৫ রাজ্যের নির্বাচনে ধরাশায়ী কংগ্রেসতারপরই অভ্যন্তরীন নির্বাচনের ডাক সনিয়ার২৩ জুন হবে সভাপতি বাছাইয়ের ভোটজয় হল দলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীরই 

সদ্য সমাপ্ত ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের হতাশাজনক ফল হয়েছে। গত মাসেই বিধানসভা নির্বাচনের দলের পারফরম্যান্সকে সনিয়া গান্ধী 'অপ্রত্যাশিত' এবং 'অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক' বলে বর্ণনা করেছিলেন। আর তার পর সোমবার নয়াদিল্লিতে হল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেখানে রীতিমতো কড়া ভূমিকায় দেখা গেল দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতিকে। এই চুড়ান্ত খারাপ পারফরম্যান্সের পর সনিয়ার মুখেও শোনা গেল, অবিন্যস্ত ঘরকে 'গুছিয়ে তোলা'র কথা। জয় হল দলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীরই। পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি আর নিযুক্ত হবেন না, নির্বাচিত হবেন। দলের অভ্যন্তরে হবে নির্বাচন।

দলীয় সূত্র মতে, এদিন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৩ জুন অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে দলের পরবর্তী জাতীয় সভাপতি নির্বাচন করা হবে। ২০১৭ সালে সভাপতি পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল রাহুল গান্ধীকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের গোহারান হারের পর তিনি সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে প্রায় দুই বছর ধরে দলের সভাপতি পদটি কার্যত ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসাবে কাজ চালাচ্ছেন অসুস্থ সনিয়া গান্ধী। অন্যদিকে বর্ষিয়ান নেতাদের একাংশ ক্রমাগত রাহুল গান্ধীকে ফের সভাপতি হওয়ার জন্য অনুরোধ করে গিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁদের সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।

Scroll to load tweet…

এদিন সনিয়া বলেন, এই গুরুতর পরাজয়ের থেকে কংগ্রেসকে শিক্ষা নিতে হবে। দলের ফল এতটাই খারাপ হয়েছে যে 'অত্যন্ত হতাশাজনক' বললেও কম বলা হবে। তিনি জানান, কেন মানুষ কংগ্রেসকে এইভাবে প্রত্যাখ্যান করল, তা সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করার জন্য, দলের মধ্যে একটি ছোট কমিটি গঠন করা হবে। তাদের দ্রুত কারণ অনুসন্ধান করে জানাতে হবে দলকে। এরপরই সনিয়া বলেন, 'এই ফলাফলগুলি আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমাদের ঘর গোছানো দরকার," তিনি আরও বলেছেন, "এই ফলাফলগুলি আমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে যে আমাদের ঘরটি সুসংগত করা উচিত।"

বস্তু এই অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের দাবি গত প্রায় এক বছর ধরে জানিয়ে আসছেন, গোলাম নবী আজাদ, আনন্দ শর্মা, শশী থারুর, কপিল সিবাল-এর মতো দলের বিশিষ্ট নেতাদের একাংশ। গত বছর অগাস্ট মাসে এইরকম বিদ্রোহী ২৩ জন কংগ্রেস নেতা দলের অধঃপতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সনিয়া গান্ধীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন 'পূর্ণ-সময়ের' এবং 'কার্যকরি নেতৃত্ব', যিনি রাজনীতির ময়দানে 'দৃশ্যমান' এবং 'সক্রিয়' হবেন। চেয়েছিলেন নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ, প্রদেশ কমিটিগুলির ক্ষমতায়ন। তাঁরা আরও বলেছিলেন, দেশ ও দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার স্বার্থেই কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সেই চিঠি নিয়ে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

তবে, দেশ ও দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কংগ্রেসকে আপাতত বিকল্প হিসাবে ভাবছে না দেশের মানুষ। অন্তত সদ্য সমাপ্ত ৫ বিধানসভা নির্বাচনের ফল তাই বলছে। বাংলায় বামপন্থী ও আইএসএফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে শূন্য হয়ে গিয়েছে তারা। অসমে সরকার গড়ার লক্ষে থেকে আসন বেড়েছে গতবারের থেকে মাত্র ৩টি। কেরলে ক্ষমতা বদলের প্রবণতাও ধরে রাখতে পারেনি তারা। গতবারের থেকে বরং ১টি আসন কমেছে। পুদুচেরিতে ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। তামিলনাড়ুতে, ডিএমকে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে জয়ী হয়েছে। পারফরম্যান্সও খারাপ নয়, ২৫টি আসনে লড়ে ১৮টি জিতেছে। সামনে আসছে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুরের নির্বাচন। 'ঘর গুছিয়ে' লাভ হবে কংগ্রেসের?

YouTube video player