিল না। তাই টাকার লালসাতেই কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকী ও তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলকে খুন করে লুঠপাটের ছকে শামিল হয়েছিল।
গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় (Gariahat double murder case) মুম্বই (Mumbai) থেকে গ্রেফতার (Arrest) করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদারকে। এদিকে তাকে জেরা করার পরই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে। খুলছে একের পর এক জট।
এক যুবতীর সঙ্গে ভিকি হালদারের সঙ্গী শুভঙ্কর মণ্ডলের সম্পর্ক তৈরি হয়েছল। সেই যুবতীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। কিন্তু, রোজগার ভালো ছিল না। তাই টাকার লালসাতেই কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকী ও তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলকে খুন (Murder) করে লুঠপাটের ছকে শামিল হয়েছিল। ভেবেছিল সেখান থেকে তারা অনেক টাকা জোগার করতে পারবে। আর কাজ হয়ে যাওয়ার পরই সেখান থেকে চম্পট দেবে।
কাজ সঠিকভাবেই হয়ে গিয়েছিল। জোড়া খুনের পরই কলকাতা থেকে মুম্বইতে পাড়ি দিয়েছিল শুভঙ্কর ও ভিকি। সেখানেই তারা গা ঢাকা দিয়েছিল। এমনকী, ১০ হাজার টাকার নিরাপত্তারক্ষীর চাকরিও জুটিয়ে নিয়েছিল। শুভঙ্করও একই বেতনে যোগ দিয়েছিল। মুম্বই গিয়ে নতুন মোবাইলও কিনেছিল ভিকি। ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে নিয়েছিল সিম। তাদের গ্রেফতারের পর মোবাইল, সিম ও নিয়োগপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন- দীপাবলির উপহার, পেট্রল ডিজেলের দাম কমাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার
এদিকে ঘটনার পর সুবীর চাকি ও রবীন মণ্ডলের আঙুল থেকে সোনা ও রূপোর আংটি খুলে নিয়েছিল ভিকি। এরপর সেই আংটি এক বন্ধুর কাছে জমা রাখে। বিনিময়ে সেই বন্ধুর থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। আর সেই টাকা নিয়েই পাড়ি দিয়েছিল মুম্বইতে। সেখানে গিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করেছিল সে। ভেবেছিল খুনের ঘটনায় তাকে কোনওভাবেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে না। কিন্তু, তা আর হয়নি। অবশেষে খুনের প্রায় সপ্তাহ তিনেকের মাথাতেই মুম্বই থেকে কাঁকুলিয়া খুনের মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদার ও শুভঙ্কর মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
আরও পড়ুন- বাংলার উন্নয়ন নিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা অধীর চৌধুরির, নতুন স্থল বন্দর তৈরির প্রস্তাব
যদিও ভিকির দাবি, মা মিঠু হালদারের প্ররোচনায় এই অপরাধ করতে রাজি হয়েছিল সে। মিঠুই তার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। এরপর এই ঘটনায় ভিকি সত্যি কথা বলছে কিনা তা যাচাই করতে মিঠু ও ভিকিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। অস্ত্র ও লুঠের জিনিসের সন্ধান চলছে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার পুনর্নির্মাণেরও প্রয়োজন রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ভিকির দাবি, সুবীর চাকির কাছে অনেক টাকা ও গয়না আছে মনে করেছিল মিঠু। তারপরই ছেলেকে দিয়ে সেখানে ডাকাতির ছক কষেছিল। যেহেতু ভিকিকে সুবীর ও রবীন দু’জনই চিনতেন। তাই ধরা পড়ার ভয়েই তাঁদের খুনের ছক কষা হয়।
কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িটির ক্রেতা সেজে ঢোকার পর শুভঙ্কর মণ্ডল ও সঞ্জয় মণ্ডল যায় তিনতলায়। ভিকি, বাপি ও জাহির দোতলায় কথা বলছিল সুবীরের সঙ্গে। শুভঙ্কর ও সঞ্জয় প্রথমে রবীনকে খুন করে। তারপর সেই অনুযায়ী বাকিদের সিগন্যাল দেয়। এরপর সুবীরের বুকের উপর চেপে বসে তাঁকে খুন করে ভিকি। তারপর সেখান থেকে পাড়ি দিয়েছিল মুম্বইতে। তবে ভিকি ও শুভঙ্কর মোবাইল ব্যবহার করত না। কিন্তু, অন্য এক জনের মোবাইল থেকে ওই বন্ধুকে ফোন করেছিল ভিকি। তখনই মোবাইল ট্র্যাক করে পুলিশ। মোবাইলের সূত্রেই জানা যায় ভিকি মুম্বইতে। তারপর আর মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে সোজা মুম্বইতে পাড়ি দেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা খোঁজ চালান। তারপরই নির্মীয়মাণ একটি বহুতল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভিকিকে।