জ্ঞান ফিরলেও বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না। চোখের সামনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষের ভয়াবহতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মালগাড়ির সহকারী চালক মনু কুমার। কিন্তু এবার মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী কিরণকুমারী।
জ্ঞান ফিরলেও বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না। চোখের সামনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষের ভয়াবহতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মালগাড়ির সহকারী চালক মনু কুমার। কিন্তু এবার মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী কিরণকুমারী।
গত সোমবার সকালে, রাঙাপানি স্টেশন পেরোনোর ঠিক পরেই ফাঁসিদেওয়ায় দুর্ঘটনার (Kanchanjunga Express Accident) কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে আসার ফলেই এই দুর্ঘটনা। একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। কার্যত, মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধাক্কায় কাঞ্চনজঙ্ঘার বগি উঠে যায় ওপরে। তার নিচ দিয়ে সজোরে ঢুকে যায় মালগাড়ির ইঞ্জিন।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মালগাড়ির চালক অনিল কুমারের। কিন্তু আহত অবস্থায় চিকিৎসা শুরু হয় মালগাড়ির সহ চালক মনু কুমারের। আর সেই দুর্ঘটনার আতঙ্ক যেন এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে ভীষণভাবেই বিপর্যস্ত। মাঝে মাঝে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছেন।
এদিকে তাঁর স্ত্রী কিরণকুমারী এবার মুখ খুলেছেন। তাঁর কথায়, “ভয়ঙ্কর আতঙ্কিত হয়ে আছে ও। ওষুধ খাইয়ে কোনওমতে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। শরীরের কোথাও ব্যথা হলে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে। আর যন্ত্রণায় ডুকরে কেঁদে উঠছে। ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠছে বারবার।”
বুধবার, রেলের (Indian Railways) ঊর্ধ্বতন অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধে কার্যত বিস্ফোরক এবং চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী। রেলকর্মীদের সঙ্গে সেই সমস্ত অফিসাররা রীতিমতো অমানবিক ব্যবহার করেন। বলা যেতে পারে, মানসিক নির্যাতন (Torture) চলে।
তিনি জানাচ্ছেন, “দীর্ঘদিন রেলে নিয়োগ না হওয়ায় চালক এবং সহকারী চালকের সংখ্যা খুব কম। ট্রেনের তুলনায় অনেক কম। তাই চালক এবং সহকারী চালকদের ওপর ভয়ঙ্কর মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন রেলের অফিসারদের একটা বড় অংশ। দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে, বিশ্রাম না নিয়ে টানা ৭০-৭২ ঘণ্টা চালকদের ডিউটি করতে বাধ্য করছেন রেলের ওই অফিসাররা।”
প্রসঙ্গত, কাজের সূত্রে শিলিগুড়িতে (Siliguri) বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন মনু কুমার এবং তাঁর স্ত্রী। সূর্য সেন কলোনির বাড়িতে এদিন পৌঁছে যান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব (Goutam Deb)। মনু কুমারের স্ত্রী কিরণকুমারীর সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন তিনি। দেখা করেন জখম সহকারী চালকের বাবা রঘুনন্দন চৌধুরি এবং মা দ্রৌপদী কুমারীর সঙ্গেও।
মনু কুমারের স্ত্রী দাবি করেছেন, “ট্রেনের চালক এবং সহকারী চালকদের তো কোনও ছুটিই নেই। শরীর খারাপ থাকলেও ডিউটিতে যেতে হয়। টানা দুদিন ডিউটি করে রাতে বাড়ি এসে ঘুমালেও মাঝরাতে ফোন আসে। একশ্রেণির অফিসাররা কুৎসিত শব্দ প্রয়োগ করেন চালকদের সঙ্গে। বলেন ‘কেয়া, আভি রোমান্স কর রাহা হ্যায়? তুরন্ত ডিউটি মে চলা আও’। চালকদের আসলে মানুষই মনে করেন না অফিসাররা।
এদিকে নার্সিংহোমের চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এইরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার ঘটনা সত্যিই বিরল। তাই দুর্ঘটনার ঘোর কাটেনি সহকারী চালকের। তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত। স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।”
সবমিলিয়ে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjunga Express) দুর্ঘটনা নিয়ে বারবার রেলের পরিকাঠামোর দিকে আঙুল উঠছে। আর এবার কার্যত রেলের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন খোদ সেই মালগাড়ির সহ চালকের স্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ
জ্ঞান ফিরল মালগাড়ির সহ-চালকের, দুর্ঘটনা রহস্যের জট খুলতে তাঁর বয়ানই ভরসা?
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।