অভাবে পরিবারকে মেরে নিজেও আত্মঘাতী স্বামী। একদিকে আংশিক লকডাউন নেই কোনও কাজকর্ম, সংসারের অভাব ও আর্থিক অনটন সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী ও তিন কন্যা সহ তিনজনকে আগুনে পুড়িয়ে নিজেও আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্বামী। রোমহষর্ক ও অত্যন্ত মর্মান্তিক একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ থানার বিষ্ণুপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ভরতপুর গ্রামে।
আরও পড়ুন, হিংসায় বিধ্বস্ত নন্দীগ্রাম, বেধড়ক মারে BJP কর্মীর মৃত্যু, আজই পরিদর্শনে যাচ্ছেন রাজ্যপাল
শুক্রবার রাতে পরিবারের সকলের খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে গেলে বন্ধ ঘরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় স্বামী রাম ভৌমিক। আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে মৃত্যু হয় স্বামী রাম ভৌমিক ( ৪০), স্ত্রী শঙ্করী ভৌমিক (৩২), কন্যা পরনা ভৌমিক (৭), সরস্বতী ভৌমিক ( ৪)। ১২ বছরের কন্যা রানী ভৌমিক সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায় রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাঁরও মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য এবং শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিন সকালে ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে হেমতাবাদ থানার পুলিশ। মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠানোর পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে হেমতাবাদ থানার ভরতপুর এলাকার কিসমত মালভুসা গ্রামে ৩ কন্যা সন্তান ও স্ত্রী শঙ্করীকে নিয়ে বসবাস করতেন রাম ভৌমিক। একটি ভুটভুটি ফাইটার চালিয়ে কোনওরকমে তিন কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান করতেন রাম ভৌমিক। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্য সরকার আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতেই বন্ধ হয়ে যায় রাম ভৌমিকের ভুটভুটি ভ্যান চালিয়ে রোজগারের পথ। লকডাউনের জেরে যাত্রী না মেলায় প্রায় দিনই খালি হাতে উপার্জনহীন হয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছিল তাঁকে। সংসারের অভাব অনটন ঘিরে ধরেছিল রাম ভৌমিককে। শুক্রবার রাতে খাওয়া দাওয়ার পর কিছু না বলেই চুপচাপ স্বামী রাম ভৌমিক নিজে ও পরিবারের সকলকে নিয়ে একসাথে আত্মঘাতী হওয়ার মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
শুক্রবার রাতে স্ত্রী শঙ্করী সহ তিন মেয়ে এবং নিজে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘরে ঘুমাতে যায়। সকলে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর গোটা ঘর সহ ঘুমন্ত স্ত্রী কন্যাদের শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে দেয়। নিজের শরীরেও কেরোসিন তেল ঢেলে ঘরে আগুন আগুন লাগিয়ে দেন স্বামী রাম ভৌমিক। বদ্ধ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দুই শিশুকন্যা, স্ত্রী শঙ্করী এবং স্বামী রাম ভৌমিকের সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা টের পেয়ে ছুটে আসতেই ততক্ষনে সব শেষ হয়ে যায়। কার কোনটা মৃতদেহ তা চেনার মতো উপায়ও নেই। কিন্তু এরইমধ্যে রাম ও শঙ্করীর বড় মেয়ে ১২ বছরের কিশোরী রানী ভৌমিককে অর্দ্ধদগ্ধ গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন, কোভিডে একদিনে ৪ চিকিৎসকের মৃত্যু, উদ্বেগ বাড়ল স্বাস্থ্য দফতরের
আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরও মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন খুব ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত রাম ভৌমিক যে পুরো পরিবার নিয়ে এভাবে আত্মঘাতী হবে তা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা। তবে সম্প্রতি লকডাউনের কারনে তাঁর ভুটভুটি ভ্যানে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে পাঁচজনের সংসার প্রতিপালন করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠার কারনেও সপরিবারে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হেমতাবাদ থানার পুলিশ।