
রাস্তার ধারে সরকারি খাস সরকারি জমিতে এক জরাজীর্ণ বাড়ি। ইটের দেওয়ালের উপর টালির ছাউনিতে দেখা মেলে অসংখ্য ফাটল। এই বাড়ির বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে এক যুবতী। দেখে অবশ্য বয়স বোঝার উপায় নেই। অবশ্য আধার কার্ডের তথ্য বলছে, যুবতীর বয়স ৩৭ বছর। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে গ্রামের সবাই তাঁকে এভাবেই দেখে আসছে। পরিবার জানিয়েছে, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। আরও জানা যায়, ওই বাড়ির আরও দুই মেয়েও মানসিক ভারসাম্যহীন, তারাও বাড়ি ছেড়ে গিয়েছেন কোথায় কেউ জানে না। আদৌ তার বাড়ি ফিরে আসবেন কিনা সেটাও কেউ বলতে পারেন না।
মালদার ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শৈলপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ জাক্কার৷ বয়স এখন তার ৭৫ বছর। একসময় দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। বছর কয়েক ধরে শরীর আর সঙ্গ না দেওয়ায় শ্রমিকের কাজ ছেড়েছেন। স্ত্রী মালেকা বিবি কয়েকটি ছাগল প্রতিপালন করেন ঠিকই, তিনিও ৬০ বছরের বৃদ্ধা৷ বৃদ্ধ দম্পতির চার মেয়ে। তিনজন বিশেষভাবে সক্ষম হলেও বড় মেয়ে খানিকটা সুস্থ। অনেক চেয়েচিন্তে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছেন। একসময় তিন মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছিলেন এই দম্পতি কিন্তু খরচ সামলাতে না পেরে বেশিদিন টানতে পারেননি৷
বছর পনেরো আগে মেয়েদের বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা লাগেনি বটে, কিন্তু সেখানে যাতায়াত আর খাওয়ার জন্য খরচের অনেকটাই ধাক্কা ছিল। দিনদশেক পরেই মেয়েদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন বাবা। এখন আর চিকিৎসার সামর্থ নেই। দু’বেলা পাঁচজনের পেটই ভরাতে পারছেন না বৃদ্ধ। তার উপর মেয়েদের চিকিৎসা করানো এখন তাঁর কাছে বোঝার মতো৷ বৃহস্পতিবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় খুঁটিতে বাঁধা গোলবানু৷ বাড়িতে রয়েছেন জাক্কার সাহেবও। কিন্তু স্ত্রী কিংবা বাকি দুই মেয়ে নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন, মালেকা বিবি ছাগল চড়াতে গিয়েছেন। মেজ মেয়ে জুলি আর ছোট টুম্পা কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না ৷ দু’দিন ধরে তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।