কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমেই এবার পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর।
কলেজে ভর্তির সময় ছাত্র ইউনিয়নের ‘দাদাগিরি’-তে হেনস্থার শিকার হয় বহু ছাত্রছাত্র। এই জুলুমবাজি কমানোর জন্য কয়েক বছর আগে থেকেই রাজ্যের সরকারি ও সরকার-পোষিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শুরু হয়েছিল অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া। তারপরও ঘুরপথে ভর্তি নেওয়ার জন্য ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়াটি একই ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন আলোচনা চললেও কোনওভাবেই এই সমস্যার সুরাহা হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল চালু করার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বধীন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভা।
এবার থেকে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। অর্থাৎ প্রতিটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা করে অনলাইন বা অফলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া হবে না। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পৃথকভাবে টাকা দিয়ে ফর্ম ফিল-আপ করতে হবে না পড়ুয়াদের। সরকারি বা সরকার-পোষিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সম্পূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীয় ভাবে একটি পোর্টালের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর। এই নতুন নিয়ম আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২৩-২৪) থেকেই কার্যকর হতে চলেছে। চলতি বছর থেকেই যে পড়ুয়ারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করছেন, তাঁরাই প্রথমবার কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।
সোমবার রাতের দিকে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, রাজ্যের সমস্ত সরকারি বা সরকার-পোষিত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অভিন্নতা এবং সামঞ্জস্য বজায় রাখতে নয়া শিক্ষাবর্ষ থেকে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল চালু করা হচ্ছে। তার ফলে একটি প্ল্যাটফর্মেই পড়ুয়ারা নিজের পছন্দের নিজের পছন্দের বিষয় বা অন্য বিষয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাতে যেমন পড়ুয়াদের একাধিকবার ভর্তি হতে হবে না, তেমনই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আসন ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
শিক্ষক মহলের মতে, এই কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে পড়ুয়ারা লাভবান হবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা নিজেদের পছন্দের কলেজে নিজের পছন্দ বিষয় নেওয়ার জন্য ফর্ম ফিল-আপ করতেন। সঙ্গে আরও একাধিক কলেজে একাধিক বিষয়ে ফর্ম ফিল-আপ করে রাখতেন। অনেক সময় ওই পছন্দের কলেজে তালিকা অনেক পরে বেরোত। ততদিনে অন্যান্য কলেজে অ্যাডমিশন লিস্ট বেরিয়ে যেত। নিজের পছন্দের কলেজে আদৌও সুযোগ মিলবে কিনা, সেই দোটানায় পড়ে পড়ুয়ারা কোনও একটি কলেজে ভর্তি হয়ে যেতেন। তারপর নিজের পছন্দের কলেজের অ্যাডমিশন লিস্টে নাম উঠলে সেই কলেজে ভর্তি হতেন। ফলে, প্রথম যে কলেজে ভর্তি হতেন, সেখানে ভর্তির জন্য যে টাকা দিয়েছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ জলে যেত। আবার পডুয়াদের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্ম ফিল-আপের জন্যেও বেশ কিছুটা টাকা খরচ করতে হত। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ফলে ওই বাড়তি টাকা খসবে না।
এই পুরনো প্রক্রিয়ায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলি সিট ফাঁকা পড়ে থাকত। কারণ যে পড়ুয়ারা একবার কোনও কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অন্য কলেজে যেতেন, তাঁদের সেই ছেড়ে যাওয়া আসন অনেক সময় ফাঁকাই থেকে যেত। কারণ, সকলের তো দু'টি কলেজে ভর্তি হওয়ার মতো আর্থিক সংস্থান ছিল না। এখন থেকে এই কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে ফাঁকা আসনের সংখ্যা কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। এই কেন্দ্রীয় পোর্টালের রক্ষণাবেক্ষণ করবে রাজ্য সরকার। এতে ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি কমার পাশাপাশি ভর্তি প্রক্রিয়াও অনেক স্বচ্ছ হবে বলে আশা রয়েছে।
আরও পড়ুন-
Rain Forecast: ঝেঁপে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট, ৪ ডিগ্রি কমে গেল কলকাতার তাপমাত্রা
‘তৃণমূলে নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে বিলাসবহুল তাঁবু, হেলিকপ্টারে চড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগমন ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা
রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল কালিয়াগঞ্জের নির্যাতিতার দেহ, বরখাস্ত করা হল ৪ পুলিশ অফিসারকে