‘রাজ্যের মানুষ ভিখারি হয়ে গেছে’, দুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি

‘আজ আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, খাদ্যসাথী এবং রেশন প্রকল্পকে ভিক্ষার সাথে তুলনা করা হল। বিজেপি নেতারা এভাবেই বাংলার মহিলা এবং মানুষদের অপমান করে থাকেন’, মন্তব্য রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী শশী পাঁজার। 

Web Desk - ANB | Published : Dec 24, 2022 12:53 PM IST

বিজেপি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকেন তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে। এবার দুর্গাপুরের একটি প্রকাশ্য জনসভায় আরও একবার মেদিনীপুর লোকসভার বিজেপি সাংসদের বক্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। শনিবার দুর্গাপুরের মায়াবাজারে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বাচ্চা কোলে নিয়ে মায়েরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মাত্র ৫০০ টাকা পাওয়ার জন্য, এতও ভিখারি হয়ে গেছে পশ্চিমবাংলার মানুষ’।

একজন জনপ্রতিনিধির এমন মন্তব্য শুনে স্বভাবতই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “মাসে ৫০০ টাকা পাবে বলে বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে, রান্না বন্ধ করে দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে। এত ভিখারি হয়ে গেছি আজকে আমরা পশ্চিমবাংলার মানুষ। কারণ, কিছু তো পায় না। যা পায় তাই ভাবে ভালো। ৫০০ টাকা হলেও ঠিক আছে। এখানে সবাইকে ভিখারি তৈরি করা হচ্ছে।” ইতিমধ্যেই মানুষের মনে এই মন্তব্যের জেরে জোরালো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

মহিলাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেছে যার অধীনে মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক মহিলাই সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছেন, “৫০০ টাকা হলেও তা আমাদের একান্ত। সরকার আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আমাদের নামেই পাঠায়। কারও কাছে চেয়ে এই টাকা পাই না। আমাদের নির্বাচিত সরকার আমাদের এই টাকা দেয়।”

এর আগেও বহু বিজেপি নেতা ৫০০ টাকা দেওয়া নিয়ে বিভিন্নভাবে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু, উপভোক্তাদের মত হল, সাংসদ-বিধায়কদের কাছে এই ৫০০ টাকা মামুলি হতে পারে, কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কাছে এই টাকাটাই অনেক। দিলীপ ঘোষের আজকের মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওনার অর্থনৈতিক বোধটাই একেবারে নেই। আমি দিলীপদার কোয়ালিফিকেশনটা ঠিক জানি না। তবে এসব রোটেশন অব মানির বিষয়টা অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বুঝতে পারবেন। রোটেশন অব মানি যত হবে, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এর ফলে যাঁরা একটু পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁরা এগিয়ে আসবেন।”

পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আজ আবার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের অপমান করলেন। আজ আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, খাদ্যসাথী এবং রেশন প্রকল্পকে ভিক্ষার সাথে তুলনা করা হল। বিজেপি নেতারা এভাবেই বাংলার মহিলা এবং মানুষদের অপমান করে থাকেন।” অপরদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রের কর্তব্য পালন করে বাংলার মানুষের জীবন ও অধিকার সুরক্ষিত করেছেন। আজ ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মডেল’-কে অনুসরণ করছে। দিলীপবাবু জানেন? করোনার সময়ে সারা ভারতে যখন মানুষের মাথা পিছু আয় কমে গেছিল, বাংলায় তখন আয় বেড়ে গিয়েছিল। তার কারণ হল, বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের পাশাপাশি এই ধরনের সামাজিক স্কিমগুলি। বাংলার মহিলারাও এর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু, দিলীপ ঘোষের ন্যুনতম সচেতনতা বোধ নেই বলেই তিনি এই ধরনের মন্তব্য করে বাংলার মানুষকে অপমান করলেন।


আরও পড়ুন-

বড়দিনের আগেই পার্ক স্ট্রিটে মোতায়েন হচ্ছেন প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ কর্মী, কলকাতা পুলিশের চূড়ান্ত তৎপরতা
 ‘বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে’, কলকাতায় বসেই মানুষকে বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা লুঠছে জামতাড়া ‘গ্যাং’
 বড়দিনে লোকাল ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের আশঙ্কা, একাধিক রুটের ট্রেন বাতিল

Share this article
click me!