রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, সরকারের অযোগ্যতার কারণে রাজ্যে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে পরিসংখ্যান আড়াল করতে ব্যস্ত রাজ্য প্রশাসন।
রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজ্যে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানোর আবেদন জানান শুভেন্দু। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যের কাছে একটি চার পৃষ্ঠার চিঠিতে, তিনি দাবি করেছেন যে রাজ্য সরকার ডেঙ্গুতে মৃত্যু এবং মামলার আসল পরিসংখ্যান গোপন করছে।
রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, সরকারের অযোগ্যতার কারণে রাজ্যে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে পরিসংখ্যান আড়াল করতে ব্যস্ত রাজ্য প্রশাসন। আমি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছি যাতে রাজ্য সরকারকে গাইড করতে এবং জনগণকে স্বস্তি দিতে ডাক্তার এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেছেন যে বাংলা ক্রমশই আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তৃণমূল সরকার কোষাগারে টাকা কমের দোহাই দিয়ে ড্রেনেজ সুবিধাগুলি পরিষ্কার করার এবং স্যানিটেশন সুবিধাগুলি আপগ্রেড করার কাজ বন্ধ করেছে। ফলে রাজ্য জুড়ে আরও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। চিঠিতে তিনি আরও বলেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরে রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া ডেঙ্গু সংক্রান্ত ডেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা দরকার। কর্মদক্ষতার অভাবে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এটা পরীক্ষা করা উচিত। এজন্য তদন্ত শুরু করা দরকার।
উল্লেখ্য, শুধু কলকাতা নয় মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ বাড়ছে জেলাগুলিতেও। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে,৩৬তম সপ্তাহে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন ৮৪৪ জন এবং ২০১৮ সালে ১৩০৪ জন। ২০২০ সালে অতিমারির সময় বেশ খানিকটা কমেছিল মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ। ২০২০ সালে ৮৬ জন ও ২০২১ সালে ১৪১ জন আক্রান্ত হন। শেষ দুই বছরের মোট আক্রান্তের তুলনায় আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে চলতি বছরের ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর।
একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেছেন যে গত সপ্তাহে রাজ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক ডেঙ্গু পজেটিভ রেজাল্ট পেয়েছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস শুভেন্দু অধিকারির এই চিঠির তুমুল বিরোধিতা করে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তৃণমূলের দাবি রাজ্য সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
শুভেন্দুর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জানান রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চিঠিটি লিখেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাদের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া উচিত রাজ্যের জন্য তহবিল ছেড়ে দেওয়ার জন্য যা কেন্দ্র আটকে রেখেছে।
একই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারকে গ্রাম বাংলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মিথ্যা দাবি করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ভুয়ো দাবি করে জনপ্রিয়তা কুড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই বিষয়ে, তিনি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংকে একটি চিঠি লিখেছেন এবং সিবিআই বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের জন্য অনুরোধ করেছেন।
আরও পড়ুন
১১ দিনের লড়াই শেষ, ডেঙ্গির কাছে হার মানলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ হজরা
‘পুলিশি চালানের মাধ্যমে কোষাগারে রাজস্ব তুলছে রাজ্য সরকার’, টুইটারে সোচ্চার শুভেন্দু অধিকারী
ব্যাগ থেকে টাকা ‘চুরি’-র দোষারোপ, খাস কলকাতায় বীরভূমের যুবককে মারতে মারতে মেরেই ফেলল ৬ আততায়ী