"লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিয়ে ফোনে রিচার্জ করি বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলি, তাই দিদিকেই ভোট দুবো"
"লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিয়ে ফোনে রিচার্জ করি বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলি, তাই দিদিকেই ভোট দুবো" হাসি মুখে জোর গলায় বললেন বছর ৪০-এর পিঙ্কি ( নাম পরিবর্তিত) । লোকের বাড়িতে কাজ করেই দিন চলে তাঁর। অবশ্য এ ছাড়াও ঢোকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। ওটা বাড়তি হাত খরচ। বাড়িতে রয়েছে স্বামী-সন্তান এমনকী নাতি, নাতনিও। ছেলে, বউ, নাতি, নাতনি নিয়ে একেবারে ভরা সংসার পিঙ্কির (নাম পরিবর্তিত)। তবুও প্রেম করছ? " সারাদিন খাটি, সংসারের কাজ করি, আমার নিজেরও তো একটা লাইফ আছে" মুচকি হেসে উত্তর দেয় মধ্যবয়সী পিঙ্কি।
বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার গ্রামে গ্রামে ছবিটা অনেকটা এইরকমই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা হল মেয়েদের বাড়তি হাত খরচ। কেউ ফোনে টাকা ভরায় বা কেউ সেই টাকা জমিয়ে বেড়াতে যায়। পাছে টাকা বন্ধ হয়ে যায়! তাই দিদিকেই ভোট দিতে চান তাঁরা।
রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্পের কোনও জায়গা নেই এদের অনেকের জীবনে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, রেশন কাণ্ড, কয়লা এসব নিয়ে ভাবনারও সময় নেই। তাই ছেলে স্কুলে গিয়ে কী শিখবে, বড় হয়ে কী করবে এসবের থেকে মাসের ৫০০ টাকাই বড় দামি এদের কাছে।
সাধারণ নাগরিক পরিষেবার অনেক কিছু পান না এঁরা। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের লড়াইয়ের মাঝে এই টাকাকেই সম্বল করে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন এই মহিলারা। অনেক কিছু নেই-এর মাঝে কিছু একটা অন্তত রয়েছে এঁদের জন্য। ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে চিন্তিত নন এঁরা। স্মার্টফোনের ফাঁদ পাতা ভুবন জুড়ে। আর এঁরা সেই ভুবনেই খুশি।
প্রধানত কৃষি নির্ভর জেলা হল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া। চাষবাস করেই দিন চলে গ্রামের মানুষের। অনেকেরই পুকুর রয়েছে। মাঠে কাজ করার পরে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষই মদ খেয়ে ফেরেন। পরে তাস নিয়ে বসেন বন্ধুদের সঙ্গে। এদিকে চারটে বাড়ি কাজ, সংসারের কাজ, ছেলে মেয়েদের দেখাশোনা করার পর, বড়ই একাকিত্ব বোধ করেন গ্রামের মেয়েরা। তাই ফোনটাই সম্বল তাঁদের।
কেউ রিল দেখেন, সিরিয়াল দেখেন, বা কেউ নিজের প্রেমিকের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এটাই তাদের সারাদিনের কাজের পরে ক্লান্তি মোছার একমাত্র উপায়। অবসর কাটানোর শ্রেষ্ঠ সম্বল। তাই ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে আঙুলে কালো কালি মেখে, হাসি মুখে " দিদিকেই ভোট দুবো" বলে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের পিঙ্কিরা...।