সংক্ষিপ্ত
রবিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার মর্মান্তিক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে।
উত্তর প্রদেশে ‘পেয়ারা চুরি’-র পর এবার পশ্চিমবঙ্গে ‘টাকা চুরি’-র দোষারোপ। একইভাবে দুই ঘটনাতেই ‘চুরি’ করার দোষ চাপিয়ে অনেকজন মিলে বেধড়ক মারতে মারতে প্রাণ কেড়ে নিল আততায়ীরা। রবিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে।
আজ সকালে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকায়। ৬ জন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে একজন যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে নির্মমভাবে মারধর করার পর ওই যুবক সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এম.আর. বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন ছ’জন। চিকিৎসকরা দেখামাত্রই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেন। বিপদ টের পেতেই হাসপাতাল চত্বর থেকে হাওয়া হয়ে যায় পাঁচ জন। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে এক জনকে পাকড়াও করে ফেলে পুলিশ। পরে তার সূত্র ধরে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। টাকাপয়সা নিয়ে নিহত যুবকের সঙ্গে এই ৬ জনের বিবাদ চলছিল এবং তার জেরেই খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত যুবকের নাম অমিতরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ি বীরভূম জেলায়। চাকরি সূত্রে কলকাতায় থাকতেন তিনি। শহরের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। এই সংস্থার মালিকের নাম সুমন মণ্ডল। অমিত ব্যাপকভাবে জখম হয়ে গেলে তাঁকে গাড়িতে করে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যায় সুমন মণ্ডল ও আরও পাঁচ জন ব্যক্তি। হাসপাতালে পৌঁছে তারা বলেছিল, আহত যুবককে তারা চেনেই না। এই যুবক জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিলেন দেখে তারা তুলে নিয়ে এসেছে।
গুরুতর আহত অমিতের শারীরিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দিতেই সমস্যার আঁচ পেয়ে পিঠটান দেয় সুমনসহ পাঁচ জন। কিন্তু, পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় জালে পড়ে যায় সোমনাথ চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তি। তাঁকে জেরা করে সুমন এবং দেবাশিস অধিকারী নামে আরও ২ জনকে আটক করতে পেরেছে পুলিশ। তবে, বাকি তিন জন এখনও অধরা রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, দেবাশিস অধিকারী নামের এই ব্যক্তির ব্যাগ থেকে ৪০০ টাকা খোয়া যায়। টাকা হারিয়ে যেতেই সে অমিতকে ‘চোর’ বলে দোষারোপ করা শুরু করে। সেখান থেকেই বচসা শুরু হয় এবং বিবাদ বাড়তে বাড়তে ক্রমশ চরমে ওঠে। সন্দেহের বশে অমিতকে ৬ জন মিলে মারধর শুরু করে দেয়। পুলিশের বক্তব্য, মৃতের থুতনির নীচে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, ভারী কোনও বস্তু দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়েছে বলেও বোঝা যাচ্ছে। মারধরের পর অমিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সুমনের গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হয় ৬ অভিযুক্ত। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দিলেই পালিয়ে যান পাঁচ জন। সেই স্থলে বসেছিল শুধু সোমনাথ। বিষয়টি সে বুঝে ওঠার আগেই সঙ্গীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। সেই সময়েই সোমনাথকে ধরে ফেলেন হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। খবর দেওয়া হয় রিজেন্ট পার্ক থানায়। পুলিশ এসে আটক করে জেরা শুরু করে সোমনাথকে। এর পর আরও দু’জনকে আটক করা হয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের আসল কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পালিয়ে যাওয়া বাকি ৩ জনের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চলছে।
আরও পড়ুন-
গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পেয়ারা ‘চুরি’-র অপরাধ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবেশীদের প্রচণ্ড মারে প্রাণ খোয়াতে হল দলিত তরুণকে
চলন্ত ট্রেনে উঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ীকে একের পর এক কোপ, শিয়ালদহ লাইনে আতঙ্কে যাত্রীরা
৭ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ৪ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি, মহারাষ্ট্রে অবাধে এগোচ্ছে উদ্ধব ঠাকরের দল